ডেভিড রাডারের লেখা ‘র্যালি রাউন্ড দ্য ওয়েস্ট ইন্ডিজ’ কি আপনিও গেয়েছিলেন? প্রশ্নটা শুনেই হেসে ফেলেন স্টিভেন টেলর। আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে তিনি চলে এসেছেন রংপুর রাইডার্সের হয়ে বিপিএল খেলতে।
কিন্তু এর আগে ক্রিকেটই ছিল তার ধ্যানজ্ঞান। জ্যামাইকায় থাকতেন, দেশটার ক্রিকেটের শীর্ষস্তরের জন্য পরীক্ষাও দিয়েছিলেন, কিন্তু পেরে ওঠেননি। তবে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমানোর পরও ক্রিকেটই ছিল তার সঙ্গী। প্রতি রোববার ক্রিকেট খেলতেন।
সিলভানের সেই অধরা স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন ছেলে স্টিভেন। বাস্কেটবল, বেসবল বা ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড; সবকিছুতে সরব উপস্থিতি থাকলেও তার ভালোবাসা ক্রিকেটকে ঘিরেই।
এমনই নিয়তি, সেই ক্রিকেট গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে জ্যামাইকায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে নামিয়ে দিয়েছিল তাকে। প্রশ্নটা আদতে সেখান থেকেই, ম্যাচের আগের ওয়েস্ট ইন্ডিজের জাতীয় সংগীতে (র্যালি রাউন্ড দ্য ওয়েস্ট ইন্ডিজ) কি সুর মিলিয়েছিলেন টেলরও?
উত্তরটা তিনি দিয়েছেন এভাবে, ‘আমি কিছুটা গেয়েছি, কিন্তু এটা কেবল আমার মনের মধ্যেই ছিল। দিনশেষে আমি আমেরিকান। এখানেই জন্মেছি, বেড়ে উঠেছি। সবসময় দেশকে ভালোবাসি। কিন্তু বাবা-মায়ের দেশের জন্য একটা ভালো লাগা তো থাকেই। ’
ক্রিকেটের স্বপ্ন বোনা হয়তো সহজ। কিন্তু বাস্তবতা বেশ কঠিনই যুক্তরাষ্ট্রে। বৃহৎ অর্থনীতির দেশে শুরুর দিকে ‘টাকা-পয়সা মেলে না’ ক্রিকেটে। টেলর অবশ্য বলেন, ‘এটাই আমার পেশা। যদি তুমি আমাকে তোমার হয়ে খেলতে দেখতে চাও, টাকা দিতে হবে। ’
কিন্তু এত এত সম্ভাবনার দেশ যুক্তরাষ্ট্র। বহু মানুষের জন্য স্বপ্নেরও। দুয়ারেরও অভাব হওয়ার কথা নয় নিশ্চিতভাবেই। তবুও কেন ক্রিকেট বেছে নিলেন স্টিভেন? তার উত্তরের এক শব্দের প্রকাশ হয়তো এই— স্বপ্ন।
‘ক্রিকেট সবসময়ই স্বপ্নের ব্যাপার ছিল আমার জন্য। বেড়ে ওঠার সময় বাবাকে দেখেছি ক্রিকেট খেলছেন, আমিও তার মতো হতে চাইতাম। দিনশেষে আমি বাস্কেটবল, ফুটবল, ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডে ছিলাম। কিন্তু আমার ভালোবাসা ক্রিকেটের জন্যই ছিল। ’
পৃথিবীর অনেক বাঁক-বদলের পেছনে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নাম। অনেক খেলার অর্থনীতিরও রূপান্তর হয়েছে এখানকার বাজারে। আইসিসিও একই আশা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আয়োজন করেছিল বিশ্বকাপ। কিন্তু সত্যিই কি কোনো বদল আসবে?
টেলরের উত্তর, ‘যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীর শীর্ষ দেশগুলোর একটি। তারা যখন একটা খেলা ধরে, মাল্টি-মিলিয়ন খেলা হয়ে যায়। আপনি বাস্কেটবল, বেসবল, ফুটবল এগুলো দেখেন; সবই মাল্টি-মিলিয়ন স্পোর্টস। ক্রিকেটও সেই জায়গায় যেতে পারে। এটা দারুণ একটা ব্যাপার হবে তরুণদের জন্য। ’
ব্রায়ান লারা ও ক্রিস গেইল ছিলেন টেলরের কাছে নায়কের মতো। কাইল মেয়ার্স বা কার্লোস ব্র্যাথওয়েটদের সঙ্গে বেড়ে উঠেছেন। টিভি পর্দায় তাদের দেখেছেন বিশ্বকাপেও। গত বছর নিজের স্বপ্নও পূরণ করেছেন।
টেলরের কাছে সেই অনুভূতি, ‘আমার জীবনের অন্যতম সেরা অভিজ্ঞতা। ছেলেবেলা থেকে যখন কেউ বেড়ে ওঠে, সবাই বিশ্বকাপ খেলতে চায়। এটাই সবচেয়ে বড় মঞ্চ। সবগুলো মহাদেশের মানুষই বিশ্বকাপ দেখে, ফুটবল থেকে বাস্কেটবল; সবাই চায় বিশ্বমঞ্চে নিজেকে দেখতে। যখন সবাই আমাকে বিশ্বকাপে খেলতে দেখেছে, এটা দারুণ একটা অনুভূতি। ’
টেলর কখনো নিজের স্বপ্ন পূরণ করেন, কখনো বাবার। আটলান্টিক অথবা ক্যারিবিয়ান সমুদ্র পাড়ি দেন ক্রিকেটের জন্য। তার কঠিন পথ সহজ হয় হয়তো ভালোবাসার দায়ে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের ক্রিকেটারদের ভবিষ্যৎ?
টেলর জানান কঠিন, একই সঙ্গে সম্ভাবনাময়ও। যুক্তরাষ্ট্রে ক্রিকেট যে নতুন দিশা খুঁজছে, তাতে ক্রিকেটাররাও আলোর দেখা পাবেন বলে মনে করেন তিনি। হয়তো জানেন, দরজাগুলো খুলে গেলে ক্রিকেট নিয়ে স্বপ্ন তৈরিতে পাড়ি দিতে হবে না আটলান্টিক কিংবা ক্যারিবিয়ান। স্বপ্নেরা ডানা মেলবে যুক্তরাষ্ট্রেও।
বাংলাদেশ সময় : ২০১৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০২৫
এমএইচবি/এএইচএস