পাথরঘাটার পদ্মা গ্রাম থেকে: আগের চেয়ে মানুষ ভালো আছে। গত ১০ বছরে এলাকায় কোনো চুরির খবর হুনি না।
এ মন্তব্য পাথরঘাটা সদর ইউনিয়ন পরিষদের ছয় নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য আবদুল মজিদ মিয়ার। একই ইউনিয়নের পদ্মা গ্রামের স্লুইস গেট বাজারের কবির মাঝির চায়ের দোকানের সামনে বাংলানিউজের এ সংবাদকর্মীদের কথা হয় তার সঙ্গে।
ওই দোকানের সামনে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন যুবা থেকে বৃদ্ধ অনেকেই। তাদেরই একজন আবদুল মজিদ।
তিনি জানান, মাছ ধরে এহানকার (এখানকার) মাইনষের (জনগণের) দিন বেশ ভালোই কাটতাছে। কিন্তু যারা কৃষির ওপর নির্ভরশীল, তারা মোটেও ভালো নেই।
তার ভাষ্য, এক কাডি (২৬ কেজি) ধান উৎপাদনে কৃষকের খরচ হয় হাজার টাকা। আর এক কাডি চাল মাইনষে (মানুষ) কেনে পাঁচশ’ টাকায়। আরে মিয়া, এই দেশে তো এক ফসলি জমিই সব। আমন চাষ করার পর আর কিছু চাষ করা যায় না। তাই জমি আলারা ভালো নাই।
এই গ্রামে শতকরা ৭৫ জনই বর্তমানে মাছ ধইরা সংসার চালায়। আগে তো কিছু মৌয়াল-‘টৌয়াল’ ছিলো, যারা নদীর ওপারে সুন্দরবন যাইয়া মধু সংগ্রহ করতো। এহন (এখন) তো হেরাও (তারা) নাই।
পাথরঘাটার সদর ইউনিয়নে হাইস্কুল, দাখিল মাদ্রাসাসহ সাতটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে। এর মধ্যে পদ্মা গ্রামেই আছে তিনটা প্রাথমিক বিদ্যালয়। ২০/২২ বছর পর অইলেও স্কুল পর্যায়ে পোলাপানের উপস্থিতি বাড়তাছে। জাইল্যা (জেলে) অইতে (থেকে) শুরু কইরা সবাই তার পোলাপাইনরে স্কুলে পাডায়। পোলাপান আগ্রহ লইয়া স্কুল ড্রেস পইরা স্কুলে আয় । যাগো নাই, তাগো এলাকার সচ্ছল ব্যক্তিরা ব্যবস্থা কইরা দেয়, বলেন আবদুল মজিদ।
তিনি বলেন, পাঁচ/ছয় বছর আগে দস্যু সদস্যা ছিল, বর্তমানে নরমাল। র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ও কোস্টগার্ডের কারণে অনেক কিছুই পাইল্টা গ্যাছে। এখন দস্যুরা নদীর এপারে আইসা কিছু করে না, নদীর ওপারে, সুন্দরবনে কিংবা বঙ্গোপসাগরে যা করার করে। চার/পাঁচদিন আগে আবু জাফর ও ইব্রাহিম নামে দুই জাইল্লারে দস্যুরা লইয়া গেছিল। কোনোভাবে ডিমান্ড মিটাইয়া, অনুনয় বিনয় কইরা শুক্রবার তাগো ছাড়াইয়া লইয়া আইছি।
তয় (তবে), বনবিভাগেরসহ অনেক বাহিনী আছে, যাদের লোকেরা সন্ধ্যা অইলে আর বাইর অইতে চায় না। সরকারের ইমপ্লয়িরা যদি ভালো কইরা ৬০ ভাগ কাজ করতো, আর ঝুঁকি নিতো, তাইলে (তাহলে) এইসব কইম্যা যাইতো, অভিমত আবদুল মজিদের।
গ্রামের অপর বয়োজ্যেষ্ঠ নুরুল আলম বলেন, সিডরে যা অইছে তা ভালো কইরা প্রচার করা হইছে। সরকারসহ এনজিও আলারা সহায়ক ভূমিকা রাখছে দেইখা মানুষ ঘুইরা দাঁড়াইতে শেখছে। এহন এইহানকার মানুষ প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে পুরাই লড়াই কইরা বাইচ্চা (বেঁচে) থাহে (থাকে)।
তিনি আরো বলেন, মোরা কইতে গেলে ঋণের মাধ্যমে স্বাবলম্বী। ঋণ লইলে, পকেটে কয়দিন কাঁচা টাহা থাহে। এই গ্রামের সবাই কম-বেশি ঋণ লয়। কিন্তু যহন টাহা ফেরত দিতে অয়, তহন জায়গা-জমি গাছ-পালা বেইচা অইলেও দিতে অয় (হয়)।
মৎস্য নির্ভর এ গ্রামের অনেকে পেশা ছেড়ে যাচ্ছেন বলে জানালের ছগির কবিরের বাবা ষাটোর্ধ মো. ফজলুল হক। তার দুই ছেলেকে গতবছর দস্যুরা ধরে নিয়ে যায়, পরে তাদের ছেড়ে দিলেও তারা আর মাছ ধরার নাম নেননি। এখন চাষাবাদ করে দিনাতিপাত করছেন তারা। একইভাবে জেলে পেশা ছেড়ে স্লুইস গেটে বাজারে ব্যবসা করছেন কবির নাজিরসহ অনেকে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৪ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০১৬
এসআই