ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

উপকূল থেকে উপকূল

স্বস্তিতে যমুনা পাড়ের মানুষ

রফিকুল আলম, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৪৯ ঘণ্টা, মার্চ ৪, ২০১৬
স্বস্তিতে যমুনা পাড়ের মানুষ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ধুনট (বগুড়া): এক সময় যেখানে ছিল বসতভিটা, আবাদি জমি, সেখানে আজ অথৈ পানি কিংবা ধূধূ বালুচর। সেই কবে থেকে ভাঙন শুরু হয়েছে, তার দিনক্ষণ ঠিক নেই।

বছরের পর বছর ধরে ভেঙে চলেছে। বার বার ভাঙনের কবলে পড়ে সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে মানুষ। মুছে গেছে তাদের জীবনের সব রং।

এককালের জমির মালিক আজ দিনমজুর। ঠিকানা হারিয়ে কেউ কুলি-মজুর খাটতে শহরে গেছেন। আবার জন্মভুমির মায়া ত্যাগ করতে না পেরে ভাঙন কবলিত জনপদেই আশ্রিত হয়েছেন অনেকে।

এদের কেউ বাঁধের বাইরে ছোট্ট ঘরে বসবাস করছেন, কারও ঠাঁই হয়েছে বাঁধের উপর। আবার কেউ সামান্য পরিমাণ জমি কিনে বাঁধের ভেতরে বানিয়েছেন ঘর। পরিবার পরিজনসহ এভাবেই বসবাস করছেন সব হারানো মানুষ।

বগুড়ার ধুনট উপজেলার ভান্ডারবাড়ি ইউনিয়নে যমুনা পাড়ের হাজারো মানুষের জীবন জীবিকার ধরন এ ভাবেই বদলে যায় ভয়াবহ ভাঙনের কবলে পড়ে। এ জনপদের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবির মুখে অবশেষে যমুনা নদীর ভাঙন রোধে ডান তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের কাজ শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।

এ প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে যমুনা নদীর ভয়াবহ ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পাবেন স্থানীয়রা। আর বসতভিটা হারানোর শঙ্কা নিয়ে দিন কাটাতে হবে না তাদের। এ কারণে ভাঙন কবলিত জনপদের মানুষের মাঝে ফিরে এসেছে স্বস্তি। আশায় বুক বাঁধছেন এ সব মানুষ। ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন তারা।  

স্থানীয়রা জানান, উপজেলার ভান্ডারবাড়ি ইউনিয়নের পূর্ব পাশ দিয়ে বহমান যমুনা নদী। উত্তরে শহরাবাড়ি থেকে দক্ষিণে মাধবডাঙ্গা গ্রাম পর্যন্ত যমুনা পাড়ের দৈর্ঘ্য সাত কিলোমিটার। প্রায় ৪০ বছর ধরে যমুনা নদীর ভাঙন শুরু হয়েছে। নদীর কুল উপচে লোকালয়ে পনি ঢুকে বিস্তৃর্ণ এলাকা প্লাবিত হতো প্রতি বছর।

এ কারণে প্রায় ৩০ বছর আগে যমুনা নদীতে সাত কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ তৈরি করে পাউবো। এতে বন্যার হাত থেকে রক্ষা পেলেও ভাঙন অব্যাহত থাকে। ভাঙনের কবলে ৪০ বছরে ভান্ডারবাড়ি ইউনিয়নের ১৪টি গ্রাম বিলীন হয়ে গেছে।

এ অবস্থায় নদী ভাঙনরোধে ২০০২ সালে ২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে শহরাবাড়ি ও বানিয়াজান স্পার নির্মাণের ফলে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকার বাঁধসহ বসতভিটা ভাঙন থেকে রক্ষা পায়। তবে বানিয়াজান স্পারের ভাটির দিকে ভান্ডারবাড়ি থেকে মাধবডাঙ্গা পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকা অরক্ষিত থাকে।

গত ২০০৯ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত প্রায় শত কোটি টাকা ব্যয়ে ভান্ডারবাড়ি থেকে মাধবডাঙ্গা পর্যন্ত ভাঙনরোধে দুই কিলোমিটার তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের কাজ করা হয়। এরপরও বানিয়াজান থেকে বরইতলি পর্যন্ত ১২০০ মিটার অংশে ভাঙন অব্যাহত থাকে।

যমুনা নদীর ভাঙন ধেয়ে আসছে জনবসতি ও বাঁধের দিকে। অবশেষে জানুয়ারি মাসে ৪৩ কোটি টাকা ব্যয়ে বানিয়াজান থেকে বরইতলি পর্যন্ত ১২০০ মিটার অংশে তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের কাজ শুরু করে পাউবো।

সরেজমিন যমুনা পাড়ে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন ধাপে প্রকল্পের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। প্রায় দুই হাজার শ্রমিক কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। কেউ সিসি ব্লক তৈরি করছেন, কেউ জিও ব্যাগে ভরছেন বালু। অনেকে সিসি ব্লক ও বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ডাম্পিং করছেন।

উপজেলার ভান্ডারবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতিকুল করিম আপেল বাংলানিউজকে জানান, এ প্রকল্পের কাজ সময় মতো শেষ হলে নদী ভাঙনের আর কোনো আশঙ্কা থাকবে না। এ আশায় নদীতে সব হারানো মানুষের মাঝে প্রাণচঞ্চল্য ফিরে আসতে শুরু করেছে। আগামীতে সোনালী দিনের প্রত্যাশা করছেন তারা।

বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপ সহকারী প্রকৌশলী হারুনর রশিদ বাংলানিউজকে বলেন, এবার বর্ষা মৌসুমের আগেই তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের কাজ শেষ করা হবে। এ কাজ শেষ হলে যমুনা নদীর সাত কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধসহ জনবসতি এলাকা ভাঙনের কবল থেকে রক্ষা পাবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৫০ ঘণ্টা, মার্চ ০৪, ২০১৬
আরএ/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।