ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

উপকূল থেকে উপকূল

মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা

সহায়তা নেই বলে জেলেপাড়ায় শঙ্কার মেঘ

শফিকুল ইসলাম খোকন, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১২৭ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০১৯
সহায়তা নেই বলে জেলেপাড়ায় শঙ্কার মেঘ

প্রান্তিক উপকূল ঘুরে এসে: পূর্বে বিষখালী, পশ্চিমে বিশ্ব ঐতিহ্য ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন ঘেঁষা বলেশ্বর নদ আর দক্ষিণে অথৈ বঙ্গোপসাগর। উপকূলীয় উপজেলা পাথরঘাটা। এখানকার ৯৫ শতাংশ মানুষই সরাসরি মাছ ধরা এবং ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এ অঞ্চলের প্রতি জেলেই জীবনবাজি রেখে সাগরে মাছ শিকার করতে যায়। 

পেটের দায়ে আর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে একটু ভালো থাকা বা খাওয়ার জন্যই সাগরযাত্রা করে তারা। একদিন মাছ শিকার না করলে পরের দিন চুলায় আগুন জ্বলে না।

পেটের দায়ে মানুষ সব কাজ করে। চাকরি-বাকরি, ঠিকাদারি, ব্যবসা, দিনমজুরি ইত্যাদি।

তবে ২০ মে থেকে ৬৫ দিন মাছ ধরায় সরকারি নিষেধাজ্ঞার ফলে জেলেপাড়ায় আক্ষেপ ঝরছে জনে জনে। বিশেষ করে মাছ শিকার যেখানে জীবিকা নির্বাহের প্রধান উপায়, সেখানে এই মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা দিলেও সরকারি কোনো সহায়তা না মেলায় না খেয়ে থাকার আশঙ্কায় ভুগছেন অনেকে।  

বিষখালী নদী ঘেঁষা উপকূলীয় উপজেলা পাথঘাটার পূর্ব বাদুরতলা গ্রাম। এ গ্রামের ৯৫ শতাংশ মানুষ মাছ শিকার করে। উপকূলীয় এ প্রান্তিক জনপদে ঘুরে দেখা যায়, মৎস্যনির্ভর মানুষদের চোখে-মুখে শঙ্কার মেঘ ভর করছে।  

গ্রামের বৃদ্ধরা বলছেন, স্বাধীনতার আগে ও পরে অভাব দেখেছেন তারা। ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার কারণে সেই রকমের অভাব দেখতে পাচ্ছেন তারা। নিষেধাজ্ঞার সময়ে বিকল্প সহায়তা বা আয়ের সুযোগ থাকলে এই শঙ্কায় ভুগতে হতো না তাদের।

৬৫ দিনের মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা ২০ মে থেকে শুরু হয়েছে। চলবে আগামী ২৩ জুলাই পর্যন্ত। এ অবস্থায় উপকূলজুড়ে জেলে পরিবারে হাহাকার শুরু হয়েছে।
উপকূলীয় উপজেলা পাথঘাটার পূর্ব বাদুরতলা গ্রামের জেলেরা
পাথরঘাটা উপজেলার পদ্মা গ্রামের জেলে পল্লি বনফুল গুচ্ছগ্রামের ৭৫ বছর বয়সী হানিফ হাওলাদার কোমরে গামছা বেঁধে জাল মেরামত করছেন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘হায়রে ৬৫ দিন! এবার বুঝি ৬৫ দিনেই জীবনডা শেষ হইয়া যাইবে। সংসারের অবস্থা খুবই খারাপ। একদিন মাছ না ধরলে সংসার চলে না। এহন তো ৬৫ দিনের মধ্যে কেবল চারদিন গেলো। এতেই দুইদিন ভাত রানতে পারে নাই। পান্তা ভাত খাইয়া রোজা রাখছি। ’

জেলে আ. জলিল মাঝি ও জালাল মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, ‘মোগো কপালে যা আছে তাই অইবে। এমনিতেই গরিব মানুষ, কাম না কইরা খাইতে পারি না। ৬৫ দিন অবরোধের কারণে এহন প্যাডে পাথর আর কোমরে গামছা বান্ধা ছাড়া উপায় নাই। ’ 
বরগুনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বাংলানিউজকে বলেন, ২০১৫ সালে জারি হওয়া এ আইন বাস্তবায়নের জন্য মৎস্য বিভাগের পক্ষ থেকে প্রচার চালানো হচ্ছে। আইন অমান্য করে যারা মাছ শিকার করে, তাদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নিষেধাজ্ঞা চলাকালে জেলেদের কোনো সহায়তা দেওয়া হবে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত সহায়তা দেওয়ার কোনো খবর আমাদের কাছে নেই।

বাংলাদেশ সময়: ২১২৭ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০১৯
জিপি/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।