একজন ফিল্ডারই রাখা হয়েছিল বাউন্ডারিতে। তার হাতেই ক্যাচ তুলে দিলেন আগের ইনিংসে দলের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক মুমিনুল হক।
চট্টগ্রাম টেস্টের দুই ইনিংসেই অবশ্য এমন অবিশ্বাস্য ব্যাটিংই করেছে বাংলাদেশ। যে উইকেটে ৫৭৫ রান করে ইনিংস ঘোষণা করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা, সেখানে দুই ইনিংস মিলিয়েও বাংলাদেশ করতে পারেনি এর অর্ধেক। ভুলে যাওয়ার মতো একটা সিরিজের সমাপ্তি ঘটেছে করুণ পরিণতিতে।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের শেষটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ইনিংস ও ২৭৩ রানে হেরেছে বাংলাদেশ। ৬ উইকেট হারিয়ে ৫৭৫ রান করে ইনিংস ঘোষণা করে প্রোটিয়ারা। পরে প্রথম ইনিংসে ১৫৯ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ১৪৩ রান করে অলআউট হয় বাংলাদেশ।
চট্টগ্রামে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের শেষটিতে মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেট হারিয়ে ৫৭৫ রান করে ইনিংস ঘোষণা করে সফরকারীরা। জবাব দিতে নেমে বাংলাদেশ ১৫৯ রানে হারিয়ে ফেলে সবগুলো উইকেট। ৪১৬ রানে পিছিয়ে থেকে খেলতে নেমে দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৩ রান তুলতে বাংলাদেশ হারিয়ে ফেলেছে চার উইকেট।
তৃতীয় দিনের শুরুটা অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর সঙ্গে করেন মুমিনুল হক। এ দুজনের ওপরই নির্ভর করছিল বাংলাদেশের শুরুর সময়টা। অধিনায়ক শান্ত অবশ্য তৃতীয় দিনে সাজঘরে ফিরতে সময় নিয়েছেন স্রেফ চার ওভার।
কাগিসো রাবাদার অফ স্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা দিয়ে আউট হন শান্ত। ১৭ বলে তিনি করেন ৯ রান। টানা অফ ফর্মের সঙ্গে অধিনায়কত্ব ছাড়া ইস্যুতে বেশ চাপেই আছেন শান্ত, সেটি হয়তো আরও বাড়বে এই ইনিংস বা ম্যাচের পর।
পরের ওভার করতে আসেন ড্যান প্যাটারসন। তার তৃতীয় বলে মুখোমুখি হয়ে আউট হয়ে যান মুশফিক। স্কয়ার লেগে দাঁড়ানো টনি ডি জর্জির হাতে তিনি ক্যাচ দেন দুই বল খেলে কোনো রান করার আগেই। রাবাদা নিজের পরের ওভারে এসে তুলে নেন দুই উইকেট।
শুরুটা করেন মেহেদী হাসান মিরাজকে দিয়ে। আরও এক ব্যাটার রাবাদার বলে ক্যাচ দেন উইকেটের পেছনে। ৩ বলে ১ রান করেন মিরাজ। কিপিংয়ে ভালো সময় কাটাতে না পারা অভিষিক্ত মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন এরপর এলবিডব্লিউ হন রাবাদার বলে।
৪৮ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে ফেলার পর ঘরের মাঠে সর্বনিম্ন সংগ্রহে অলআউট হওয়ার শঙ্কা জেগেছিল বাংলাদেশের। ২০০২ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ঢাকায় ৮৭ রানে অলআউট হয়েছিল তারা। ২২ বছর পর তেমন কিছুর পুনরাবৃত্তি হতে দেননি তাইজুল ও মুমিনুল।
তাদের জুটিতে ভর করে মধ্যাহ্নভোজের বিরতিতে যায় বাংলাদেশ। বিরতি থেকে ফেরার পর অবশ্য স্থায়ী হয়নি স্বস্তি। মুমিনুল হক আউট হলে তার সঙ্গে তাইজুলেরর শত রানের জুটি ভেঙে যায়। ১৭২ বলে ১০৩ রানের এই জুটি ভাঙেন মুত্তুস্বামী।
১১২ বলে ৮২ রান করে এলবিডব্লিউ হন তিনি। দশ নম্বর ব্যাটার হিসেবে খেলতে নামা তাইজুল ৯৫ বলে ৩০ রান করে কেশভ মহারাজের বলে ক্যাচ দেন তার হাতেই। ১৫৯ রানে অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ। তাদেরকে ফলো অন করানোর সিদ্ধান্ত নেয় প্রোটিয়ারা।
কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসেও এখন অবধি সুবিধা করতে পারছে না তারা। শুরুটা হয় সাদমান ইসলামকে দিয়ে। প্রথম ছয় ওভার সাবধানেই খেলেন দুই ওপেনার। কিন্তু এরপরই ড্যান পিটারসনের বলে ফের উইকেটের পেছনে কাইল ভেরাইনাকে ক্যাচ দেন সাদমান। ১৬ বলে ৬ রান আসে তার ব্যাট থেকে।
কিছুক্ষণ পর দ্বিতীয় স্লিপে ক্যাচ তুলে দিয়েও বেঁচে যান জাকির হাসান। কিন্তু উইকেট যাওয়ার মিছিল থামেনি। ৩১ বলে ১১ রান করে ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয় মাতুসামির বলে ক্যাচ দেন স্লিপে। আগের ইনিংসে দলের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক মুমিনুল হকও ক্যাচ দেন শূন্য রানে।
এরপর মনে হচ্ছিল সেশনের বাকি থাকা অল্প সময়টুকু পার করে দিতে পারবেন জাকির হাসান ও নাজমুল হোসেন শান্ত। কিন্তু তাও হয়নি। চা বিরতির ঠিক আগের বলে স্টাম্পিং হয়ে গেছেন জাকির।
চা বিরতির পর ফিরে অবস্থা আরও খারাপ হয় বাংলাদেশের। ২ বলে দুই রান করে মুতাসামির বলে এলবিডব্লিউ হন মুশফিকুর রহিম। পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ জেতানো ১৯১ রানের ইনিংসের পরের দশ ইনিংসে তার কোনো হাফ সেঞ্চুরিও নেই।
দলের এমন অবস্থায় হাল ধরতে পারেননি মেহেদী হাসান মিরাজ, নাজমুল হোসেন শান্তও। ১৯ বলে ৬ রান করে মহারাজের বলে ট্রিস্টান স্টাবসের হাতে ক্যাচ দেন মিরাজ। ৫৫ বলে ৩৬ রান করে শান্ত শিকার হন মুতাসামির।
তাদের বিদায়ের পর তৃতীয় দিনেই বাংলাদেশের হারটা একরকম অবধারিতই হয়ে যায়। সেটি তারা হয়েছেও। ৩৬ বলে ৩৭ রান করে অপেক্ষা বাড়ান মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন ও হাসান মাহমুদ। ৬৪ বলে ২৯ রান করে আউট হন অঙ্কন। ৩০ বলে ৩৮ রান করে অপরাজিত থাকেন হাসান মাহমুদ।
বাংলাদেশ সময় : ১৬৫৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩১, ২০২৪
এমএইচবি/এএইচএস