ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

জাতীয় দলে নিয়মিত খেলতে চান ছন্দা

স্পোর্টস টিম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০১৫
জাতীয় দলে নিয়মিত খেলতে চান ছন্দা ছবি: দেলোয়ার হোসেন বাদল / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বিকেএসপি থেকে ফিরে: জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি উপজেলার মেয়ে সুরাইয়া আজমিম ছন্দা। বাবা-মা আর দুই বোনের পরিবারে ছোট তিনি।

বাবা পেশায় ব্যবসায়ী আর মা চাকরী করেন। বাবা মা’র অকৃত্তিম স্নেহ ও ভালবাসায় বেড়ে উঠেছেন পাঁচবিবি উপশহরের মায়াময় পরিবেশে। ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেটের প্রতি অদম্য ঝোঁক থাকায় জয়পুরহাট জেলা নারী ক্রিকেটের হয়ে নিয়মিতই খেলতেন তিনি।

ব্যাট-বলের সঙ্গে দারুণ সখ্যতা ছিল বলে ছন্দা ক্রিকেটেই নিজের ক্যারিয়ার গড়তে চেয়েছিলেন। হঠাৎ একদিন বিকেএসপিতে জেলা পর্যায়ে নারী ক্রিকেটার নেয়া হবে এরকম ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দেখে অংশ নেন ট্রায়ালে। তিনি জানান, ‘প্রথম ট্রায়ালেই টিকে গেলাম, এরপর ক্যাম্পে ডাক পেলাম। প্রথম ক্যাম্প ছিল এক মাসের। দ্বিতীয়টি দুই মাসের এবং সাত দিনের তৃতীয় ক্যাম্প শেষে যোগ দিলাম বিকেএসপিতে’।

তবে, বিকেএসপিতে যোগ দেয়ার পথটি ছন্দার জন্য খুব বেশি মসৃণ ছিলনা। তিনি জানান, ‘প্রাথমিকভাবে বাধ সাধে আমার পরিবার। মায়ের সম্মতি থাকলেও বাবার সম্মতি ছিল না। আর বাবা সম্মতি না দেয়ায় কয়েকদিন খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দিলাম। তাতেও যখন কাজ হচ্ছিল না, তখন পড়ালেখা আর করব না বলে হুমকি দিলাম। এতে কাজ হলো। ব্যাস, ভর্তি হয়ে গেলাম। ’

২০১১ সালে বিকেএসপিতে অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তি হন ছন্দা। ভর্তির পর একে একে কাটিয়ে দিয়েছেন চারটি বছর। ২০১৬’তে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষে বের হবেন বিকেএসপি জীবন শেষ করে। এখান থেকে বের হয়ে খেলতে চান জাতীয় দলে। বাংলাদেশ জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের হয়ে ২০১৩ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ৮টি ক্যাম্পে অংশ নিয়েছেন ছন্দা। তবে, এখনো জাতীয় দলের হয়ে খেলা হয়নি। গেল সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ নারী দলের পাকিস্তান সিরিজের স্কোয়াডে তিনি স্ট্যান্ডবাই ছিলেন। আর জাতীয় দলের বাইরে  খেলেছেন প্রিমিয়ার লিগ, ডিভিশন লিগ ও জেলা ক্রিকেট লিগ।

ক্রিকেটার হিসেবে বেছে নিয়েছেন মিডিয়াম পেস বোলিংকে। দেশি আইকন ক্রিকেটারদের মধ্যে ছেলেদের তালিকায় আছেন তাসকিন আহমেদ ও মেয়েদের মধ্যে জাহানারা আলম।

ছন্দা সবশেষ খেলা পেশাদার লিগে বল হাতে প্রতিপক্ষের স্ট্যাম্পে চিড় ধরিয়েছেন বরিশাল বিভাগের হয়ে। জানালেন, ‘প্রথম ম্যাচেই ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছি। ৪ ওভার বল করে ১ মেডেন ও ৮ রান খরচায় নিয়েছি ৩ উইকেট। ’

এর বাইরেও বল হাতে কম যাননি এই বাঘিনী বোলার। প্রিমিয়ার লিগে বিকেএসপির হয়ে খেলে ইতোমধ্যেই ক্যারিয়ারে তিন তিনটি হ্যাটট্টিক করেছেন। তবে, সাম্প্রতিক সময়ে নিজের পারফরমেন্সে ততটা তুষ্ট নন ছন্দা।

