ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

উপকূল থেকে উপকূল

বাঁকখালীতে ৬৭ দখলদার, বরাদ্দের অপেক্ষায় প্রশাসন!

রফিকুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২০৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০১৫
বাঁকখালীতে ৬৭ দখলদার, বরাদ্দের অপেক্ষায় প্রশাসন! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বাঁকখালীর তীর, (কক্সবাজার) ঘুরে এসে : বাঁকখালী তীরের অবৈধ দখলদারদের তালিকা প্রশাসনের হাতে। হাইকোর্টের নির্দেশে খতিয়ান, দাগ ও জমির পরিমাণ উল্লেখ করে তৈরি হয়েছে ৬৭ দখলদারের তালিকা।

কিন্তু উচ্ছেদের জন্য প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ নেই প্রশাসনে। ফলে অভিযান চালাতে এ ধীর গতি। এদিকে পরিবেশবাদী সংগঠন উচ্ছেদ অভিযান জোরদারের দাবি তুলেছে। বাঁকখালীর তীরে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হচ্ছে।  

 

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক রুহুল আমীন বাংলানিউজকে বলেন, ‘বাঁকখালীর তীরে অনেক বড় বড় স্থাপনা গড়ে উঠেছে। এগুলো এত সহজেই উচ্ছেদ করা সম্ভব নয়। এজন্য অর্থের প্রয়োজন। আমরা বরাদ্দ চেয়ে পাঠিয়েছি। তবে অবৈধ দখলদারদের তালিকা তৈরিসহ উচ্ছেদের অন্যান্য প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। নতুন করে যাতে কেউ দখল করা না পারে, সে বিষয়ে প্রশাসন নজর রাখছে। ’    

 

সূত্র বলছে, বিগত কয়েক বছর ধরে প্রভাবশালী রাঘববোয়ালদের নজর বাঁকখালী নদীর তীর জুড়ে। ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের দাপটে সমানতালে দখল হচ্ছে নদী। যে যেভাবে পারছে দখল করছে এককালের খরস্রোতা বাঁকখালী। এর বিরুদ্ধে সোচ্চার নাগরিক সমাজ। দখলদার উচ্ছেদের দাবি গড়িয়েছে হাইকোর্ট পর্যন্ত। হাইকোর্ট থেকে প্রশাসন আদেশ পেয়েছে অবৈধ দখলদারদের তালিকা তৈরি ও তাদের উচ্ছেদের।  

 

প্রশাসনের তৈরি করা তালিকা এসেছে বাংলানিউজের কাছে। এতে দেখা যায়, সব দখলদারই কক্সবাজারের বিএস ১ নম্বর খতিয়ানের বিভিন্ন দাগের আওতাভূক্ত। দখলদারের তালিকায় রয়েছে খোদ কক্সবাজার পৌরসভার নামও। তালিকাভুক্ত স্থাপনার মধ্যে পাকা-সেমি পাকা দালান, এমনকি দোতলা দালানও রয়েছে।   

 

২২৬২ দাগে রয়েছে ১৩ দখলদারের নাম। এরা হলেন- অ্যাডভোকেট আবদুল খালেক, রশিদ আহাম্মদ (বাবা- অজ্ঞাত, কস্তুরাঘাট), নূরুল হুদা মিয়া (বাবা- মৃত অদুদ মিয়া, কস্তুরাঘাট), একরাম মিয়া (বাবা- অদুদ মিয়া, কস্তুরাঘাট), কক্সবাজার পৌরসভা, আবদুল খালেক চেয়ারম্যান (কস্তুরাঘাট), কবির বহদ্দার (বাবা- মৃত আবদুল হাকিম), জয়নাল আবেদিন (বাবা- মৃত গোলাম বারী, কস্তুরাঘাট),  আবদুর রহিম (বাবা -মৃত মো. শফি, কস্তুরাঘাট), আবদুল্লাহ খান (বাবা- অজিউল্লাহ, কস্তুরাঘাট), জহির আহাম্মাদ (বাবা- মৃত ইদু আলী, কস্তুরাঘাট), সৈয়দ আলম (বাবা-মৃত রশিদ আহাম্মাদ, কস্তুরাঘাট), মফিজুর রহমান ( বাবা-মৃত মাহমুদুর রহমান, কস্তুরাঘাট)।  

 

