তাদের ভাষ্যমতে, উপকূলীয় এলাকায় জেগে ওঠা চরগুলোতে যে কেওড়া বাগান করা হয়েছে, তাতে বিভিন্ন সমস্যার কারণে বংশবৃদ্ধি না হওয়ায় এর ধারাবাহিকতা নিয়ে আশঙ্কা দেখা দেয়। ফলে সেখানে ম্যানগ্রোভ জাতীয় গাছ লাগানোর চিন্তা করা হয়।
কয়েক বছর গবেষণার পর প্রাপ্ত সফলতার ফলে উপকূলের মানুষের তৈরি সব বন সুন্দরবনের মতো বছরের পর বছর বেঁচে থাকবে।
বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনিস্টিটিউটের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, উপকূলীয় এলাকায় প্রতিষ্ঠিত কেওড়া বনের অভ্যন্তরে সুন্দরী, গেওয়া, পশুর, ধুন্দুল, কাঁকড়া, খলসী, সিংড়া, গরান, কিরপা, হেঁতাল এবং গোলপাতার বাগান তৈরির পদ্ধতির ওপর ১৯৯০ সাল থেকে গবেষণা পরিচালনা করা হয়।
উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালী, ভোলা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকার জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হওয়ায় কেওড়া বনের মধ্যে এ ম্যানগ্রোভ প্রজাতির গাছ রোপণ করে গবেষণা চালানো হয়। পর্যায়ক্রমে ২৫ হেক্টর জমিতে ম্যানগ্রোভ প্রজাতির গাছ লাগানো হয়। এর মধ্যে ৭টি বৃক্ষ সুন্দরী, গেওয়া, পশুর, খলসী, সিংড়া, হেঁতাল এবং গোলপাতা উপযুক্ত হিসেবে পাওয়া গেছে। বেশিরভাগ বনে ইতোমধ্যে বৃক্ষের পূর্ণতা পাওয়ায় রিজেনারেশন কার্যক্রম শুরু হয়ে প্রাকৃতিকভাবে গাছের জন্ম নিতে শুরু করে বনের ধারা অব্যাহত রাখছে।
পাশাপাশি যেসব চর উঁচু হয়ে জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হচ্ছে না, সেসব বনে মূলভূমির বৃক্ষ রোপণের ওপর গবেষণা চালানো হয়। গবেষণায় ১৩ প্রজাতির মধ্যে রেইন ট্রি, ঝাউ, সাদা কড়ই, কালো কড়ই, খইয়া বাবলা এবং বাবলা জাতের ৬টি বৃক্ষকে উপযুক্ত হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে।
বন গবেষক মো. আব্দুল কুদ্দুস মিয়া বলেন, ১৯৬৬ সাল থেকে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের একটি বিশাল ভূখণ্ড (১ লাখ ৯০ হাজার হেক্টর) ম্যানগ্রোভ বন তৈরি করা হয়। এসব বনের ৯৪ শতাংশ বনই কেওড়া প্রজাতির একক বন। কিছুদিন পর গবেষণায় দেখা যায়, এসব বন নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন। এর মধ্যে কেওড়ার কাণ্ড ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণে গাছ মরে যাওয়া, বনভূমির উচ্চতা বৃদ্ধি, মাটি শক্ত হওয়া ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ম্যানগ্রোভ প্রজাতির অনুপস্থিতি এবং রিজেনারেশন না আসার ফলে বনের ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কা দেখা দেয়।
কেওড়া বন ২৫ বছর পরে ধ্বংস হয়ে যাওয়ার কারণে টেকসই লাগাতার বন সৃজনের লক্ষ্যে প্লান্টেশন ট্রায়েল ইউনিট বিভাগের মাধ্যমে কেওড়া বাগানের ভেতরে অন্যান্য ম্যানগ্রোভ প্রজাতির আন্ডারপ্লান্টিং বাগান তৈরির পরীক্ষা পরিচালনা করা হয়।
পাশাপাশি যেসব বনভূমিতে জোয়ারের পানি এখন ঢুকছে সেসব জায়গায় মূলভূমির বৃক্ষ নিয়ে গবেষণা করা হয়। আর এ সবই লবণসহিষ্ণু উদ্ভিদ। দীর্ঘ গবেষণার পর দু’টোতেই সফলতা পাওয়া যায়। যার মধ্যে কেওড়া বনের মাঝে ৭টি আর উঁচুভূমিতে ৬টি বৃক্ষ পাইলট স্কেলে রোপণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বন বিভাগকে।
তিনি বলেন, এর ফলে এসব বন সুন্দরবনের মতো টেকসই ও দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার পাশাপাশি প্রাকৃতিক বিরুপ প্রভাবের হাত থেকে উপকূলীয় জনগোষ্ঠী এবং জীববৈচিত্র্যকে রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তৈরি হবে টেকসই সবুজের বেষ্টনি।
বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের বরিশাল বিভাগীয় কর্মকর্তা শেখ এহিউল ইসলাম বলেন, রিজেনারেশনের মাধ্যমে একটি বন হাজার বছর বেঁচে থাকবে। এর সফলতা ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০১৩ সালে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছেন তারা।
তিনি বলেন, নতুন একটি সার্ভে অনুযায়ী গবেষণা অঞ্চলগুলোতে রিজেনারেশনের কারণে প্রাকৃতিকভাবে সবেচেয়ে বেশি গেওয়ার চারা লক্ষ্য করা গেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪২০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০২, ২০১৬
এমএস/জেডএস