ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

উপকূল থেকে উপকূল

উপকূল থেকে উপকূল

ভাঙছে পাড়, সৌন্দর্য হারাচ্ছে কুয়াকাটা সৈকত

মুশফিক সৌরভ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪১৫ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০১৬
ভাঙছে পাড়, সৌন্দর্য হারাচ্ছে কুয়াকাটা সৈকত ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

পটুয়াখালী: অপার সৌন্দর্যের পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগছেন সৈকত সংলগ্ন জনপদের বাসিন্দারা ও এ পর্যটন কেন্দ্রকে ঘিরে জীবিকা নির্বাহ করা মানুষজন।

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট অস্বাভাবিক জোয়ার ও উত্তাল ঢেউয়ের ‍আঘাতে ভাঙতে শুরু করেছে কুয়াকাটা এলাকার বেড়িবাঁধ ও পাড়।

সেইসঙ্গে তীরের গাছপালা উপড়ে পড়ে ও সমুদ্রে বিলীন হয়ে সৌন্দর্য হারাচ্ছে সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয়ের জন্য বিখ্যাত কুয়াকাটা সৈকত।

 

সমুদ্রের প্রবল ঢেউয়ের আঘাতে এমনকি, সৈকত লাগোয়া ৫ ফুট উঁচু পিচঢালা সড়কও ভাঙতে শুরু করেছে। উপড়ে গেছে ঝাউবন, সৈকতের নারকেল গাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির বহু গাছ।

এতে করে সৈকতের বিভিন্ন অংশে উপড়ে থাকা গাছ ও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা আবজর্না, ভঙুর রাস্তা কুয়াকাটার এ পর্যটন স্পটকে করে তুলেছে অনেকটা শ্রী হীন।

এভাবে বছর-বছর ভাঙন অব্যাহত থাকায় দীর্ঘদিন পর কুয়াকাটায় বেড়াতে আসা পর্যটকের কাছে মনে হবে সাগর বুঝি এগিয়ে এসেছে জনপদের আরো ভিতরে।

সম্প্রতি সরেজমিনে কুয়াকাটার বেড়িবাঁধের রাস্তা দিয়ে সৈকতের দিকে পিচঢালা পথে জিরো পয়েন্টে গিয়ে দেখা গেলো, রাস্তার শেষমাথা ভেঙে সাগরে বিলীন হয়ে গেছে। আরো ভাঙছে পিচঢাল‍া রাস্তা।
তীরের বালুরাশিতে অনেকটা মুখ থুবড়ে পড়ে আছে  নারকেল ও অন্যান্য গাছ। কোথাও কোথাও সিসি ব্লক আবার কোথাও পাকা ভবনের ভেঙে আসা অংশ বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে রয়েছে।

জোয়ারের পানিতে সেগুলো তলিয়ে যাওয়ায় পর্যটকদের সতর্কতার জন্য লাঠির মাথায় লাল নিশান লাগিয়ে গেঁড়ে দেওয়া হয়েছে ধ্বংসাবশেষের মধ্যে।

সৈকত থেকে পশ্চিম দিকে এগুতে দেখা যাবে বেড়িবাঁধ পাকা করতে আসা ব্লক ফেলার কাজ। ভাঙন থেকে রক্ষা করতে বেড়িবাঁধের অনেক স্থানে ফেলা হয়েছে জিওব্যাগ। কিন্তু সেই জিওব্যাগ ব্লকেও ভাঙন ধরেছে একইভাবে।

এদিকে, এসবের মধ্যেও থেমে নেই পর্যটকদের আনাগোনা। প্রতিনিয়তই কুয়াকাটায় আসছেন পর্যটকরা। এসব এড়িয়েই তারা সমুদ্রে গোসল ও জলকেলিতে মেতে উঠছেন।

বিক্ষুদ্ধ এ প্রকৃতিকে মেনে নিয়ে সৈকতে আসছেন একে কেন্দ্র করে চলা মানুষেরা। এদের কেউ বিচ চেয়ার, বয়া ও ফুটবল ভাড়া দেন। কেউবা চটপটি, হালিম, আচার, সামুদ্রিক মাছ ও কাকড়াসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি করেন।