তালিকায় এক নম্বর খতিয়ানের ১০০০২ দাগে ১৫ অবৈধ দখলদারের তালিকা রয়েছে। এরা হচ্ছেন : নুর মোহাম্মদ (বাবা- মৃত আমির হোচন, মাঝিরঘাট), ছৈয়দ আলম (বাবা- মৃত আবদুস ছোবাহান, মাঝিরঘাট), আবুল হোচন (বাবা- কালা মিয়া, মাঝিরঘাট), হেলাল উদ্দিন (বাবা- মৃত সফি সওদাগর, মাঝিরঘাট), আবদুল্লাহ (বাবা- অজ্ঞাত, মাঝিরঘাট), ,ফরিদ আলম (বাবা- অজ্ঞাত, মাঝিরঘাট), সাইফুল ইসলাম বাচ্চু (বাবা- অজ্ঞাত, মাঝিরঘাট), নুরুল হক কোম্পানী (বাবা- মৃত আহাম্মদ উল্লাহ, মাঝিরঘাট), হেলাল উদ্দিন, (বাবা- সফি সওদাগর, মাঝিরঘাট), জাহাঙ্গীর কাসেম (বাবা- কালা মিয়া, মাঝিরঘাট), ডাবলো সাহেব (পরিচালক নজরুল ইসলাম, মাঝিরঘাট), ডোবাইওয়ালা বুরি (মাঝিরঘাট), মোহাম্মদ সফি (বাবা- মৃত আবদুর রশিদ, মাঝিরঘাট), মোস্তাফিজুর রহমান (বাবা- মৃত আছদ আলী, মাঝিরঘাট), সবুজ সওদাগর (বাবা- অজ্ঞাত, মাঝিরঘাট)।         

  

তালিকায় এক নম্বর খতিয়ানের ২২৬২ দাগে ৩৭ অবৈধ দখলদারের তালিকা রয়েছে। এরা হলেন : সোহেল রানা (বাবা- আবুল কাসেম, পেশকার পাড়া), আবুল কাসেম (বাবা- মৃত আমিন উল্লাহ, পেশকার পাড়া), নাছির উদ্দিন সোহেল (বাবা- মৃত কবির আহাম্মদ, পেশকার পাড়া), সাহাব উদ্দিন (বাবা- অজ্ঞাত, পেশকার পাড়া), জামাল উদ্দিন (বাবা- মৃত আবদুল মজিদ, পেশকার পাড়া), আবুল কালাম (বাবা- অজ্ঞাত, পেশকার পাড়া), মোহাম্মদ ওসমান (বাবা- অজ্ঞাত, পেশকার পাড়া), জালাল আহাম্মদ (বাবা- অজ্ঞাত, পেশকার পাড়া), জয়নাল আবেদীন (বাবা- মৃত গোলাম বারী, পেশকার পাড়া), আবদুল্যা খান (বাবা- অজ্ঞাত, পেশকার পাড়া), আবদুর রহিম (বাবা- মৃত মোহাম্মদ সফি, পেশকার পাড়া), জহির আহাম্মদ (বাবা- মৃত ইউছুফ আলী, পেশকার পাড়া), ছৈয়দ আলম (বাবা- মৃত আবদুর রশিদ, পেশকার পাড়া), মফিজুর রহমান (বাবা- মৃত আহম্মদুর রহমান, পেশকার পাড়া), সামসুন্নাহার (বাবা- মৃত আবদুর রশিদ, মাঝিরঘাট), বানু (স্বামী মৃত রশিদ আহাম্মদ, মাঝিরঘাট), নুর মোহাম্মদ (বাবা- মৃত আমির হোসেন, পেশকার পাড়া), ছৈয়দ মাঝি (বাবা- মৃত আব্দুস ছোবাহান, পেশকার পাড়া), হেলাল উদ্দিন (বাবা- সফি সওদাগর, মাঝিরঘাট), নূরুল হক কোং (বাবা- অজ্ঞাত, মাঝিরঘাট), ফরহাদ (বাবা- আবদুল্লাহ, মাঝিরঘাট), রুজিনা আনকিজ চৌং (স্বামী মৃত ফরিদুল আলম, মাঝিরঘাট), নান্নু (বাবা- মৃত নুরুল হক, মাঝিরঘাট), মো. মফিজ (বাবা- মৃত অজ্ঞাত, মাঝিরঘাট), আবু ছৈয়দ (বাবা- অজ্ঞাত, মাঝিরঘাট), তানভীর কাসেম (বাবা- আবুল কাসেম, মাঝিরঘাট), আবুল হোসেন (বাবা- মৃত আবদু ছমদ, পেশকারপাড়া), এ কে এম মনজুরুল হক (বাবা- মৃত মাষ্টার মাজহরুল হক, পেশকার পাড়া), বিবি মহরজান (স্বামী মৃত বাচ্চু মিয়া, পেশকার পাড়া), নুর মোহাম্মদ (বাবা- মৃত আজিজুর রহমান, পেশকার পাড়া), মোস্তফা কামাল (বাবা- মৃত আবদুস ছালাম, পেশকার পাড়া), নাজির আহাম্মদ (বাবা- মৃত গোলাম বারী, পেশকার পাড়া), আবদুল খালেক চেয়ারম্যান (বাবা- অজ্ঞাত, পেশকার পাড়া), আতিকুর রহমান (বাবা- অজ্ঞাত, পেশকার পাড়া), নাছির উদ্দিন গং (বাবা- মৃত কবির মহাম্মদ, পেশকার পাড়া), খোরশেদ আলম (বাবা- হাজী নুরুল ইসলাম, পেশকার পাড়া), আব্দুল হামিদ (বাবা- আব্দুল জলিল, পেশকার পাড়া), ফরিদ আলম (বাবা- মৃত এয়াকুব আলী, পেশকার পাড়া)।  

