ঢাকা: প্রত্যাশা ছিল ‘লাকি’ গ্রাউন্ড দিয়েই সফরকারী ইংলিশদের বিপক্ষে প্রথমবারের মত ওয়ানডে সিরিজ জয়ের শেষ হাসি হাসবে বাংলাদেশ, কপালে পড়বে ঘরের মাঠে টানা সপ্তম সিরিজ জয়ের তিলক। কিন্তু সেটা আর হলো না!
শেষ পর্যন্ত সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে বাংলাদেশকে ৪ উইকেটে হারিয়ে ২-১ এ সিরিজ নিজেদের করে নেয় ইংল্যান্ড।
বাংলাদেশের দেয়া ২৭৮ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর যখন সফরকারীরা টপকে যায় ৬ উইকেটের বিনিময়ে, তখন তাদের হাতে ছিল আরও ১৩টি বল। এই হারের মধ্য দিয়ে ইংলিশদের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের অপেক্ষা বাড়লো লাল-সবুজের দলের।
অবশ্য বুধবার (১২ অক্টোবর) চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে ইংলিশদের কাছে টস হেরেও ব্যাট হাতে দারুণ ইতিবাচক ছিলেন দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েস। এই দুই হার্ড হিটারের রসায়নে টাইগারদের স্কোর লাইন যেভাবে এগুচ্ছিলো তাতে হয়তো অনেকেই ভেবেছিলেন দলীয় রান বুঝি ছুয়ে যাবে ৩শ‘ কিংবা কিংবা তারও বেশিতে।
তবে দলীয় ৮০ রানের সময় প্রথম পা হড়কালেন ইমরুল। ব্যক্তিগত ৪৬ রানে তিনি ফেরেন আদেল রশিদের বলে জেমস ভিন্সের হাতে ক্যাচ দিয়ে। অবশ্য দ্বিতীয় উইকেটে তামিম-সাব্বিরের মারমুখী ব্যাটিং তখনও স্বপ্ন দেখাচ্ছিল লাল-সবুজের দলকে।
কিন্তু পরিস্থিতি পাল্টে গেল যখন ব্যক্তিগত ৪৫ রানে নিজের উইকেটটি বদলি খেলোয়াড় ডসনের হাতে তুলে দিলেন তামিম। এরপর ৬ রানে রিয়াদের বিদায়ে পুরোপুরি ব্যাকফুটে ঠেলে দেয় বাংলাদেশকে।
অবশ্য চতুর্থ উইকেটে সাব্বির ও মুশফিক জুটি ইনিংস মেরামতের চেষ্টা চালায়। এতে কিছুটা সফলও হন তারা। কিন্তু ৪৬ বলে ৪৯ রানে দমকা হাওয়ার মত ইনিংস শেষে সাব্বির যখন বিদায় নিলেন তখন আবার নীরবতা নেমে আসে স্বাগতিক শিবিরে।
এবার বাদবাকিদের জন্য করণীয় হয়ে দাঁড়ায় চ্যালেঞ্জিং স্কোর সংগ্রহ। সেই লক্ষ্যে পঞ্চম উইকেটে সাকিব এলেন, কিন্তু পারলেন না। ষষ্ঠ উইকেটে মুশফিকের সাথে এলেন নাসির, তিনিও পারলেন না। তবে পেরেছেন মোসাদ্দেক। সপ্তম উইকেটে মুশফিকের সাথে অপরাজিত ৮৫ রানের জুটিতে দলকে তিনি এনে দেন ২৭৭ রানের চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহ।
আর মোসাদ্দেকের সাথে এই ৮৫ রানের জুটিতে প্রায় ১ বছর পর ওয়ানডেতে ৫০ রানের কোঠা পার হন মুশফিক। গেল বছরের জিম্বাবুয়ে সিরিজের পরে খেলেন অপরাজিত ৬৭ রানের ইনিংস আর মোসাদ্দেক সৈকত অপরাজিত থাকেন ৩৮ রানে।
অবশ্য ২৭৮ রানের লক্ষ্যটা মোটেই সহজ ছিল না সফরকারী ইংল্যান্ডের জন্য। অন্তত জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের অতীত রেকর্ড সে কথা বলে না। কেন না ওয়ানডে ফর্মেটে এই মাঠে এই পর্যন্ত সর্বোচ্চ ২২৬ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড আছে। সেটা অবশ্য বাংলাদেশেরই। ২০১১ সালের বিশ্বকাপে ইংলিশদের দেয়া এই লক্ষ্য তাড়া করে দলটির বিপক্ষে দ্বিতীয় জয় তুলে নিয়েছিল বাংলাদেশ।
অথচ আজ ইংলিশরা সেই কঠিন কাজটিই সম্ভবন করে ফেলে! ওপেনিং জুটিতে ৬৩ রান করে নাসির হোসেনের বলে জেমস ভিনস ফিরে গেলেও দ্বিতীয় উইকেটে বেন ডাকেটের সঙ্গে ৬৪ রানের জুটিতে দলকে শক্ত ভীত এনে দেন স্যাম বিলিংস। দলীয় ১২৭ আর ব্যক্তিগত ৬২ রানে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের বলে প্যাভিলিয়নে ফেরেন তিনি।
আজকের ম্যাচে কোনো টাইগার বোলারই তেমন কঠিন সময় উপহার দিতে পারেননি সফরকারী ব্যাটসম্যানদের। তবে তাদের মধ্যে একমাত্র ব্যতিক্রম পেসার শফিউল ইসলাম। তৃতীয় উইকেটে জনি বেয়ারস্টো ও বেন ডাকেট যখন দলকে সহজ জয়ের লক্ষ্যে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন ঠিক তখনই ব্যক্তিগত ১৫ রানে বেয়ারস্টোর অফস্ট্যাম্পে চিড় ধরিয়ে গ্যালারিতে উল্লাস ফেরালেন শফিউল। এখানেই থেমে থাকলেন না এই টাইগার পেসার। সেট ব্যাটসম্যান বেন ডাকেটকেও ৬৩ রানে তুলে দেন মুশফিকের হাতে।
তবে পঞ্চম উইকেটে জশ বাটলার ও বেন স্টোকসের ৪৮ রানের জুটি আবার ম্যাচে ফেরায় ইংলিশদের। অবশ্য ৪১তম ওভারে বল হাতে মাশরাফি এসে উইকেটে থিতু হওয়া ইংলিশ অধিনায়ক জশ বাটলারকে ২৫ আর মইন আলীকে যখন ১ রানে সাজ ঘরের পথ দেখান তখন আবার জয়ের স্বপ্ন ফেরে টাইগার শিবিরে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দিতে পারেননি টাইগার বোলাররা। সপ্তম উইকেটে ক্রিস ওকস ও বেন স্টোকসের অপরাজিত ৪২ রানের জুটিতে ৬ উইকেটের খরচায় ২৭৮ রানে সিরিজ জয়ের বন্দরে নোঙ্গর ফেলে সফরকারী ইংল্যান্ড। ক্রিস ওকস অপরাজিত ছিলেন ২৭ ও স্টোকস পরাজিত ছিলেন ব্যক্তিগত ৪৭ রানে।
বাংলাদেশ সময়:০১১২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০১৬
এইচএল/আরআই