ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যদের তদরকীতে লাঠি-সোটা নিয়ে বাধ্যতামূলকভাবে প্রতিটি পরিবার থেকে একজন করে পুরুষ সদস্য পাহারায় নিয়োজিত হচ্ছেন।
গ্রামবাসীদের দেয়া তথ্যানুযায়ী, গ্রামে গ্রামে তৈরি পাহারাদার কমিটি ও গ্রামবাসী ছাড়াও মেম্বার এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিদের অংশগ্রহণে সম্মিলিতভাবে চলছে চোর-ডাকাত রোধে পাহারা দেওয়ার কাজ।
মকিমপুর গ্রামের বাসিন্দারা জানান, রাতের বেলা গ্রামের রাস্তায় মোটরসাইকেলসহ দ্রুত গতির কোন যানবাহন প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। দুইশ গজ পর পর দুই জন করে গ্রামবাসী লাঠিসোঁটা, মাছ শিকারের কোট বা টেটা নিয়েও গ্রাম পাহারা দিচ্ছে। আর বাজার পাহারায় নিয়োজিতরা হাতে লাঠি, মুখে বাঁশি নিয়ে দলগতভাবে বাজারের প্রতিটি অলিগলিতে পাহারা দেয়।
৪৫ বছর বয়স্ক গ্রাম পাহারাদার রনজিৎ বেপারী বলেন, এক মাস আগে প্রায় প্রতি রাতেই গ্রামে গ্রামে চুরি-ডাকাতি সংঘটিত হতো। ইউনিয়নের খিতিষ চন্দ্রের বাড়ি, ওহিদ মাঝি বাড়িসহ কমপক্ষে ১০ জনের বাড়িতে চুরি ও ডাকাতি হয়। আর গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ কৃষিজীবি হওয়ায় চুরি-ডাকাতি হওয়া বাড়িগুলোর মধ্যে কৃষকদের সংখ্যাই বেশি। এ কারণে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও সর্বস্তরের গণ্যমান্যদের সিদ্ধান্তনুযায়ী গ্রামে গ্রামে পাহারা চলছে।
ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুর রহমান তালুকদার বলেন, এক মাস আগে পাখিমারার বাজারের নিকটস্থ ইউনিয়নে ঋণ কর্মসূচি পরিচালনা করা হিড বাংলাদেশ এনজিও অফিসে দুর্ধষ ডাকাতি সংঘটিত হয়। এছাড়াও বাজারের বেশ কয়েকটি দোকানে চুরিও সংগঠিত হয়েছে। সেই থেকে বাজারে কঠোরভাবে পাহারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
পাহারায় নিয়োজিত অমল বেপারী ও ফিরোজ হাওলাদার জানান, নিজেদের সম্পদ ও জীবন রক্ষার জন্য নিজেদের উদ্যোগে রাত জেগে পাহারায় নিয়োজিত হয়েছেন তারা। আর প্রতি রাতে পাহারাদার নির্ধারণ করেন গ্রাম পাহারাদার কমিটির সদস্যরা।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুর রব হাওলাদার জানান, গ্রামের গণ্যমান্য ও স্বেচ্ছায় পাহারায় অংশগ্রহণে ইচ্ছুক পুরুষ সদস্যদের মাধ্যমে গ্রাম পাহারার কার্যক্রম চলছে। গ্রাম পাহারার তদারকি কাজে নিয়োজিত রয়েছে ইউপি সদস্যরা। গ্রাম পাহারা দেওয়ায় চোর ডাকাত এখন আর গ্রামে প্রবেশ করতে পারছে না।
নীলগঞ্জ ইউনিয়ন চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন মাহমুদ বলেন, ইউনিয়ন চুরি ডাকাতি বৃদ্ধি পাওয়ায় এক মাস আগে ইউনিয়ন আইনশৃঙ্খলা কমিটির সুপারিশ ক্রমে গ্রামে গ্রামে ইউনিয়ন মেম্বারদের তদারকিতে পাহারাদার কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই কমিটির মাধ্যমে গ্রামের বাসিন্দাদের নিয়ে পাহারায় নিয়োজিত হওয়ার তালিকা প্রস্তুত করেন। কোন সহিংস ঘটনা ছাড়াই চলছে গ্রাম পাহারার কাজ।
এদিকে চাকামইয়া ইউনিয়নের কাঁঠালপাড়া, নিশানবাড়িয়া, গান্ধাপড়াসহ বিভিন্ন গ্রামেও চুরি-ডাকাতি রোধে রাতে জেগে দলগতভাবে গ্রাম পাহাড়া দিচ্ছে গ্রামবাসী।
কাঁঠালপাড়া গ্রামের মো. গনি মিয়া জানান, শিক্ষক নির্মল সরকারের বাড়িতে ডাকাতির ঘটনার পর কাঁঠালাপাড়াসহ আশে পাশের গ্রামের মানুষ একেক গ্রুপে ৪/৫ জন করে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছে।
কলাপাড়া থানার নতুন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, তিনি যোগদানের আগে নীলগঞ্জ ইউনিয়নে চুরিসহ বেশ কিছু বিচ্ছিন্ন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছিলো। এরপর থেকেই নীলগঞ্জ ইউনিয়নের সর্বস্তরের মানুষ চুরি-ডাকাতি ঠেকাতে গ্রাম পাহারার সিদ্ধান্ত নেয়। ইউনিয়ন পরিষদ এবং স্থানীয় বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দর পাশাপাশি কলাপাড়া থানা পুলিশ অংশীদারিত্বের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখার জন্য গ্রাম-হাট-বাজার পাহারার কার্যক্রমকে সাবির্কভাবে সহযোগিতা করছেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৬৪৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৮, ২০১৮
এমএস/এমজেএফ