 

হাইকোর্টের নির্দেশের পর কক্সবাজার সদর ইউনিয়ন ভূমি অফিস থেকে এই তালিকা পাঠানো হয় সদর উপজেলা ভূমি অফিসে। ইউনিয়ন ভূমি অফিস থেকে উপজেলা ভূমি অফিসে পাঠানো পত্রে বলা হয়, বাঁকখালী নদীর সিএস রেকর্ড এবং বর্তমান প্রবাহকে ভিত্তি করে সীমানা নির্ধারণ করার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।  

 

এতে বলা হয়, আদেশ মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে গিয়ে দেখা যায়, সিএস রেকর্ডের মৌজা ম্যাপ ইউনিয়ন ও উপজেলা ভূমি অফিসে সংরক্ষিত নেই। সিএস ম্যাপ না পাওয়ায় নদীর বর্তমান প্রবাহ এবং পূর্ববর্তী রেকর্ডকে ভিত্তি ধরে ছমুদা ব্রিজ থেকে কস্তুরাঘাট পর্যন্ত চার কিলোমিটার এলাকায় বাঁকখালী নদীর সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে।  

 

এতে আরও বলা হয়, অবৈধ দখলদার ও অনুপ্রেবশকারীদের স্থাপনাগুলোর মধ্যে ২১টি ইতিপূর্বে উচ্ছেদ করা হয়েছে। বাকি স্থাপনাগুলো উচ্ছেদের প্রক্রিয়া চলছে। নদীর সীমানার মধ্যে গড়ে ওঠা স্থাপনা উচ্ছেদের ক্ষেত্রে দুর্গম যাতায়াত ব্যবস্থা বড় সমস্যা। এক্ষেত্রে সময় ও অর্থের প্রয়োজন হয়। উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অন্তত ২০ লাখ টাকা প্রয়োজন।  

 

সেইভ দ্য নেচার অব বাংলাদেশ-এর চেয়ারম্যান এ এন এম মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, জেলা প্রশাসকের অফিসে সিদ্ধান্ত হয় বাঁকখালী তীরের অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের। কিন্তু সে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয় না। পৌর কর্তৃপক্ষ দীর্ঘদিন ধরে নদীতীরে ময়লা-আবর্জনা ফেলে ভরাট করছে। উচ্ছেদে গড়িমসি কেন আমরা বুঝতে পারছি না।  

 

তিনি বলেন, কক্সবাজার শহর রক্ষা বাঁধ নেই। বাংলাবাজারের ছমুদা ব্রিজ থেকে বাঁকখালী নদীর মোহনা নাজিরের টেক পর্যন্ত শহর রক্ষা বাঁধের দাবি দীর্ঘদিনের। শহররক্ষা বাঁধ নির্মাণ, বাঁকখালী তীরের অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ এবং এ নদী ড্রেজিংয়ের মাধ্যমেই কেবল কক্সবাজারকে বাঁচানো সম্ভব।   

 

[ পশ্চিমে সাতক্ষীরা, পূর্বে টেকনাফ, উপকূলের এই ৭১০ কিলোমিটার তটরেখা বেষ্টিত অঞ্চলে সরেজমিন ঘুরে পিছিয়ে থাকা জনপদের খবরাখবর তুলে আনছে বাংলানিউজ। প্রকাশিত হচ্ছে ‘উপকূল থেকে উপকূল’ নামের বিশেষ বিভাগে। আপনি উপকূলের কোন খবর বাংলানিউজে দেখতে চাইলে মেইল করুন এই ঠিকানায়: [email protected] ]

 

বাংলাদেশ সময়: ০২০৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০১৫ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।