ঢাকা: খুব ছোটবেলাতেই সাথিরা জাকির জেসি মনছবি দেখেছিলেন ক্রিকেটার হওয়ার। জেসি যখন ক্লাস থ্রি’র ছাত্রী বাংলাদেশ দল তখন আইসিসি ট্রফি খেলতে মালয়েশিয়ায়।
ছোটবেলার স্বপ্ন বাস্তব রূপ নেয় ২০১১ সালে। সাভারের বিকেএসপিতে বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে নামেন লাল-সবুজ জার্সি গায়ে। এটি প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ হলেও জাতীয় দলে খেলেছেন ২০০৭ সাল থেকে। বর্তমানে জাতীয় দলে না খেললেও ক্লাব ক্রিকেটে রাজত্ব জেসিরই। একাধারে রুপালি ব্যাংক ক্রীড়া পরিষদের অধিনায়ক, ম্যানেজার, কোচও তিনি!
ক্রিকেটার হওয়ার তীব্র বাসনা জেসিকে পরিচয় করাচ্ছে অনেকগুলো পরিচয়ে। ছাত্রী হিসেবে ভালো হওয়ায় বাবা-মা চেয়েছিলেন ক্যাডেট কলেজে পড়াতে। কিন্তু জেসির প্রতিজ্ঞা ‘ক্রিকেটারই হবো’। একরকম জেদ করে পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে ২০০২ সালে ভর্তি হন বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (বিকেএসপিতে)। মেয়েদের ক্রিকেট ডিসিপ্লিন না থাকায় শুটিংয়ে নাম লেখান। সেখানেও আসে সাফল্য। হয়ে ওঠেন জাতীয় শুটার।
জেসি তখন বিকেএসপি’র দশম শ্রেণির ছাত্রী। খবর পান, বাংলাদেশ ওমেন্স ক্রিকেট টিম গঠন হচ্ছে। বিকেএসপিতে থেকে এসএসসি পাশ করে চলে আসেন ঢাকায়। সুযোগ পান ঢাকা জেলা দলের হয়ে খেলার। এরপরই ডাক আসে জাতীয় দলে। বাংলাদেশ দলের সহ-অধিনায়কও হয়েছিলেন জেসি। ২০১৩ সালে বাংলাদেশ দলের হয়ে সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন এই ক্রিকেটার।
জেসির মুখ থেকেই শুনুন শুরুর সে সময়কার কথা, ‘১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ দল যখন আইসিসি ট্রফি খেলতে যায় তখন থেকেই ক্রিকেট জ্ঞান শুরু। তখন আমার প্রিয় ক্রিকেটার মোহাম্মদ রফিক। ছক্কা মারতেন বলে বেশি পছন্দ করতাম তাকে। আমি তার জার্সি নম্বর (৭৭ নম্বর) জড়িয়েই খেলি। ছোটবেলায় ছেলেদের সাথে ক্রিকেট খেলতাম। একটাই লক্ষ্য ছিল ক্রিকেটার হবো...ক্রিকেটার হবো। আল্লাহর রহমতে হতে পেরেছি। ’
বর্তমান জাতীয় দলে জেসি না থাকলেও ক্রিকেটে জেসির পদচারণা দিন দিন বাড়ছেই। সদ্য শেষ হওয়া ওমেন্স প্রিমিয়ার লিগে নেতৃত্ব দিয়ে রুপালি ব্যাংক ক্রীড়া পরিষদকে এনে দিয়েছেন শিরোপা। দ্বিতীয়বার অংশ নিয়েই চ্যাম্পিয়ন। প্রথমবার রানার্সআপ। সেখানেও ছিল জেসির ভূমিকা।
শুধু মাঠের নেতৃত্বই নয়। দল গড়া, খেলোয়াড়দের পেমেন্ট, দলের ম্যানেজার এমনকি ‘অলিখিত’ কোচ হিসেবেও জেসি রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। ধীরে ধীরে ক্রিকেটার জেসি হয়ে উঠছেন সংগঠকও ‘টিমের ক্যাপ্টেন ছিলাম, বলতে গেলে ম্যানেজার ও কোচ ছিলাম। দলের জন্য আমি নিজেই ভারত থেকে কোচ নিয়ে এসেছি। অল্প সময়ে ভারতের কোচ দলের সব ক্রিকেটারকে বুঝে উঠতে পারবেন না বলে, অনেক সিদ্ধান্তই আমার কাছ থেকে যেত। আমাদের টিমের অফিসিয়ালরা ব্যাংকার। তো তারা ব্যাংক ছেড়ে অনেক বেশি সময় টিমের পেছনে দিতে পারেননি। এজন্য ম্যানেজমেন্টের কাজও আমাকে করতে হয়েছে। আর মাঠে ক্যাপ্টেন্সি তো করতেই হয়েছে। ক্যাপ্টেন হিসেবে সবার তো চাওয়াই ছিল যেন ভালো পারফরম্যান্স করি। এজন্য চ্যালেঞ্জ বেশি ছিল। আল্লাহর রহমতে ভালো করেছি। সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি হয়েছি। আমার রুপালি ব্যাংকের সানজিদা লিগের সর্বোচ্চ রান করেছে। রুমানা প্লেয়ার অব দ্য টুর্নামেন্ট হয়েছে। ব্যক্তিগত তিনটা কীর্তিই আমাদের প্লেয়ারদের। দলও চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। সব মিলিয়ে দারুণ একটা মৌসুম শেষ হলো। ’
দারুণ সব প্রতিভার কারণে বিসিবি থেকে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের সঙ্গে কাজ করার প্রস্তাবও পাচ্ছেন জেসি। তবে এখনই না। সাংগঠনিক কাজে আরও পরিপক্ক হয়ে নারী ক্রিকেটের উন্নয়নে কাজ করতে চান ২৫ বছর বয়সী এই তারকা।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৫ ঘণ্টা, ০১ জুলাই ২০১৬
এসকে/এমআরপি