ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

উপকূল থেকে উপকূল

উপকূল থেকে উপকূল

পুকুরের পানি খেয়েই অসুস্থ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১০ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০১৬
পুকুরের পানি খেয়েই অসুস্থ ছবি:বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

শ্যামনগর (সাতক্ষীরা) থেকে: শ্যামনগর উপজেলা হাসপাতালে সবচেয়ে বেশি ডায়রিয়া রোগীর দেখা মেলে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগী আসেন গাবুরা ইউনিয়ন থেকে।

সরেজমিন গাবুরা ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, বিশুদ্ধ পানির সংকট এখানে প্রবল। পুকুরের পানি খেয়ে অসুস্থ হচ্ছেন গ্রামবাসী।

ইউনিয়নের ১৫টি গ্রামের কোনটিতেই সরকারি ব্যবস্থাপনায় পুকুর সংস্কারের ব্যবস্থা নেই। ফলে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার ওপরই নির্ভর করে থাকতে হচ্ছে গ্রামবাসীকে।

৯ নং সরা গ্রামের আব্দুল মবিন বাংলানিউজকে বলেন, এখানে মানুষ পুকুরের পানি খায় বেশি। বর্ষায় পানির সমস্যা কম হয়। মানুষ টিনের চাল থেকে বা সরাসরি পাত্রে পানি জমান। এছাড়াও খাবার পানির পুকুরগুলোতেও পানি থাকে। তবে বর্ষার পরে তীব্র পানির সংকট দেখা দেয়।

এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গাবুরা ইউনিয়নে পুকুর রয়েছে ১১টি। খলিসাবুনিয়া, লক্ষ্মীখারি, চকবাড়া ও চাঁদনিমুখাতে পুকুর রয়েছে একটি করে। ডুমুরিয়ায় রয়েছে ৩টি, ৯ নং সরায় ৪টি পুকুর।

পুকুরের পানি বাড়ি নিয়ে কিছুদিন রেখে দিলে, মাটি নিচে জমা পড়ে, বা ফিটকিরি দেয়া হয়। আবার অনেকেই সরাসরি পান করেন এই পানি। ফিল্টার সংযুক্ত পুকুর (পিকেএসএফ) রয়েছে ১৯টি। এর মধ্যে ৯ নং সরায় ৬ টি, ডুমুরিয়ায় ৬টি, খলিশাবুনিয়ায় ২টি, চকবাড়ায় ২টি, মধ্যম খলিসাবুনিয়ায় ২টি, চাদনিমুখাতে ১ এবং অন্যান্য গ্রামে ১টি করে পুকুর রয়েছে।

এসব পুকুরের সঙ্গে একটি ফিল্টার মেশিন যুক্ত। এই মেশিন থেকে চাপকলের মাধ্যমে ফিল্টারে ওঠানো হয়। সেখান থেকে ট্যাপে পানি পাত্রে নেয়া হয়।

এলাকাবাসী জানায়, পুকুরের এ পানি ঘোলা। বিশুদ্ধ করতে পিকেএসএফ চালু রাখতে হয়। তবে কিছুদিন পরপরই ফিল্টারে বালু ও ময়লা জমে। তখন পানি খাওয়া যায় না। এই ইউনিয়নে এখন ৭টি পিকেএসএফ চালু রয়েছে। মেশিন নষ্ট থাকায় অন্য পুকুরগুলোর পানি পান করা যাচ্ছে না।

জেলেখালি, গাগড়ামারি, খলিসাবুনিয়া, লেবুবুনিয়া, বড় গাবুরায় গভীর নলকূপ রয়েছে। এগুলো থেকে ভাল পানি পাওয়া যায়। কোবাদক নদীর নিচে মিষ্টি পানি ভাল থাকায় এসব গভীর নলকূপের পানি খাওয়ার উপযোগী বলে জানান গ্রামবাসী। তবে অনেক সময়ই পাইপ লাইনের সমস্যা হওয়ায় পানি পাওয়া যায় না।

সরজমিন দেখা যায়, হরিষখালী মসজিদের পাশেই একটি ফিল্টার সংবলিত পুকুর। তবে গত ১ বছর ধরেই মেশিনটি নষ্ট। মানুষ সরাসরি পুকুরের পানি পান করছেন। স্থানীয় কমিউনিটিকে সঙ্গে নিয়ে এই মেশিনটি স্থাপন করেছিল বেসরকারি সংস্থা ব্রতী। ব্রতী সমাজ কল্যাণ সংস্থা সিনিয়র এনিমেটর মনিরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, কমিউনিটি নিজেদের প্রয়োজনে এটি আবার সংস্কার করবে। এখানে টাংকি থেকে বালু পরিষ্কার করলেই আবার ব্যবহার উপযোগী হবে।

তিনি বলেন, পুকুরে পানি ফুটিয়ে খেলে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তবে গ্রামবাসী সেটি মেনে চলে না। সরাসরি পুকুরে পানি খেয়ে থাকেন। এর ফলে রোগাক্রান্ত হন।

বেঁড়ি বাঁধের ওপর দোকানদার খায়ের বলেন, টাংকি কিনে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে রাখলে অনেকদিন চলে যায়। তবে বর্ষার শেষে পানির অভাব প্রকোপ আকার ধারণ করে। এমনকি পুকুরগুলো থেকে কলসী করে মানুষ পানি নিয়ে জমাতে থাকে। ফলে কিছু পুকুর একেবারেই পানি শূন্য হয়ে পড়ে। তখন নদীর ওপারে নীলডুমুর থেকেও পানি বহন করে আনতে হয়।

ডুমুরিয়ায় বেসরকারি সংস্থার ব্র্যাকের স্বাস্থ্য সেবিকা আকলিমা বাংলানিউজকে বলেন, এখানে পানির সমস্যার কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশুরা। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পুষ্টিহীনতায় পড়ছে।

পুকুরের পানি ফুটিয়ে না খাওয়ার বিষয়ে জেলে রাব্বানি বলেন, ফুটালে পানির স্বাদ চলে যায়। এ কারণে সরাসরি পুকুরের পানি খাই আমরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৪ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০১৬
এমএন/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।