রোববার (১৫ জুলাই) ভোরে উপজেলার মাতাব্বর হাট এলাকায় নির্মাণাধীন মেঘনা তীর রক্ষা বাঁধে ধসে পড়েছে। এতে নদীতে ভেঙে পড়েছে ব্লক বাঁধের প্রায় দুইশ’ মিটার।
দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু না হওয়ায় বাঁধের দু’পাশের এলাকায় অব্যাহতভাবে ভাঙছে। আশপাশের এলাকায় ভাঙনের কারণে বাঁধ ধসে পড়েছে। গত বর্ষা মৌসুমেও ওই বাঁধে পাঁচবার ধসে পড়ে। অনিয়মের মধ্যদিয়ে নিন্মমানের কাজ করায় বারবার বাঁধে ধস নামছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
সরেজমিনে দেখা যায়, জোয়ার ও ঢেউয়ের আঘাতে এক কিলোমিটার নির্মাণাধীন বাঁধের দু’পাশে ব্লক সরে ধসে পড়ছে। এছাড়া ব্লক থেকে ব্লকের দূরত্ব বাড়ায় বাঁধের বেশ কিছু অংশ ফাঁকা হয়ে গেছে। এতে করে বাঁধ দুর্ভল হয়ে পড়েছে। ধস ঠেকাতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে জিও ব্যাগ (বালু ভর্তি বিশেষ ব্যাগ) ডাম্পিং করতে দেখা গেছে।
বর্ষার শুরুতেই বাঁধে ধস দেখা দেওয়ায় আতঙ্ক রয়েছে স্থানীয়রা। স্থানীয়রা জানান, কমলনগরে নদী ভাঙন রোধে মাত্র এক কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ হয়েছে। এ উপজেলা রক্ষায় তা যথেষ্ট নয়। প্রায়োজন আরও ৮ কিলোমিটার বাঁধ। যেটুকু বাঁধ হয়েছে তাতেও নানা অনিয়ম হয়েছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান যথাযথভাবে ডাম্পিং না করেই বাঁধ নির্মাণ করেছে। বাঁধ নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে নিম্মমানের বালু ও জিও ব্যাগ। এ কারণে গত বছর বাঁধে পাঁচবার ধস নামে। এছাড়া অন্যত্র থেকে মাটি সংগ্রহ করে বাঁধ নির্মাণ করার কথা থাকলেও নদীর তীর থেকে মাটি উত্তোলন করে বাঁধ নির্মাণ করায় বারবার বাঁধে ধস নামছে। তাই এবার বর্ষার শুরুতেই ফের ধস দেখা দেওয়া আতঙ্কে রয়েছে কমলনগর উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ।
স্থানীয় লোকজন বলেন, পার্শ্ববর্তী রামগতি উপজেলা সদর আলেকজান্ডারে সেনা বাহিনীর মাধ্যমে সাড়ে তিন কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। এতে উপজেলা সদরসহ বিস্তৃর্ণ জনপদ রক্ষা পেয়েছে। কিন্তু কমলনগর মাত্র এক কিলোমিটার বরাদ্দ হয়েছে। তা সেনাবাহিনীকে দিয়ে না করিয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে করানো হচ্ছে। যে কারণেই বারবার একই অবস্থার তৈরি হচ্ছে।
বাঁধ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এজিএম মাসুদ রানা বাংলানিউজকে বলেন, কমলনগরের মেঘনার ভাঙন প্রতিরোধে মাত্র এক কিলোমিটার বাঁধ যথেষ্ট নয়। তীর রক্ষা বাঁধের দু’পাশেই ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। জোয়ার ও ঢেউয়ের আঘাতে ব্লক সরে বাঁধ ধসে পড়ছে। এসব পরিস্থিতিতে বাঁধের কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাৎক্ষণিক সংস্কার শুরু করেছি।
লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মুসা বলেন, বাঁধ ধসের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাচ্ছি। এ ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দ্বিতীয় পর্যায়ের বাঁধ নির্মাণের জন্য মন্ত্রাণালয়ে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) পাঠানো হয়েছে। কিন্তু তা অনুমোদন না হওয়ায় কাজ হচ্ছে না।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে মেঘনা নদীর তীর রক্ষা বাঁধের জন্য ১৯৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। বরাদ্দকৃত টাকায় কমলনগরে এক কিলোমিটার, রামগতির আলেকজান্ডারে সাড়ে তিন কিলোমিটার ও রামগতিরহাট মাছঘাট এলাকায় এক কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ হওয়ার কথা। ২০১৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারিতে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ১৯ ইঞ্জিনিয়ারি কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন আলেকজান্ডার এলাকায় ভাঙন রোধে বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু করে সফলভাবে তা বাস্তবায়ন করেছে। এদিকে ওই বরাদ্দের ৪৮ কোটি টাকায় কমলনগরে এক কিলোমিটার কাজ পায় নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড।
অর্থ বরাদ্দের দুই বছর পর ২০১৬ সালের শুরুর দিকে প্রতিষ্ঠানটি ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিংকে দিয়ে কাজ শুরু করে। ওই বছর নিম্মমানের বালু ও জিও ব্যাগ দিয়ে কাজ শুরু করায় স্থানীয়দের চাপের মুখে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। অনিয়মের প্রতিবাদে ও যথাযথভাবে কাজ করার দাবিতে ওই সময় মানববন্ধন করে স্থানীয় এলাকাবাসী। পরবর্তীতে একই বছরের ২৩ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে বাঁধ নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৬ ঘণ্টা, জুলাই ১৫, ২০১৮
এসআর/ওএইচ/