এদিকে, ছয় ঘণ্টায় ট্রলারের তেল খরচই হয়েছে দুই হাজার টাকা, পরিশ্রমের কথা না হয় বাদই দিলাম। এভাবে চলতে থাকলে পরিবার-পরিজন নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে।
কথাগুলো বলছিলেন ভোলা সদর উপজেলার শিবপুর সংলগ্ন ভোলার খাল এলাকার জেলে বাবুল মাঝি।
তিনি বলেন, সারাদিন জাল বেয়েও নদীতে মাছের দেখা মিলছে না।
একই অবস্থা আমির হোসেনের ট্রলারের জেলেদেরও। আমির হোসেন বাংলানিউজকে জানান, টানা দু’দিন নদীতে মাছ শিকারে গিয়ে সাত হাজার দুইশ’ টাকার মাছ বিক্রি করেছেন। এর মধ্যে দুই হাজার টাকার তেল খরচ করে হাতে পেয়েছেন পাঁচ হাজার দুইশ’ টাকা। এ টাকার অর্ধেক মহাজনকে (ট্রলার মালিক) দেয়ার পর অবশিষ্ট ছিলো মাত্র দুই হাজার ছয়শ’ টাকা। পাঁচ জেলের ভাগ্যে জুটেছে মাত্র ৫২০ টাকা করে।
দুইদিন মাছ ধরে যদি এমন অবস্থা হয়, তাহলে কীভাবে দিন চলবে? প্রশ্ন আমির হোসেনের।
একই অবস্থা মেঘনা-তেঁতুলিয়ার অধিকাংশ জেলের। দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে নদীতে ইলিশ শিকারে নামলেও ইলিশের দেখা পাচ্ছেন না ভোলার জেলেরা। নিষেধাজ্ঞার তুলে দেওয়ার পর ২৩ দিন কেটে গেছে, তবুও কাটেনি মাছের সংকট। এতে অভাব-অনটন আর আর অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন জেলেরা।
নদীতে সারাদিন জাল বেয়ে যে মাছ পাচ্ছেন তা দিয়ে দেনা পরিশোধ করে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে মেঘনা পাড়ের জেলেদের।
জেলেরা জানান, প্রতি বছর এমন সময় নদীতে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়লেও এ মৌসুমে মাছের সংকট। ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ শিকারের আশা নিয়ে জাল-নৌকা ও ট্রলারে করে উত্তাল মেঘনার সঙ্গে যুদ্ধ করে ফিরতে হচ্ছে অনেকটা খালি হাতে।
মঙ্গলবার (২২ মে) দুপুরে ভোলা সদরের মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ভোলার খালে গিয়ে দেখা গেছে, ঘাটে সারি সারি ট্রলার ভিড়িয়ে রাখা হয়েছে। নদী থেকে দুই/একটি ট্রলার ঘাটে এলেও তাতে পাঁচ/১০টির বেশি মাছ মিলছে না। ঘাটে এসব মাছ ডাক দিয়ে বিক্রি হচ্ছে, কিন্তু কিছুতেই মাছের আড়ত জমজমাট হয়ে উঠছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেলো, গত বছর এমন দিনে এ ঘাট থেকে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকার মাছ মোকামে পাঠানো হতো। কিন্তু এবার যাচ্ছে মাত্র চার/পাঁচ লাখ টাকার মাছ।
ঘাটের আড়তদার মো. আল-আমিন জানান, নদীতে মাছ নেই, তাই ঘাট জমে ওঠেনি, আমরাও অলস সময় কাটাচ্ছি। দাদন দিয়ে অনেকটা লোকসানের মধ্যে আড়তদাররা।
ভোলার খালে ভিড়িয়ে রাখা হয়েছে শতাধিক নৌকা ও ট্রলার। কেউ জাল বুনছেন, কেউ বা গল্প করে অলস সময় পার করছেন। তাদের মধ্য সিরাজ, সজিব, আকবর, কামাল, ইভু, ফরিদ, সাইফুল, বাশার ও সালাউদ্দিন জানান, প্রতিদিন মাছের আশায় নদীতে যান তারা, কিন্তু ইলিশ মেলে না। তাদের দুর্দিন কেউ দেখে না।
এদিকে, নদীতে ইলিশের সংকট থাকায় দামও আকাশচুম্বি বলে জানিয়েছেন আড়তদাররা। দেড় কেজি ওজনের প্রতি পিস ইলিশ বিক্রি হচ্ছে সাড়ে তিন থেকে চার হাজার টাকায়, এক কেজি ওজনের ইলিশ প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকায়, নয়শ’ গ্রামের প্রতি হালি বিক্রি হচ্ছে চার হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা করে এবং ২৫০ গ্রামের প্রতিহালি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার টাকা দরে।
মাছের সংকট সম্পর্কে জানতে চাইলে ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম বাংলানিউজকে জানান, নদীতে এ সময় তেমন ইলিশ নেই, কারণ এখন মাছের মৌসুম নয়। জুলাই, আগস্ট ও অক্টোবর মাসে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়তে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ২১১৮ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০১৮
এসআই