ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

উপকূল থেকে উপকূল

‘জুলুম সব সময় গরিবের ওপরই হয়’

শফিকুল ইসলাম খোকন, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২০ ঘণ্টা, মে ২১, ২০১৯
‘জুলুম সব সময় গরিবের ওপরই হয়’

প্রান্তিক উপকূল ঘুরে এসে: কখনো প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ, কখনো দস্যুদের সঙ্গে। আবার কখনো বা নিজের সঙ্গে নিজের যুদ্ধ। সব সমস্যা মোকাবেলার পর তিনবেলা খেয়ে বেঁচে থাকার প্রয়োজনটা বড় হয়ে দেখা দেয়।

এছাড়া সরকারি নিষেধাজ্ঞা এবং নিয়মনীতিতো মানতেই হয়। বহুমুখী প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হয় প্রায় সারাটা মৌসুম।

এ বছর নতুন করে উপকূলীয় জেলেদের মধ্যে বইছে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা।

জন্মের পর, বুঝতে শেখার পর থেকেই বাবার হাত ধরেই জাল টানা আর মাছ ধরা এখানকার প্রতিটি মানুষেরই কাজ। জোয়ার-ভাটার সঙ্গে মিল রেখে সাগরে যেতে হয়। গভীর সমুদ্রে জীবন বাজি রেখে প্রকৃতির ওপর খেয়াল করেই জাল ফেলতে হয় আর টানতে হয় জেলেদের।

৮ বছর বয়স থেকে বিষখালী নদীর পাড়ের বাসিন্দা মো. হানিফও লেগে পড়েন বাবার সঙ্গে মাছ ধরার কাজে। সেই থেকেই মাছ ধরে পেটের ক্ষুধা নিবারণসহ সংসারের খরচ মেটান।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, সরকার গরীবেরেই দ্যাহে সব সময়। গরীবের ওপরই জুলুম করে। ৮ বছর বয়স থেইক্যা মাছ ধরি। ৬৫ দিনের অবরোধ কোনো সময় হুনিনাই। এহন মোগো প্যাডে লাথি মারা ছাড়া আর কিছুই না।

বিষখালীর তীরবর্তী বনফুল গুচ্ছগ্রামের আ. লতিফ তালুকদার (৭৫) বাংলানিউজকে বলেন, বৃদ্ধ বয়সেও মাছ ধইর‌্যা খাইতে হয়। বছরের ছয় মাস ইলিশ ধরি। এরমধ্যে তিন মাসই যদি অবরোধ থাহে, তাইলে মোরা কি হইর‌্যা খামু।

আক্ষেপ করে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এহন তো জামা নাই, খালি গায় থাহি, আর কয়দিন পর পরনে কাপড়ও থাকবেনা।  

চরদুয়ানী ইউনিয়নের মঠেরখাল গ্রামের মো. সুলতান বাংলানিউজকে বলেন, অসুস্থ থাকার পরও জীবিকার তাগিদে জীবন বাজি রেখে সাগরে মাছ ধরতে হয়। সারা বছরের মধ্যে ছয় মাস মাছ ধরি, এরমধ্যে যদি আবারও ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা হয়, তাহলে আমাদের পথে বসা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না, না খাইয়া থাকতে হইবে।  

তিনি আরও বলেন, ইলিশ প্রজনন মৌসুমে ২২ দিন বিরত থাকি, এছাড়া সরকারের সব আইন আমরা মানিয়া চলি। ৬৫ দিনের এ আইন মোগো প্যাডে লাথি মারছে। এ আইন মোরা মানতে গেলে ঘরের লোকজন নিয়া না খাইয়া মরতে হইবে।  
২০১৫ সালের সংশোধিত ১৯ ধারার গেজেট
১৯৮৩ সালের মেরিন ফিশারিজ আইনের ১৮ ধারায় ২০১৫ সালের সংশোধিত ১৯ ধারার গেজেট অনুযায়ী ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত গভীর সমুদ্রে মাছ ধরা বন্ধ থাকবে। যা উপকূলীয় এলাকায় এ বছরই প্রথম কার্যকরের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে প্রচারণ-প্রচারণা চালানো হচ্ছে। তবে এ আইনটি উপকূলীয় জেলেদের গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা এ আইন মানতে চান না। ইতোপূর্বে এ আইনের বিরোধিতা করে পাথরঘাটাসহ উপকূলীয় ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতিসহ বিভিন্ন মৎস্য সংগঠন মানববন্ধন, স্মারকলিপি ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে।

বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সদস্য গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, প্রতি বছর ১ জ্যৈষ্ঠ থেকে ৩০ আশ্বিন পর্যন্ত জেলেরা গভীর সমুদ্রে মাছ ধরে। ইলিশের জাল সাড়ে ৩ ইঞ্চি থেকে সাড়ে ৪ ইঞ্চি ফাঁস। যা বেআইনী নয়। এ জালে শুধু বড় ইলিশই ধরা পড়ে। কিন্তু আমাদের জেলেদের ওপর ৬৫ দিনের অবরোধ সম্পূর্ণ হয়রানিমূলক। এ জালে ছোট বা পোনা মাছের কোনো ক্ষতি করে না।  

তিনি আরও বলেন, প্রতি বছর জেলেরা ইলিশের প্রজনন মৌসুমে ২২ দিন নিষেধাজ্ঞার সময় মাছ ধরা থেকে বিরত থাকে। ৬৫ দিনের এ নিষেধাজ্ঞার কারণে উপকূলীয় জেলেদের মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে।

গোলাম মোস্তফা বলেন, কয়েকদিন আগে আমরা মৎস্য প্রতিমন্ত্রী, মন্ত্রণালয় সংসদীয় কমিটির সভাপতি এবং বরগুনা-২ আসনের সংসদ সদস্যসহ উপকূলীয় এলাকার বেশ কযেকজন সংসদ সদস্যদের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা হয়েছে। তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন খুব শিগগিরই এ আইনের ব্যাপারে সরকারের উচ্চ পর্যায় প্রস্তাব দেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯২০ ঘণ্টা, মে ২১, ২০১৯
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।