ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ২২ মে ২০২৫, ২৪ জিলকদ ১৪৪৬

উপকূল থেকে উপকূল

দুবলার চরের রাসমেলা থেকে জেসমিন পাপড়ি

অপসংস্কৃতি বিষিয়ে তুলেছে সুন্দরবনের নির্মলতা

জেসমিন পাপড়ি, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮:০৩, নভেম্বর ২৬, ২০১৫
অপসংস্কৃতি বিষিয়ে তুলেছে সুন্দরবনের নির্মলতা ছবি :কাশেম হারুন/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

দুবলার চর (সুন্দরবন) থেকে: সুন্দরবন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন। যার কথা বললেই ভেসে ওঠে প্রাকৃতিক নির্মলতার ছবি।

প্রকৃতির নিজহাতে সাজানো বনটির পাশের দুবলার চরে প্রতিবছর রাসমেলাকে কেন্দ্র করে হাজির হয় হাজার হাজার দর্শনার্থী।

কিন্তু সুন্দরবনের সেই নির্মলতাকে বিষিয়ে তুলেছে অপসংস্কৃতি। মেলায় নাচ-গানের নামে হরদম চলছে অশ্লীল নৃত্য। ফলে পরিবার নিয়ে মেলায় যোগ দেওয়া দর্শনার্থীরা পড়েছেন দারুণ বিপাকে।

বুধবার (২৫ নভেম্বর) সন্ধ্যায় জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে রাস মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হলেও এরপর থেকেই হিন্দি গানের সঙ্গে একটার পর একটা অশ্লীল নাচ চলতে থাকে। দীর্ঘ রাত পর্যন্ত চলা অনুষ্ঠানে যে দু’একটি বাংলা গানের সঙ্গে শিল্পীরা নাচলেন, সেসব গানের কথাও ভীষণ আপত্তিকর। আর শিল্পীদের নাচের ভঙ্গিও ছিল ভীষণ দৃষ্টিকটু। যা দেখে রুচিশীল দর্শকরা পালাতে বাধ্য হন।

undefined


অনুষ্ঠানের একপর্যায়ে বগুড়া থেকে আসা দু’জন লালন সঙ্গীত শিল্পীকে ডাকা হলেও দু’টি গানের বেশি তারা মঞ্চে গাইতে পারেননি। পরে অবশ্য দু’একজন শিল্পী এ ধরনের গান শোনান। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা দর্শনার্থী লঞ্চ বা ট্রলারগুলোতে চলছে উচ্চস্বরে গান বাজনা। যা বনের প্রাকৃতিক পরিবেশকে নষ্ট করছে।

কার্তিক মাসের শেষে বা অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম দিকে ভরা পূর্ণিমার সময় এ রাসমেলা অনুষ্ঠিত হয়। হিন্দু ধর্মাবলম্বী পূণ্যার্থীরা এ সময় পূণ্যস্নানের জন্য এ চরে আসেন। বৃহস্পতিবার এই পূর্ণিমা তিথি।

undefined


বুধবার পূজা শুরু হলেও বৃহস্পতিবার (২৬ নভেম্বর) ভোরে পূণ্যস্নানে অংশ নেন পূণ্যার্থীরা। এতে তাদের পাপ মোচন হয়ে মনের কামনা পূর্ণ হবে বলেই বিশ্বাস করে তারা। তবে দুবলার চরের এ অনুষ্ঠানটি আর শুধু হিন্দুদের নেই। নানা ধর্ম, বর্ণের মানুষের সমাগম ঘটেছে সাগরের এই মোহনায়। এ মৌসুমে সুন্দরবন আর সাগর অপেক্ষাকৃত শান্ত বলে সৌন্দর্যই উপভোগ করতে পরিবার ও স্বজন নিয়ে দুবলার চরে এসেছেন অনেকেই।

তাদের একজন আতিয়ার রহমান বুধবার সন্ধ্যায় মেলাস্থলে এসেছিলেন। কিন্তু অশ্লীল নৃত্য আর হিন্দি গানে মাতোয়ারা অনুষ্ঠান দেখে ১৩ বছরের কন্যা সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে পালাতে বাধ্য হন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, রাস মেলার ইতিহাস জানিনা। শুধু জানি এটা হিন্দু ধর্মের অনুষ্ঠান। আশা করেছিলাম অনুষ্ঠানে রাস পূজা সম্পর্কিত পালাগান থাকবে। অথবা বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির ছোঁয়া থাকবে। সেসব তো নেই-ই। যা চলছে তা দেখে পরিবার নিয়ে বিব্রত হয়ে বেরিয়ে এসেছি। আর দ্বীপটি যেহেতু ছোট, আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই, তাই ট্রলারে ফিরে যাচ্ছি।

undefined


প্রথমবার এ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ঢাকা থেকে আসা ইয়াছিন আলী বাংলানিউজকে বলেন, বহু বছর থেকে রাস মেলার কথা শুনে আসছি। এবার আসার সুযোগ মিলল। কিন্তু এখানকার অনুষ্ঠান দেখে হতাশ হয়েছি। আর সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হলো- ট্রলার ও লঞ্চ হরদম  উচ্চস্বরে মাইক বাজছে। বনের পরিবেশের কথা চিন্তা না করে তারা একাজ করে যাচ্ছে নির্দ্বিধায়। এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনাও নেই বন বিভাগের। সুন্দরবনের মতো নির্মল পরিবেশে এটা হতে দেওয়া ঠিক নয়। তাহলে দর্শনার্থী যেমন কমবে, তেমনি বনের পশু-পাখিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

undefined


অনুষ্ঠানের কাজে নিয়োজিত একজন স্বেচ্ছাসেবক বাংলানিউজকে বলেন, গত ২০/২৫ বছর ধরে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আসছে মেজর (অব.) জিয়াউদ্দিন আহমেদ। কোনো ধরনের সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়াই তিনি এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকেন। তার একার পক্ষে যতটুকু সম্ভব হয়, তার ডাকে যেসব শিল্পীরা আসেন তারাই জেলে ও দর্শনার্থীদের জন্য নাচগান করেন। সরকার একটু নজর দিলেই এ অনুষ্ঠানের কলেবর ও মান আরও বাড়তে পারে।

তিনদিন ধরে দুবলার চরের চারদিক ঘিরে অবস্থান নিয়েছে কয়েকশ’ ট্রলার, নৌকা ও লঞ্চ। মানুষের চলাচল আর মাইকের শব্দে বনের পশুপাখির চলাচল ব্যাহত হয়েছে বলে দাবি স্থানীয়দের।

undefined


বিল্লাল নামে এক জেলে বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিদিন সকালে-বিকেলে এখানকার চরগুলোতে দলে দলে হরিণ ঘাস খেতে তীরে আসে। কিন্তু মেলা উপলক্ষে মানুষের চলাচল বেড়ে যাওয়ায় কদিন ধরে তারা আর ঘাস খেতে আসছে না। বনের বানরের ঘোরাফেরা কিংবা পাখির চলাচলও স্বাভাবিক নেই।

বাংলাদেশ সময়:০৮০৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০১৫
জেপি/এমজেড

** ‘কাজের মেয়ে’ নয়, ওরা এখন স্কুলে যায়
** সুন্দরবনে আরও ২ র‌্যাব ক্যাম্প হবে
** ‘কাজের মেয়ে’ নয়, ওরা এখন স্কুলে যায়
** ওই যায় হেলিকপ্টার...
** ‘চাঁদের আলোয়’ রাসযাত্রা শুরু
** বন বিভাগের অনুমতি নিতেই রাত পার

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।