বাংলাদেশের ওয়ানডে দলে ফিনিশারের ভূমিকায় কে খেলবেন, তা নিয়ে একধরনের সুস্থ প্রতিযোগিতা দেখা যাচ্ছে। যা অক্টোবরে ভারতের মাটিতে শুরু হতে যাওয়া ওয়ানডে বিশ্বকাপে দলের জন্য বেশ ইতিবাচক বলে মনে করেন সাকিব আল হাসান।
ঘরের মাটিতে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ থেকেই সাত নম্বরে ব্যাট করানো হচ্ছে মেহেদী হাসান মিরাজকে। মূলত ফিনিশার হিসেবেই ভাবা হয় এই পজিশনের ব্যাটারকে। টিম ম্যানেজমেন্ট মিরাজকে এই ভূমিকাতেই দেখতে চায়। সাতে নেমে ৫ ম্যাচ খেলে ৯২ স্ট্রাইক রেট ও ৩৭ গড়ে রান করেছেন এই অলরাউন্ডার।
এর আগে আফিফ হোসেন ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে একই পজিশনে ব্যাট করতে দেখা গেছে। কিন্তু তারা এই ভূমিকায় সেভাবে সফল হতে পারেননি। আফিফ ১২ ইনিংসে রান করেছেন ৭৪ স্ট্রাইক রেটে। তাছাড়া ইংল্যান্ডে আইরিশদের বিপক্ষে ফিরতি সিরিজে ইয়াসির আলী রাব্বিকেও উড়িয়ে আনা হয়েছিল। কিন্তু একাদশে জায়গা হয়নি তার। তবে রাব্বি ও নুরুল হাসান সোহান কয়েকটি ম্যাচে সাতে ব্যাট করেছিলেন। কিন্তু প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেননি।
নিকট অতীতে ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবালও কয়েকটি ব্যাটিং পজিশন নিয়ে প্রতিযোগিতার কথা বলেছিলেন। এর মধ্যে সাত নম্বর পজিশন একটি। সাকিব আল হাসানও বিষয়টি নিয়ে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। তার মতে, নির্বাচকদের জন্য এটা একটা মধুর সমস্যায় পরিণত হয়েছে। যা দলের জন্য ভালো খবর। এশিয়া কাপের আগে আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজও খেলবে বাংলাদেশ। ফলে পজিশন নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করার সুযোগ এখনও রয়ে গেছে। সাকিব আশা প্রকাশ করেন, বিশ্বকাপের আগেই পজিশনগুলো নির্দিষ্ট হয়ে যাবে।
গতকাল ইংল্যান্ডে এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে সাকিব কথা বলেন, 'প্রতিযোগিতা কিন্তু একজনের না, বেশ অনেকজনের। প্রতিটা খেলোয়াড়ই ওইখানে পারফর্ম করছে। ঘরোয়া ক্রিকেট দেখেন আফিফ আছে; মোসাদ্দেক, সোহান, রিয়াদ ভাই অসাধারণ খেলেছে, দলের সঙ্গে রাব্বি আছে, মিরাজ সাতে ব্যাটিং করছে। একটা জায়গার জন্য ৬-৭ জনের অপশন। সিদ্ধান্তটা খুবই সহজ না। আমি নিশ্চিত বিশ্বকাপের জন্য কন্ডিশন, প্রতিপক্ষ মাথায় রেখে নির্বাচক, অধিনায়ক, কোচ সঠিক সিদ্ধান্তই নেবে। '
সাকিব আরও বলেন, 'আমি আসলে নির্বাচক না, ডিসিশন মেকিংয়ের অংশও না। আমার জন্য বলা মুশকিল। কিন্তু দল নিয়ে আমি খুশি এবং আমি নিশ্চিত যারাই এই দলে থাকবে তারা তাদের জায়গা থেকে ১৭ কোটি মানুষকে প্রতিনিধিত্ব করবে এবং বাংলাদেশের জন্য সেরাটাই দেয়ার চেষ্টা করবে। সাম্প্রতিক সময়ে অনেক খেলোয়াড়ই প্রতিনিধিত্ব করেছে, আর এক বিভাগ থেকে তো আপনি ১১ জনকে পাবেন না। আপনি ২-৩ জনে খুশি থাকতে পারবেন। ৮টা বিভাগ থেকে দুজন করে আসলেও ১৬ জন আসে। '
গত কয়েকটি বিশ্বকাপে যেসব ভুলের কারণে ভালো অবস্থানে থাকতে পারেনি বাংলাদেশ; সেসব চিহ্নিত করা এবং সেগুলো শুধরে নেওয়ার ওপর জোর দিয়ে সাকিব বলেন, 'এগুলো তো সবই প্রাথমিক পর্যায়। এখানে যে ভুলগুলো হচ্ছে কিংবা যে ভালো জিনিসগুলো হচ্ছে এসবই বিশ্বকাপ বা এশিয়া কাপ থেকে ঠিক হওয়া শুরু হবে। আমাদের সামনে খুব বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচও নেই। আমি নিশ্চিত কোচ, অধিনায়ক এসব চিহিৃত করে। তারা খুবই ভালো চিন্তা করে যে কোন জায়গাতে আরও ভালো করলে আরও একটু ভালো হতো। আমি নিশ্চিত কখনই কোনো দলের নেতা, দেশের প্রধান দেশের জন্য বা দলের জন্য খারাপ চায় না। তাদের ইন্টেনশন কখনই খারাপ থাকে না। সিদ্ধান্ত ঠিক, ভুল সবই হতে পারে। '
বিশ্বকাপেই মূল কম্বিনেশনটা ঠিক হবে বলে মনে করেন সাকিব। সেই সঙ্গে অনেক সিদ্ধান্ত প্রতিপক্ষ কন্ডিশনকে ভেবেও নিতে হবে। বাংলাদেশ দলে এখন আসলে ট্রায়াল চলছে বলে মনে করেন টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক, 'সিদ্ধান্তটা আগে হয়, রেজাল্টটা পরে। আমি নিশ্চিত কোচ, অধিনায়ক, নির্বাচক, সিদ্ধান্ত প্রণেতা যারা আছে তারা সবাই ভালো ভালো চিন্তা করবে। বিশ্বকাপ আমাদের আসল কম্বিনেশনটা তৈরি হবে দল, প্রতিপক্ষ কন্ডিশনের ওপর নির্ভর করে। কোনো মাঠ আছে চার পেসার খেলতে হবে, কোনো মাঠে দুই পেসার খেলবে, কোনো মাঠ আছে ৬ জন বোলার নিয়ে খেলতে হবে। আবার কোনো মাঠে ৫ জন বোলারই যথেষ্ট। যখন সিদ্ধান্ত নেয়া হয় তখন অনেক কিছুই আসলে চিন্তা করতে হয়। এগুলো শুধু ট্রায়াল চলছে। '
বাংলাদেশ সময়: ১৩২০ ঘণ্টা, মে ১৬, ২০২৩
এমএইচএম