নিঝুম দ্বীপ থেকে: বিশাল জলরাশির মধ্যেই বিস্তৃত তৃণভূমি। প্রয়োজন পড়ে না বাড়তি খাদ্যের।
নোয়াখালী হাতিয়া, নিঝুম দ্বীপ ও ফেনীর সোনাগাজীর উপকূলীয় এলাকা ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে৷
ভেড়া চাষ করে অনেক পরিবারই সাফল্য পেয়েছে।
ভেড়া পালন করে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন সোনাগাজীর চর চান্দিয়া এলাকার আবদুল গফুর। শুধু ভেড়ার খামার করেই বছরে লাখ টাকা আয় করছেন তিনি।
আবদুল গফুর বাংলানিউজকে জানান, বছর পাঁচ আগে মাত্র দু’টি ভেড়া দিয়ে তার যাত্রা শুরু। এখন তার কয়েকটি ভেড়ার পাল রয়েছে। ভেড়া লালন-পালন করতে তেমন কোনো খরচ নেই, আশপাশের ঘাস খেয়েই দিব্যি বেড়ে ওঠে। যা থেকে বছর শেষে আয় হয় লাখ টাকা, আর তা দিয়ে তার সংসার ভালোই চলছে৷
ভেড়া পালন করে স্বাবলম্বী হওয়ার আরো অনেক গল্প রয়েছে নিঝুম দ্বীপে। প্রায় একশ’ ভেড়ার মালিক বাবর জানান, একটি প্রাপ্ত বয়ষ্ক ভেড়া কমপক্ষে চার হাজার টাকায় বিক্রি করা যায়। যা পুষতে তেমন কোনো টাকাই খরচ হয় না। কারণ, চরের লতাপাতা খেয়েই তারা বেড়ে ওঠে।
হাতিয়ার ভেড়া বেপারী শামছুল হক জানান, প্রতিটি প্রাপ্ত বয়স্ক ভেড়া তারা তিন/চার হাজার টাকায় কেনেন। যা নোয়াখালীসহ অন্যান্য অঞ্চলে বিক্রি হয় চার থেকে পাঁচ হাজার টাকায়৷ তাই ভেড়া পালন উপকূলীয় এলাকায় অনেক লাভজনক৷
চরাঞ্চল এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বেকার যুবকেরা এখন ভেড়া চাষ শুরু করেছেন। সোনাগাজীর চর চান্দিয়া এলাকার ভেড়া চাষি রফিক বলেন, শখের বসে ২০০১ সালে চরে চারটি ভেড়া পালন শুরু করি। আমার খামারে এখন ১২৬টি ভেড়া রয়েছে। এ খামার থেকে বিগত ১৫ বছরে প্রায় ১৩ লাখ টাকার ভেড়া বিক্রি করেছি।
চরে প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। অনেক সময় নদীতে মাছ পাওয়া যায় না, ওই সময় মানবেতর জীবনযাপন করতে হয় তাদের। ওই সময়ের বেকারত্ব দূর করতে ভেড়া পুষতে শুরু করেছিলেন সোনাগাজীর চর চান্দিয়ার রুহুল আমিন ভূঁইয়া।
তিনি বলেন, অন্য গবাদি পশুর চাইতে ভেড়ার রোগবালাই কম। এরা আগাছা-লতাপাতা খেয়ে থাকে। তাই খরচও কম। সময় মতো কৃমিনাশক দেওয়া হলে রোগবালাই কম হয়। তবে ফুড পয়জনিং হলে একটু সমস্যা দেখা যায়।
এ বিষয়ে সোনাগাজী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. সাইফুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, ভেড়ার মাংসে আঁশ কম, মোলায়েম। আবার খেতেও সুস্বাদু। দেশের মাংসের চাহিদা পূরণে ভেড়ার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
মাঝে মধ্যেই সরকারের পক্ষ থেকে ভেড়া চাষিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় জানিয়ে তিনি বলেন, গেল বছরও ২০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে৷
উপকূলের বিভিন্ন এলাকার ভেড়া চাষিদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, তাদের মূল সমস্যা দস্যুতা৷ দস্যুরা হঠাৎ করে এসে খামার থেকে ভেড়া নিয়ে যায়৷ দস্যুতা দমন করা গেলে ভেড়া চাষিরা রক্ষা পাবে৷
তবে, তেমন কোনো খরচ না থাকলেও চারণভূমির সংকট এবং দস্যুতা ভেড়া চাষিদের মূল সমস্যা।
উপজেলা প্রশাসনের কাছে আমরা মুক্ত চারণ ভূমি চেয়েছিলাম কিন্তু আইনি জটিলতার কারণে তা সম্ভব হয়নি, যোগ করেন ডা. মো. সাইফুজ্জামান৷
বাংলাদেশ সময়: ০৯২০ ঘণ্টা, জুলাই ০৪, ২০১৬
জেপি/এসআই