পারফরমেন্স ছন্দাকে যতটা না কষ্ট দেয় তার চাইতে অনেক বেশি কষ্ট দেয় অভিশপ্ত ইনজুরি। খেলোয়াড়ি জীবনে এ পর্যন্ত একবার হাঁটুর ইনজুরিতে পড়ে প্রায় আড়াই মাস থেকেছেন মাঠের বাইরে। খেলার বাইরে থাকার মতো বাজে পরিস্থিতি আর কিছু হতে পারেনা জানান ছন্দা। তার কাছে ইনজুরিতে থাকার সব চাইতে কষ্টকর সময়টি হলো, যখন সতীর্থরা অনুশীলন করে আর তা বসে বসে দেখতে হয়। ওই সময় মনে হয় জীবন থেকে যেন তিনি পিছিয়ে যাচ্ছেন।

ছন্দার ইনজুরি নিয়ে কষ্টের শেষ এখানেই নয়, একবার ইনজুরিতে পড়ায় তার ভেতরে ভয় ঢুকে গেছে। ফলে স্বভাবসিদ্ধ বোলিং করা হয়ে উঠছে না এমনকি স্বাভাবিকভাবে ডাইভও দিতে পারছেন না। কারণ, পুরোনো ইনজুরির ব্যথা যে কোন সময় ফিরে আসার ভয় থাকছে।

ইনজুরি ছন্দাকে বিষন্নতায় ভোগালেও চাঙা করে তোলে বিকেএসপির পরিবেশ, কোচ ও  সহপাঠীদের আন্তরিকতা এবং ক্রিকেটার হিসেবে পাওয়া সুযোগ সুবিধা। পরিপূর্ণ একজন ক্রিকেটার হয়ে উঠতে যেসব সুযোগ সুবিধা প্রয়োজন,  তার সবই ছন্দা বিকেএসপিতে পাচ্ছেন। জীবন ধারণের জন্য যেমন পাচ্ছেন মনোরম পরিবেশ, চিকিৎসা, মানসম্মত খাবার তেমনি অনুশীলনের জন্য পাচ্ছেন উপযোগী মাঠ, নেট, গ্রাউন্ড ও অভিজ্ঞ কোচিং স্টাফ। শুধু তাই নয়, খেলোয়াড়দের জন্য বিকেএসপির বিদ্যমান নিয়ম তাকে রীতিমতো রোমাঞ্চিত করে।

বিকেএপসির জীবন নিয়ে মনোভাব ব্যক্ত করতে গিয়ে ছন্দা একটানা বলেন, সকাল ৫টায় ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়ি। নামাজ শেষে সকাল সাড়ে ৬টায় অনুশীলনের জন্য সোজা মাঠে চলে যাই। সাড়ে ৮টা পর্যন্ত অনুশীলন শেষে হোস্টেলে ফিরে সকালের নাস্তা করি। নাস্তার পর্ব শেষ করে ক্লাসের উদ্দেশ্যে কলেজে যাই। ক্লাস শেষে ডাইনিং এ গিয়ে লাঞ্চ সেরে রুমে এসে যদি মনে হয় বিশ্রাম প্রয়োজন, তাহলে একটু বিশ্রাম নিয়ে আবার অনুশীলনে যাই। কখনো কখনো আবার বিশ্রামের প্রয়োজন হয়না। দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দিনের দ্বিতীয় অনুশীলন শেষ করে সন্ধ্যায় আবার ক্লাসে যাই, ক্লাস শেষে রাতের খাবারের উদ্দেশ্যে আবার ডাইনিং, ডাইনিং শেষে একটু টিভি দেখে রুমে এসে ঘুমিয়ে পড়ি।

এভাবেই সুশৃঙ্খল নিয়মে বিকেএসপিতে দিন কেটে যাচ্ছে ছন্দার। তবে, ভাল একজন  ক্রিকেটার হতে সবাইকে যে বিকেএসপিতে আসতে হবে তা তিনি মনে করেন না। কারণ হিসেবে জানান, নিজের ভেতর থেকে ক্রিকেট শিখলে সেটা যেখানেই হোক না, তা বিফলে যায়না।

উদীয়মান এ বোলারের মতে, সবার আগে নারী ক্রিকেটারদের প্রতি বিদ্যমান দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করতে হবে। ক্রিকেট বোর্ডের সহায়তার হাত আরও বাড়াতে হবে এবং বেশি বেশি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ম্যাচের আয়োজন করতে হবে, তাহলেই এগিয়ে যাবে এদেশের নারী ক্রিকেট।

বাংলোদেশ সময়: ২০৪০ ঘণ্টা, ১৯ অক্টোবর ২০১৫
এইচএল/এমআর           

** সুমনার অনুপ্রেরণার নাম সালমা
** হকিতে হতাশ নন সিফাত
** মায়ের অনুপ্রেরণায় বিকেএসপিতে সাইফ
** বিকেএসপি’তে আরও জনবল প্রয়োজন
** দেশসেরা খেলোয়াড়রা বিকেএসপি’র আবিষ্কার
** গতিশীল হচ্ছে বিকেএসপি’র আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র
** এগিয়ে যাচ্ছে বিকেএসপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।