ভোলার ইলিশা-রাজাপুর মেঘনা তীর থেকে ফিরে: সাতদিন আগেও রান্না-বান্না আর সংসার চলছিলো নিজ ঘরেই, ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস বর্তমানে সে ঘরবাড়ি এখন নদী গর্ভে বিলীন। এখন আশ্রয় নিয়েছি অন্যের বাড়িতে তাও ভাঙ্গনের মুখে।
কান্না জড়িত কন্ঠে বাংলানিউজকে কথাগুলো বলছিলেন সর্বস্ব হারানো বিধবা আনোয়ারা (৪০)। ৩ ছেলে নিয়ে অভাবের সংসার তার। এখন হয়ে পড়েছে সহায় সম্বলহীন।
আনোয়ারা বলেন, স্বামী আমিন বেপারী বাচ্চাদের ছোট রেখে মারা যান’ ভিটে ছাড়া সহায় সম্বল বলেতে কিছুই ছিলো না, তাই রাস্তায় কাজ করে ছেলেদের মুখে খাবারের ব্যবস্থা করেছি, কিন্তু মেঘনা মাথা গোজার সেই আশ্রয়টুকুও কেড়ে নিয়েছে।
মেঘনার ভাঙ্গনে এমন করুন অবস্থা শুধু আনোয়ারা নয়’ তার মত একই অবস্থা বিবি হাফসা, আসমাসহ অনেকের। কিছুদিন আগেও এসব পরিবার নিজ ঘরে বসে খাবার খেতেন কিন্তু এখন রাস্তার পাশে আশ্রয় তাদের।
বর্ষা মৌসুম শুরু হতে না হতেই ভয়াল রূপ ধারন করেছে ভোলার মেঘনা। এতে ভোলা সদরের ইলিশা ও রাজাপুর ইউনিয়নের ৩ কিলোমিটার এলাকায় বিস্তীর্ন জনপদ বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ফসলি জমি, বাজার, ঘরবাড়ি, মৎস্যঘাটসহ গুরুপ্তপূর্ণ স্থাপনা হুমকির মুখে পড়েছে। এতে আতংকিত হয়ে পড়েছেন নদীর তীরে বসবাসরত কেটে খাওয়া মানুষ।
ভাঙ্গন রোধকল্পে ২৮০ কোটি টাকার প্রকল্প পাস হলেও কাজ শুরু না হওয়ায় ক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী, তবে পাউবো বলছে টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হলেই শিগগিরই কাজ শুরু হবে।
সংশ্লিষ্ঠ সূত্র ও এলাকাবাসী জানায়, মেঘনার ভাঙনে গত মৌসুমে ৫ কিলোমিটার এলাকা ও অন্তত ১০ হাজার ঘরবাড়ি বিলীন হওয়ার পর হাজারো মানুষ গৃহহারা হয়েছিলো। তখন বহু আন্দোলন সংগ্রামের পর বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমদের প্রচেষ্টায় ভাঙন রোধকল্পে একনেক বৈঠকে পাস হয় ২৮০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প। কিন্তু প্রকল্প পাস হলেও এক মাসেও শুরু হয়নি নদীর ভাঙন রোধের কাজ। এরমধ্যে আবার এ মৌসুমেই ইলিশা ইউনিয়নের ফেরীঘাট এলাকা থেকে রাজাপুরের জোড়াখাল পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। এতে ঘরবাড়ি হারিয়ে দিশেহারা নদীর পাড়ের মানুষ। এখন ভাঙ্গনের মুখে রয়েছে স্কুল, মাদ্রাসাসহ অন্তত ৫ হাজার ঘরবাড়ি। এরপরেও ভাঙন রোধে কাজ হচ্ছে না বলে অভিযোগ তাদের।
গৃহবধূ রুমা বলেন, আমাদের বাড়ি থেকে নদীর দুরত্ব মাত্র কয়েক গজ। ২০ কড়া জমি নদীতে চলে গেলে আমাদের কোনো উপায় থাকবে না।
মাসুম মিয়া বলেন, এ পর্যন্ত কয়েক ভাঙা দিয়েছে’ এখন আমরা নিঃস্ব, কিন্তু কোথায় যাবো তা জানিনা।
নদী পাড়ের বাসিন্দা মাকসুদ বলেন, পরিবারের ৯ সদস্য নিয়ে সংসার কিন্তু নদী সব নিয়ে গেছে এখন থাকার কোন অবস্থা নেই, মাথা গোজাই ঠাঁই শেষ।
ভাঙনের শিকার জাহানারা বলেন, রাতে ঘুমাতে পারিনা’ কখন ঘরবাড়ি নদী গর্ভে চলে যায়। নদীতে পুকুর গেছে, ফসলের ক্ষেত গেছে এখন আশ্রয় যাবে। এভাবে নদীর পাড়ে আহাজারি করছেন শত শত মানুষ।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, কেউ ঘর ভেঙে নেওয়া, কেউ গোছানো ও কেউ কেউ আবার নতুন করে ঘর তৈরির চেষ্টা করছেন। কেউ কেউ আবার অবাক দৃষ্টিতে মেঘনার ভাঙন দেখছেন। কারো কপালে হাত কারো চোখে জল। ভাঙন কবলিতদের চোখের জল মিশে যাচ্ছে মেঘনায়।
স্থানীয় স্কুল শিক্ষকা জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, মেঘনা ভাঙনের মুখে পড়েছে ২নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। এটি এখন কয়েক গজ দুরে। যে কোনো সময় বিলীন হয়ে যেতে পারে।
এ ব্যাপারে ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. ইউনুস বাংলানিউজকে বলেন, এক সপ্তাহের মধ্যে টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হবে। এরপরেই কাজ শুরু হবে। তবে প্রাথমিক অবস্থায় জিও ব্যাগ ফেলানোর কাজ হবে। পরবর্তী মৌসুমে সিসি ব্লকের কাজ শুরু হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৭ ঘণ্টা, মে ০৮, ২০১৬
বিএস