ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২ আশ্বিন ১৪৩২, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

ক্রিকেট

সাক্ষাৎকারে হ্যারি টেক্টর

‘বাংলাদেশ বা কোনো জায়গার ক্রিকেটারই ভাগ্যবান না’

মাহমুদুল হাসান বাপ্পী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট (স্পোর্টস) | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯:৪৭, মার্চ ১৭, ২০২৩
‘বাংলাদেশ বা কোনো জায়গার ক্রিকেটারই ভাগ্যবান না’

‘আগেরবার যেটা ধরতে পারিনি, এমন একটা ক্যাচ দাও’ হ্যারি ট্যাক্টর বললেন এমন। অসাধারণ সব ক্যাচ নিচ্ছিলেন, তবুও দুয়েকটা মিস হলেই বারবার জানতে চাচ্ছিলেন কোথায় ভুল তার।

ক্রিকেটের সঙ্গে সখ্যতা ছোটবেলা থেকেই, দুই ভাই ক্রিকেট খেলেন; খেলেছেন বাবাও।  নিবেদনে ঘাটতি নেই একটুও। যত দিন যাচ্ছে, হ্যারি ক্রিকেটটা উপভোগ করছেন আরও বেশি করে।

প্রায় ঘণ্টাখানেক শুধু ফিল্ডিং অনুশীলন করেছেন। অপেক্ষা করিয়ে রাখায় এসেই বললেন ‘সরি’। এরপর হ্যারি কথা বলেছেন ইউরোপ ও উপমহাদেশের ক্রিকেট, টি-টোয়েন্টি ও ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ, সাকিব আল হাসান ও নানা বিষয়ে। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বসে আয়ারল্যান্ডের ক্রিকেটারের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলানিউজের মাহমুদুল হাসান বাপ্পি...

বাংলানিউজ: ক্রিকেট তো বোধ হয় আপনার পরিবারেই?

টেক্টর: হ্যাঁ, আমি স্কুলে যখন যাই ৭-৮ বছর বয়সে। তখন আমাদের রাজ্যের একটা ক্রিকেট ক্লাব এসেছিল ওখানে ক্রিকেটার খুঁজতে। পছন্দ হয়েছিল ব্যাপারটা। আমার বাবাও শৈশবে ওই ক্লাবে খেলেছিল। ভীষণ ভালোবেসেই শুরু করি ক্রিকেট খেলা। এমনিতে আমার পুরো পরিবারই ক্রিকেটের জন্য পাগল।

বাংলানিউজ: বাজে একটা রেকর্ডের ব্যাপারে বলে নিই আগেভাগে। চার ম্যাচে তিনটা সেঞ্চুরি করেছিলেন। সবগুলোতেই আয়ারল্যান্ড হেরে গিয়েছিল। কেবল পঞ্চম ব্যক্তি হিসেবে আপনি এমন রেকর্ডে...

টেক্টর: কী বলেন, জানতাম না! এমন কিছু হলে নিশ্চয়ই কারোই ভালো লাগবে না, আমারও লাগছে না। দল হারলে তো কারোই ভালো লাগে না আসলে। কিন্তু আমার মনে হয় ক্রিকেটার হিসেবে কাজ হলো রান করে যাওয়া, এর বাইরের কিছুতে নজর না দেওয়া। কিছুদিন ধরে আমি সেটা করতে পারছি সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছেয়।

কিন্তু অবশ্যই ভালো ফল আছে অনেক। আমি যখন সেঞ্চুরি করি, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুই ম্যাচেই একদম শেষ বল ও এক রান বাকি থাকতে হেরে যাই। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেও শেষ বলে হেরেছিলাম। আশা করি এ বছর অনেক রান করতে পারবো আর আয়ারল্যান্ড ম্যাচ জিতবে।

বাংলানিউজ: আপনার জীবনে খারাপ সময় তো পরেও এসেছে। ২০২১ বিশ্বকাপের একাদশে ছিলেন, বিশ্বকাপের ঠিক পরে বাদ পড়েছেন স্কোয়াড থেকেই। মানসিকভাবে নিশ্চয়ই অনেক বড় ধাক্কা ছিল?

টেক্টর: এটা আমি ভয়ঙ্করভাবে নিয়ে নিয়েছিলাম। প্রায় তিনদিন সাড়াশব্দই ছিল না বলতে গেলে। মেনে নেওয়াটা ভীষণ কঠিন হয়ে গিয়েছিল আমার জন্য। এরপর নিজেকে সামলেছি আস্তে আস্তে। তৈরি হয়েছি নিজেকে মেলে ধরার সুযোগের অপেক্ষায়...

বাংলানিউজ: ফিরে তো এলেনও...

টেক্টর: হ্যাঁ, এসে চারে ব্যাট করা শুরু করলাম। আমার এমন একটা অনুপ্রেরণাই দরকার ছিল। এটা সম্ভবত এমন কিছু, যেটা আমার খুব বেশি দরকার ছিল।

বাংলানিউজ: আয়ারল্যান্ডে ক্রিকেট খেলা নিশ্চয়ই একটু কঠিন। ওখানে আপনারা যারা ক্রিকেট খেলেন, নিজেদেরকে কীভাবে মোটিভেটেড রাখেন?