এর বাইরেও রয়েছেন পর্যটকদের গাইড হিসেবে কাজ করা স্থানীয় বাসিন্দারা। রয়েছেন সাগরপাড়ে ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেল ও পর্যটকদের ছবি তোলার কাজে নিয়োজিতরা।

বরিশাল থেকে এসেছেন মিঠুন দাস। জানালেন, বড় ছুটি পেলেই বন্ধুদের নিয়ে কুয়াকাটা সৈকতে আসেন এর নয়নাভিরাম সৌন্দর্য উপভোগ ও সমুদ্র স্নান করতে।

তবে বর্তমানে সৈকতের ঝাউবন, নারকেল গাছ সহ অন্যান্য গাছপালা উপড়ে যাওয়ায় কেমন বেখাপ্পা অবস্থা তৈরি হয়েছে। এসব দেখে তারা ব্যথিত হয়েছেন।

তিনি জানান, উপরে পড়া গাছের অংশ ও ভাঙা দেয়ালের ব্লক যত্রতত্র সৈকতে পড়ে থাকায় জোয়ারে স্থানটি অনিরাপদ হয়ে উঠছে। যে কেউ এর সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে হতাহত হতে পারেন। আর যে নিশান দেওয়া হয়েছে তাও যথেষ্ট নয় বলে মন্তব্য তার।

এভাবে চলতে থাকলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি কুয়াকাটা দিন-দিন আরো শ্রী হীন হয়ে পড়তে পারে বলে তার আশঙ্কা।

স্থানীয় বোট ব্যবসায়ীদের উদ্যোগে গড়ে ওঠা তথ্যকেন্দ্র থেকে জানা যায়, গত বছর থেকে সৈকতে ভাঙনের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্ষা মৌসুম হলেই শুরু হয় সৈকতের পাড় ভাঙন। এরইমধ্যে তথ্যকেন্দ্রের কার্যালয়সহ অনেকে প্রতিষ্ঠান সরিয়ে নিতে হয়েছে কয়েকবার।

স্থানীয় ব্যবসায়ী মনির জানান, জোয়ারের সময় পানি বেড়ে সৈকত থেকে মূল বসতি পর্যন্ত পৌঁছে যায়। ফলে ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীরা জোয়ার-ভাটার সঙ্গে তাল মিলিয়ে তদের দোকান বারবার সরিয়ে নিচ্ছেন।

জানতে চাইলে স্থানীয় মহিপুর রেঞ্জ অফিসের বন কর্মকর্তা এস এম শামসুদ্দোহা বাংলানিউজকে জানান, ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর পর থেকে এখন পর্যন্ত উত্তাল সমুদ্রের ঢেউয়ের আঘাতে নারকেল গাছ ছাড়াও সৈকতের ঝাউবনের ৮৫টি ঝাউগাছ, ১৮টি আকাশমনি গাছ, তিনটি অর্জুন গাছ, তিনটি কড়ৈ গাছ, একটি রেইনট্রি গাছ, একটি শিল কড়ৈ গাছ এবং একটি তুলা গাছ উপড়ে গেছে।

সৈকতের ভাঙনরোধে উদ্যোগের বিষয়ে কলাপাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবুল খায়ের জানান, মূলত যে জায়গায় স্ল্যাব নেই সেসব জায়গার পাড়ের অংশ ঢেউয়ের আঘাতে ভেঙে যাচ্ছে। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের জন্য একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এর ব্যয় হতে পারে দেড়শ কোটি টাকা।

তিনি জানান, প্রকল্পের কারিগরি অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এর ফলে সৈকতের জিরো পয়েন্ট থেকে ২ কিলোমিটার পশ্চিম ও ৩ কিলোমিটার পর্যন্ত সৈকত রক্ষার কাজ করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৪১৫ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০১৬
এসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।