বিশ্বকাপে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে মেলবোর্ন শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। তবে ম্যাচের ফল যাই হোক মাশরাফি বাহিনী ঠাঁই করে নিচ্ছেন ইতিহাসের পাতায়।
সম্মানজনজক পরাজয় প্রত্যাশা করে অতীতে এ ধরনের ম্যাচের প্রিভিউ লিখতেন আমাদের অগ্রজ সাংবাদিকেরা। অধিনায়কদের ম্যাচ পরিকল্পনা ছিল ৫০ ওভার ব্যাটিং করে এবং বিপক্ষ দলের জয়টা কোনরকমে যেন বিলম্ব করা যায়।
অন্যদিকে শক্তিশালী বিপক্ষ দলের অধিনায়ক ক্রিকেটীয় সহমত বজায় রেখে বলতেন, বাংলাদেশকে আমরা হাল্কাভাবে নিচ্ছি না। সেই সান্ত্বনা নিয়ে পরের দিন খেলতে নামত বাংলাদেশ। কিন্তু এখন অন্যরকম বাংলাদেশ।
মাশরাফিরা এখন উল্টো বলে, আমরা জয়ের জন্যে খেলব। এই প্রজন্মের সাংবাদিকদের লিখনীর মধ্যেও থাকে স্বপ্ন পূরণের প্রত্যাশার সুর। বিপক্ষ দলের অধিনায়করাও হিসেব কষেন টাইগারদের নিয়ে। যেমন, আজ মেলবোর্ন লঙ্কান অধিনায়ক অ্যাঞ্জেলা ম্যাথুজ বলেই বসলেন, ‘ওদের দলে বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডার রয়েছে, বেশ কয়েকজন ভালো ব্যাটসম্যান। তারা যেকোন সময় পাল্টে দিতে পারে ম্যাচের চেহারা। ’
তার মানে হালের বাংলাদেশ মানেই এখন বিপক্ষ দলের জন্যে সহজ সমীকরণ নয়, উল্টো টাইগাররা সমীকরণ পাল্টে নতুন হিসেব করতে বাধ্য করে ক্রিকেট দুনিয়াকে।
অবশ্য মেলবোর্নর ম্যাচের আগে টাইগার টিম ম্যানেজম্যান্টকে অনাকাঙ্খিত কিছু হিসেব মেলাতে হয়েছে। শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে আল আমিনকে বহিষ্কারের পর তার জায়গায় নিয়েছেন আরেক পেসার সফিউল ইসলাম। অন্যদিকে আঙ্গুলে চোট পেয়ে ভয় পাইয়ে দিয়েছিলেন মুশফিকুর রহিম, তবে এখন তিনি শঙ্কামুক্ত। লঙ্কানদের বিপক্ষে উইকেট কিপিং না করলেও ব্যাটিংতো অবশ্যই করবেন।
তবে বাংলাদেশের জন্য শ্রীলঙ্কা চেনা প্রতিপক্ষ। ২০১২ সালে এশিয়া কাপে মাহেলাদের হারিয়ে ফাইনালের সমীকরণ মিলিয়েছিল মুশফিক, মাশরাফি, সাকিবরা। বিশ্বকাপ মঞ্চে হিসেবটা আরো সহজ। কাল যদি লঙ্কানদের হারিয়ে দেয় তাহলে পুল ‘এ’ তে কোয়ার্টারফাইনালে জায়গা করে নেওয়া খুব সহজ হয়ে যাবে। আবার হেরেও গেলেও শেষ আটে জায়গা করে নেওয়ার সুযোগটাও হাতছাড়া হয়ে যাবে না।
তবে এ ম্যাচে টিম ম্যানেজম্যান্টের চাওয়া একটাই, রানে ফিরুক টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানেরা।
টাইগার অধিনায়কের মাশরাফি একজন বাড়তি পেসার নিয়ে খেলার ইঙ্গিত দিয়েছেন। সে ক্ষেত্রে আট ব্যাটসম্যান এবং তিন পেসার এবং এক স্পিনার নিয়েই একাদশ গড়া হতে পারে। ফলে আগের ম্যাচের একাদশে কোনো পরিবর্তন নাও আসতে পারে।
সে বিবেচনায় লঙ্কানদের উপরই চাপটা বেশি। কাল যদি হেরে যায় তবে তাদের কোয়ার্টার ফাইনালের সমীকরণ মেলানোর কাজটি কিছুটা কঠিন হয়ে যাবে। এমনও হতে পারে গ্রুপের চার নম্বর দল হিসেবেই শেষ আটে জায়গা পেতে হবে লংকান সিংহদের। অন্যদিকে মালিঙ্গা, হেরাথদের সময়টাও ভালো যাচ্ছে না। ফর্মে নেই কুমারা সাঙ্গাকারা।
মাহেলা জয়াবর্ধনের সেঞ্চুরি এবং থিসেরা পেরেরার শেষ দিকের ব্যাটিংয়ে আফগান দুর্ঘটনা থেকে রেহাই পায় ৯৬ এর বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।
ইদানিং লংকানদেরও চাপে ভেঙে পড়ার প্রবণতা তৈরি হয়েছে। যদি কালও তার ব্যতিক্রম না হয়, তাহলে আগাম উৎসবের প্রস্তুতি নিতেই পারেন টাইগার সমর্থকরা।
সম্ভাব্য একাদশ বাংলাদেশ: তামিম ইকবাল, এনামুল হক বিজয়, সৌম্য সরকার, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান, সাব্বির রহমান, মুমিনুল হক, মাশরাফি বিন মর্তুজা, রুবেল হোসেন, তাসকিন আহমেদ।
সম্ভাব্য একাদশ শ্রীলঙ্কা: তিলকারান্তে দিলশান, লাহিরু থিরামান্নে, দিমুথ কুরনারন্তে, কুমারা সাঙ্গাকারা, মাহেলা জয়াবর্ধনে, অ্যাঞ্জেলা ম্যাথুস, থিসেরা পেরেরা, দুষমন্ত চামারা, রঙ্গনা হেরাথ, লাসিথ মালিঙ্গা, সুরঙ্গা লাকমল।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৫