ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

উপকূল থেকে উপকূল

নৌকা বদল হলেও ভাগ্য বদল হয় না

ছোটন সাহা, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২২৮ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০১৮
নৌকা বদল হলেও ভাগ্য বদল হয় না মানতা সম্প্রদায়ের হতদরিদ্র পরিবার। ছবি: বাংলানিউজ

ভোলা: ‘ছবি তুলে কি হবে? আমাদের খবর কেউ নেয় না। আমরা কোনো সাহায্যও পাই না। আমাগো নৌকা বদল হলেও, ভাগ্য বদল হয় না।’ নৌকাভাসি মানতা নারী পারুল বেগম ও তার সন্তানদের ছবি তুলতে গেলে এমন কথাই বলেন তিনি।

ঘাটে নোঙর করা একটি নৌকায় ছেলে-মেয়েদের নিয়ে বসে আছেন পারুল। চোখে-মুখে তার বিরক্তি, অনিশ্চয়তা আর দুশ্চিন্তার ছাপ।

নদীতে মাছ শিকার শেষে ঘাটে ভিড়েছে পারুলদের নৌকা। স্বামী আলমগীর সর্দার ৪-৫টি মাছ নিয়ে বিক্রি করতে আড়তে যান। মাছ বিক্রির টাকা পেলে সন্তান ও নিজেদের জন্য দু’মুঠো খাবারের ব্যবস্থা করে ফিরে আসবেন এ আশায় অপেক্ষার প্রহর গুনছেন পারুল বেগম।

ভোলা সদরের ইলিশা ফেরিঘাট এলাকার মাছ ঘাটে গিয়ে এমনই করুণ দৃশ্য দেখা যায়। সেখানে মানতা গৃহবধূ পারুলসহ অন্যদের অবস্থা যেন একই। শুধু পারুল নয়, তাদের মতো অর্ধশতাধিক মানতা নারী-পুরুষের নৌকা বহর ইলিশা ও জোরখালে ঘাটে ভেড়ানো রয়েছে।

জলে জড়ানো জীবনে ভাগ্য বদল হয় না তাদের। সারাদিন জাল বেয়ে নদীতে যা মাছ পান তা বিক্রি করেই চালাতে হবে তাদের সংসার। কিন্তু ইলিশ সংকটে তাদের জীবনে নেমে এসেছে চরম বিপর্যয়।

পারুল বেগম বাংলানিউজকে বলেন, ‘স্বামী, এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে নৌকায় ভাসমান সংসার তাদের। আগে বাবার নৌকায় ছিলেন, এখন স্বামীর নৌকায়। নৌকা বদল হলেও জীবন বদলায়নি তার। গত এক সপ্তাহে মাত্র দুই হাজার টাকার মাছ বিক্রি করেছেন, যা ডাল-ভাতের ব্যবস্থা করতে গিয়েই হিমশিম খেতে হচ্ছে। ’

মানতা সম্প্রদায়ের হতদরিদ্র পরিবার।  ছবি: বাংলানিউজতিনি বলেন, ‘আমাদের আবার আনন্দ-উৎসব। ভাতের পয়সা যোগাড় করতেই দিন কেটে যায়। কীভাবে খাবার জোগাড় করব সে চিন্তাই যেন পিছু ছাড়ছে না, সেখানে আবার আনন্দ! নদীর উত্তাল ঢেউয়ে চাপা পড়ে যায় আমাদের আনন্দ। নদীই জীবন, নদীই আমাদের মরণ। ’

ঘাটে নোঙর করা নৌকায় তিন মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে মন খারাপ করে বসে আছেন মানতা সম্প্রদায়ের ফরিদ মিয়া। নদীতে ইলিশ না পাওয়ায় সংকটময় হয়ে পড়েছে তার জীবন।

ফরিদ মিয়া বলেন, ‘নদীতে মাছ কম তাই আয়-রোজগার নেই। দুইদিন মাছ বিক্রি করে পেয়েছি মাত্র ৭শ’ টাকা। এ টাকা দিয়ে পেটের ব্যবস্থা করবো, নাকি নৌকার জন্য তেল কিনব?’

তিনি বলেন, ‘সদরের রাজাপুর ইউনিয়নের জোরখাল এলাকায় নৌকার শতাধিক বহর রয়েছে, যারা নৌকায় বসবাস করেন। তাদেরও একই অবস্থা। নদীতে মাছ নেই, তাই মানতা পল্লিতে হাসিও নেই। ’

উপকূলের বিভিন্ন মৎস্য ঘাটে আলমগীর ও পারুল বেগমদের মতো নৌকাভাসি মানতাদের জীবন-জীবিকা নৌকাতেই। নদীতে মাছ পেলে মুখে হাসি ফোটে, নয়তো মলিন মুখ। জলের সঙ্গে যুদ্ধ করতে গিয়ে কখনো কখনো আশা-স্বপ্ন চুরমার হয়ে যায় তাদের।

বাংলাদেশ সময়: ০৮২৪ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০১৮
জিপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।