ঢাকা: মাত্র একটি জয়, যা থলিতে পুরতে পারলেই ইংলিশদের বিপক্ষে প্রথম ও ঘরের মাটিতে টানা সপ্তম ওয়ানডে সিরিজ জয়ের অনন্য রেকর্ডটি নিজেদের করে নিতে পারবে টিম বাংলাদেশ। আর মাশরাফিদের অনন্য এই জয়ের পথে আশার আলো ছড়াচ্ছে ‘লাকি’ ভেন্যু চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের অতীত রেকর্ড।
২০১১ সালের ১১ মার্চ এই মাঠে এই ইংল্যান্ডের বিপক্ষেই ২ উইকেটের জয়ে বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো ইংলিশদের হারের লজ্জা দিয়েছিল বাংলাদেশ। এরপর ২০১৩ সালে সফরকারী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্টে এখানেই মুমিনুল হক খেলেছিলেন ক্যারিয়ার সেরা ১৮১ রানের চোখ ধাঁধাঁনো ইনিংস।
একই ম্যাচে বিশ্বের প্রথম বোলার হিসেবে সোহাগ গাজী থলিতে পুড়েছিলেন হ্যাটট্রিকসহ ৬ উইকেট ও অপরাজিত সেঞ্চুরি (১০১)’র অনন্য রেকর্ড। শুধু কি তাই? ২০১৫ সালের জুলাইয়ে তিন ম্যাচ সিরিজের শেষটিতে শক্তিশালী দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৯ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়ে প্রথমবারের মতো দলটির বিপক্ষে সিরিজ জয়ের শেষ হাসি হেসেছিল টাইগাররা। ২০০৯ সালের রেকর্ডতো আরও আশা জাগানিয়া। জিম্বাবুয়েকে ৪৪ রানে অলআউট করে তৃতীয় সর্বনিম্ন ওয়ানডে সংগ্রহের লজ্জার রেকর্ডটিও এই মাঠেই দিয়েছিলেন সাকিব...রাজ্জাকরা।
সঙ্গত কারণেই বুধবার (১২ অক্টোবর) ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ নির্ধারণী এই ম্যাচেও জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে স্বাগতিক বাংলাদেশই ‘ফেভারিট’ একথা চোখ বন্ধ করে বলা যায়।
‘লাকি’ ভেন্যুতে সিরিজ জয়ে মাশরাফিরা যদি তাদের স্বাভাবিক খেলাটি খেলতে পারেন, তাহলে কাজটি আরও সহজ হবে বলে মনে করেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের টেকনিক্যাল কমিটির উপদেষ্টা শফিকুল হক হীরা, ‘বেশি কিছু লাগবে না, দ্বিতীয় ওয়ানডের ধারাবাহিকতা ধরে রাখলেই হবে। ’
এদিকে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডে দিয়ে টাইগার একাদশে ফিরেছেন অলরাউন্ডার নাসির হোসেন। আর তার ফেরাকে দলের জন্য বিশেষ কিছু হিসেবেই দেখছেন হীরা, ‘নাসির হোসেনের অন্তর্ভুক্তি বাংলাদেশ দলের চেহারাই বদলে দিয়েছে। ’
ইংলিশদের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো ওয়ানডে সিরিজ জয়ের দারুণ সুযোগ বাংলাদেশের সামনে। সুবর্ণ এই সুযোগটিকে কাজে লাগাতে এই ক্রিকেট বোদ্ধা বাতলে দিলেন টাইগারদের করণীয়। এক্ষেত্রে প্রথমেই তিনি গুরুত্বারোপ করলেন টেলএন্ডারদের ব্যাটিং লাইন আপের উপর। যেখানে সাত নম্বরে নাসিরকে, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতকে আট ও মাশরাফিকে নয় নম্বরে ব্যাটিংয়ের পরামর্শ দিলেন।
বোলিং লাইন আপের ক্ষেত্রে জানালেন, ‘তাইজুলকে খেলাতে হলে একজন পেসারকে বাদ দিতে হবে। সেক্ষেত্রে যে নামটি আসছে সেটি হলো...শফিউল। কেননা তাসকিন ভালো করছে, মাশরাফিতো আছেই। আর যদি সিমিং কন্ডিশন হয় তাহলে তিনজন পেসার খেলানো উচিত। তবে উইনিং কম্বিনেশন রাখা ভালো। স্পিনে সাকিব আছে। ওদেরও বাঁহাতি ব্যাটসম্যান আছে, তাই নাসির ও মোসাদ্দেককে দরকার হবে। তবে এখন যে কম্বিনেশনটি আছে সেটাই সেরা। ’
ফিল্ডিং? ‘গত ম্যাচের মতো করলেই হবে’ বলে জানালেন হীরা।
হীরা ব্যাটিংয়ে ওপেনার তামিমকে পরামর্শ দিলেন এভাবে, ‘অবশ্যই ভালো খেলতে হবে। যেহেতু চিটাগংয়ের ছেলে তাই নিজের মাঠের সুবিধা ওর আদায় করে নেয়া উচিত। পুল শটগুলো শতভাগ কাজে লাগাতে হবে। বাংলাদেশের ইনিংসটি ওকেই গড়তে হবে। ’
‘মুশফিককে স্লগ সুইপটা সাবধানে খেলতে হবে। কারণ স্লগ সুইপ থেকে ছয় মারার মতো যথেষ্ট শক্তি সে পাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না। প্রথম শটে ছয় মারলেও দ্বিতীয়টি ঠিকই বাউন্ডারি লাইনে ধরা পড়বে। সেক্ষেত্রে তাকে কবজির টেকনিক প্রয়োগ করে খেলতে হবে। কবজি রোল করাতে হবে। ’-যোগ করেন হীরা।
ইমরুল, সাব্বির ও রিয়াদের ব্যাপারে হীরার মন্তব্য, ‘ইমরুল স্বাভাবিক খেলাটি খেললেই হবে। সাব্বির আফগানিস্তানের বিপক্ষে যে ইনিংসটি খেলেছে তেমন আরেকটি ইনিংস খেললে চলবে। রিয়াদ ঠিক আছে। ’ আর সাকিবের প্রসঙ্গে বললেন ‘ওকে ভালভাবে হাল ধরতে হবে। ইনিংস গড়তে হবে। সাকিব যখন নামবে, তখন হয়তো ২৫ ওভার বাকি থাকবে। তখন সতর্ক থেকে খেললে দল বড় ইনিংস সংগ্রহ করতে পারবে। ’
‘লাকি’ ভেন্যু আর হীরার বাতলে দেয়া পরামর্শ দিয়েই পঞ্চম ইংলিশ বধের উন্মাদনায় মেতে উঠুক টিম বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১০ ঘণ্টা, ১১ অক্টোবর ২০১৬
এইচএল/এমআরপি