টেক্টর: আমি নিশ্চিত না। অবশ্যই আয়ারল্যান্ডে এটা সবচেয়ে বড় বা জনপ্রিয় খেলা না। কিন্তু দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে। বড় জায়গায়, ছোট জায়গায়; সবখানে ছড়িয়ে পড়ছে। আমি নিজেকে কীভাবে মোটিভেট রাখতে পারি- সেটা হয়তো কিছুটা বলতে পারবো আপনাকে। আমি কত ভালো খেলোয়াড় হতে পারবো, সেটা হওয়াই আমাকে সবসময় তাড়না দেয়। একদম নিজের সর্বোচ্চ অবস্থায় পৌঁছাতে চাই। আমি নিশ্চিত আমাদের ড্রেসিংরুমের সবারও একই অবস্থা।

এই দলের সঙ্গে খেলতে পারা খুব রোমাঞ্চকর একটা ব্যাপার। অনেক অনেক সম্ভাবনা আছে আমাদের। অভিজ্ঞতা ও তারুণ্যের দারুণ মিশেল আছে। অভিজ্ঞরা অনেক দিন হলো খেলছে। এই সিরিজটা তাই রোমাঞ্চর হবে বলে আশা করছি। সবাই এক হয়ে খেলতে পারলে বাংলাদেশকেও হারাতে পারবো।

বাংলানিউজ: পৃথিবীর এই প্রান্তে যখন আসেন, মানে উপমহাদেশে। এত দর্শক, এমন ক্রেজ। একটু কী আফসোস কাজ করে?

টেক্টর: আহ...এটা তো অবশ্যই যে এমন দর্শক বা ক্রেজ আয়ারল্যান্ডে থাকলে সেটা অসাধারণ ব্যাপার হতো। কিন্তু এটাই আমাদের চ্যালেঞ্জ, আয়ারল্যান্ডে ক্রিকেটটাকে আরও বেশি ছড়িয়ে দেওয়ার। পৃথিবীর এই প্রান্তে এসে অথবা সব জায়গায় ভালো খেলে, ভালো ফল নিয়ে, ম্যাচ জিতে আয়ারল্যান্ডে ক্রিকেটকে ছড়িয়ে দিতে হবে আমাদের। বিশ্বকাপে ভালো করলে দেশের ভেতর খেলা নিয়ে আলোচনা হবে। এটাকে বরং চ্যালেঞ্জ হিসেবেই দেখছি আমি। আশা করি ভালো ক্রিকেট খেলেই আয়ারল্যান্ডে ক্রিকেট ছড়িয়ে দিতে পারবো।

বাংলানিউজ: উপমহাদেশের ক্রিকেটারদের কি আপনার একটু ভাগ্যবান মনে হয়?

টেক্টর: আমার মনে হয় না ‘ভাগ্যবান’ শব্দটা পুরোপুরি ঠিক হবে এখানে। এটাই আসলে ‘স্ট্যান্ডার্ড’। আমাদের এই ধরনের ফ্যাসিলিটিজ থাকা উচিত ছিল। এগুলো আমাদের কাছে অসাধারণ ব্যাপার কারণ দেশে এমন কিছু নেই। কিন্তু আমার মনে হয় না বাংলাদেশের অথবা অন্য কোনো প্রান্তের ক্রিকেটাররাই ‘ভাগ্যবান’।

কারণ ছেলেরা ভালো ক্রিকেট খেলেই এতদূর এসেছে, এখানে আসতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে; যতই তাদের গ্রাসরুড ভালো হোক বা অনুশীলন সুবিধা বেশি থাকুক। আশা করি ক্রিকেট আয়ারল্যান্ড আগামী কয়েক বছরে এমন ফ্যাসিলিটিজ করতে পারবে। তাহলে হয়তো প্রতিদিনই অনুশীলন করতে পারবো!

বাংলানিউজ: ইউরোপ আর উমহাদেশের ক্রিকেটে এমনিতে কী পার্থক্য দেখেন?

টেক্টর: আমার মনে হয় এদিকটাতে পেসের চেয়ে স্পিনটা বেশি শক্তিশালী। আয়ারল্যান্ড বা ওদিকে এটা একদম উল্টো। এটাই বোধ হয় সবচেয়ে বড় পার্থক্য। এদিকে আসলে আপনার স্পিনের বিপক্ষে ভালো হতে হবে।

বাংলানিউজ: টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটকে আপনি কীভাবে দেখেন?

টেক্টর: ভালো প্রশ্ন...আমি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলতে ভালোবাসি, এটা অসাধারণ। খুবই রোমাঞ্চকর ফরম্যাট। খেলে মজা, দেখতেও ভালো লাগে। এখানে খেলার জন্য মুখিয়ে আছি। বিপিএলে দেখেছি, অনেক দর্শক হয়েছে, খুব ভালো উইকেটও ছিল। হাই স্কোরিং ম্যাচ হয়েছে। প্রথমবারের মতো এমন কিছুর অভিজ্ঞতা নিতে তর সইছে না।

বাংলানিউজ: বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলেছেন। এটা আপনার খেলায় কীভাবে সাহায্য করে?

