ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

উপকূল থেকে উপকূল

উপকূলের জেলে জীবন

শূন্য ভাগির ঈদ আনন্দও শূন্য!

শফিকুল ইসলাম খোকন, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২০১ ঘণ্টা, জুন ৩, ২০১৯
শূন্য ভাগির ঈদ আনন্দও শূন্য!  মেরামত করছেন একজন জেলে। ছবি: বাংলানিউজ

প্রান্তিক জনপদ বনফুল জেলেপল্লি ঘুরে এসে: ঈদ মানেই আনন্দ, ঈদ মানেই খুশি। বছর ঘুরে আসে মুসলমানদের বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। এই ঈদের দিনের আনন্দ থেকে কেউ বঞ্চিত হয় না বা হতে চায় না। মা-বাবা, স্ত্রী-পুত্র পরিজনসহ আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয় মানুষ। ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়া স্বাভাবিক ব্যাপারে। কিন্তু ঠিক তার উল্টোটা হয় উপকূলীয় উপজেলা পাথরঘাটার উপকূলের জেলেপল্লিতে।

প্রতিবছরের মতো এবছরও জেলেপল্লিদের ঈদের আনন্দ বইবে না। জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞাই তাদের জন্য আরও কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ঝড়, জলোচ্ছ্বাস কিংবা জলদস্যু; সবকিছুই মোকাবিলা করে থাকতে হয় উপকূলের বাসিন্দাদের। আর জীবিকার জন্য জীবন বাজি রেখে প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে অথৈ সাগরে যেতে হয় মাছ শিকারে। ভাগ্য ভালো হলে ভালো ভালো মাছ নিয়ে ঘরে ফেরা সম্ভব হয়, আর না হলে ঝড় বা দস্যুর কবলে পড়ে হতে হয় নিখোঁজ বা মৃত। এতো প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বাপ-দাদার মতো মাছ ধরাকেই পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন এখানকার মানুষ। দিনরাত হাড়ভাঙা শ্রম দিয়ে যে মাছ ধরেন তা দিয়ে কোনো মতে চলে তাদের সংসার।

উপকূলীয় পাথরঘাটা উপজেলায় ৯৫ শতাংশ মানুষই মৎস্য পেশার উপর নির্ভরশীল। বাপ-দাদার পেশা ছাড়তে পারছে না এখানকার মানুষরা। বাপ-দাদার ঐতিহ্য ধরে রাখতেই মৎস্য নির্ভর থাকেন তারা। মাছ না ধরা পড়লে তাদের পকেটে টাকা আসে না। আর টাকা না থাকলেও ঘরের চুলায় আগুনও ধরে না। অভাবে সংসারে প্রতিদিনের খাবার যোগাতেই দায়... ঈদের আনন্দ নিয়ে তাদের ভাবার বা আনন্দ ভাগাভাগি করতে স্বাদ থাকলেও সাধ্য নেই।

প্রতিটি ট্রলারে ২০ থেকে ২২ জন শ্রমিক মাছ ধরতে যায় গভীর সমুদ্রে। কোনো কোনো ট্রলারে এর চেয়ে কমও থাকে। ১৬ শতাংশের মধ্যে ১০ শতাংশ মালিকপক্ষের আর ৬ শতাংশের ৩ শতাংশ পায় মাঝি ২০ থেকে ২২ জন জেলে পায় বাকি ৩ শতাংশ সমান অংশে ভাগ হয়।

এখানকার প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী তাদেরকে ‘শূন্যভাগি’ বলা হয়ে থাকে। শূন্যভাগিদের কথিত মতে, ‘এবার তাদের ঈদ আনন্দও শূন্য’জেলেপল্লির কয়েকজন জেলে।  ছবি: বাংলানিউজকথা হয়, পদ্মা গ্রামের বনফুল জেলেপল্লির মো. ফারুক হোসেনের সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিবছর ইলিশের প্রজনন মৌসুমে ২২ দিন মাছ ধরা থেকে বিরত থাকলেও বাকি সারাবছরই মাছ ধরি। যা দিয়ে সংসার চলে। কিন্তু ৬৫ দিনের অবরোধ আমাদের হাতে টাকা নেই। ঈদের আনন্দও নেই আমাদের মধ্যে। জমা টাকাও নেই যা দিয়ে পোলা মাইয়ারে নতুন জামা কাপড় দিমু।

অপর জেলে মো. আনছার মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, মোরা শূন্যভাগি, তাই শূন্যের কাতারেই রয়ে গেলাম। মাছ ধরতে না পারা এবং হাতে জমা টাকাও না থাকায় এবার ঈদ আনন্দও শূন্য হয়ে যাবে।

পদ্মা গ্রামের আমেনা বেগম বলেন, ঈদ দিয়া কি হরমু। সংসার চলায় দায়...। মোর স্বামীর আয় নাই, টাহাও নাই। এবার ঈদের জামা-কাপুড় কিনতে পারমুনা।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০১ ঘণ্টা, জুন ০৩, ২০১৯
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।