টেক্টর: অনেক অনেক বেশি। বিভিন্ন ধরনের কন্ডিশনে, আলাদা দল, ভিন্ন সংস্কৃতিতে খেললে আপনার উন্নতি হবেই। অনেক কিছু জানতে পারবেন নিজের ক্রিকেট সম্পর্কে, এমনকি আপনি ব্যক্তি হিসেবেও নিজের সম্পর্কে আরও জানতে পারবেন। এরপর এই অভিজ্ঞতা জাতীয় দলে নিয়ে আসবেন।

আপনার স্ট্যান্ডার্ড তখন এক ধাপ এমনিতেই বেশি থাকবে। আমাদের দলেই এমন আছে, পল স্টার্লিং অনেকদিন ধরেই এই কাজ করছে, এখনও সুন্দরভাবে করেছে। এটা আমাকেও অনুপ্রাণিত করে। এটা দারুণ ব্যাপার যে আয়ারল্যান্ডের ক্রিকেটাররা এমন লিগে খেলছে, ভালোও করছে, তাদের অভিজ্ঞতা বাড়ছে। এটা জাতীয় দলেও ভালো করতে সাহায্য করছে আমাদের।

এসব টুর্নামেন্টে হয় কী, আশেপাশে সব ভালো খেলোয়াড়রা থাকে। আপনি যখন তাদের সঙ্গে সময় কাটাবেন, অনেক কিছু এমন শুনবেন যা কখনো শুনেননি; এমনকি ক্রিকেটের বাইরের ব্যাপারেও। এমন সব জিনিস ভাবনায় আসবে, যেটা কখনো দেখেনওনি। ওসব লিগের ক্রিকেটারদের শুধু দেখে দেখেই অনেক কিছু শেখা যায়।

বাংলানিউজ: টি-টোয়েন্টি খেললেও টেস্ট নিয়ে নিশ্চয়ই আপনার একটু আফসোস আছে। ২৬টা টি-টোয়েন্টি খেলেছেন, পঞ্চাশের বেশি ওয়ানডে। কিন্তু এখনও টেস্ট খেলতে পারেননি...

টেক্টর: আমার অভিষেকের পর আসলে আমরা টেস্টই খেলিই তো নি... কোনো আফসোস নেই। রোমাঞ্চকর ফরম্যাট এটা। এ বছর আমরা ব্যস্ত সময় কাটাবো, কয়েকটা টেস্টও খেলার কথা। দেখার ব্যাপার এই ফরম্যাটের জন্য আমার খেলা আসলে কোন পর্যায়ে আছে।

বাংলানিউজ: টেস্টকে সবাই-ই ক্রিকেটের ‘পাইওনিওর’ বলে। ফরম্যাটটার ব্যাপারে আপনার ভাবনা কী?

টেক্টর: খুবই রোমাঞ্চকর ফরম্যাট। যখন সাদা পোশাক গায়ে তুলবো, স্বপ্ন সত্যি হওয়ার মতো ব্যাপার হতে হবে। আগেও বলেছি কয়েকবার। ছোটবেলা থেকেই টেস্ট খেলার স্বপ্ন দেখে বেড়ে উঠেছি।

বাংলানিউজ: বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে আপনার ধারণা কেমন?

টেক্টর: একটু আগেও আপনাকে বলেছি, বিপিএলে দর্শক দেখে অভিভূত হয়েছি। এখানকার সমর্থকরা অসাধারণ। বাংলাদেশ দল খেলছেও খুব ভালো। বিশেষত ঘরের মাঠে তারা ভয়ঙ্কর। সম্প্রতিই ইংল্যান্ডকে হারিয়েছে, এর আগে ভারতকেও; তাদের সঙ্গে খেলতে মুখিয়েই আছি।

বাংলানিউজ: সর্বশেষ সিরিজ দেখলে সাকিব আল হাসানকেও নিশ্চয়ই দেখেছেন। আপনাদের জন্যও বড় চ্যালেঞ্জ হওয়ার কথা...

টেক্টর: আমার মনে হয় আগেও কয়েকবার খেলেছি তার বিপক্ষে। সে বিশ্বমানের অসাধারণ খেলোয়াড়। অনেক দিন ধরে জাতীয় দলকে সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছে। অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার সমৃদ্ধ। আমরা যদি সিরিজ জিততে চাই, তাহলে তার জবাব তৈরি রাখতে হবে। আমাদের ব্যাটার ও বোলারদের জন্য তাকে খেলা হবে খুবই চ্যালেঞ্জিং একটা ব্যাপার।

বাংলানিউজ: তার সঙ্গে কি কথা বলার ইচ্ছে আছে?

টেক্টর: সম্ভবত হ্যাঁ। যদিও নিশ্চিত না সে আমাকে চেনে কি না বা বোলিংয়ের কথা জানে নাকি...। তবে কথা বলবো।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৭ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০২৩
এমএইচবি/এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।