চট্টগ্রাম থেকে: তৃতীয় দিনের খেলা শেষে টাইগারদের থেকে ২৭৩ রানে এগিয়ে সফরকারী ইংল্যান্ড। ৮ উইকেট হারিয়ে স্কোরবোর্ডে ২২৮ রান তুলেছে সফরকারীরা।
এর আগে প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ইংল্যান্ডের করা ২৯৩ রানের জবাবে দ্বিতীয় দিন শেষে টাইগারদের দলীয় সংগ্রহ দাঁড়ায় ৭৪ ওভারে পাঁচ উইকেটে ২২১ রান। প্রথম ইনিংসে ইংলিশদের থেকে ৭২ রান দূরে থেকে তৃতীয় দিন ব্যাটিং শুরু করে টাইগাররা। তৃতীয় দিন ব্যাট করতে নেমে ২৪৮ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। ইংলিশদের থেকে ৪৫ রান পিছিয়ে থেকে শেষ হয় স্বাগতিকদের ইনিংস। তৃতীয় দিন এক ঘণ্টার একটু বেশি সময় ব্যাট করে ১২ ওভারে স্কোরবোর্ডে মাত্র ২৭ রান যোগ করতে শেষ ৫ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
দ্বিতীয় দিন শেষে সাকিব আল হাসান ৩১ রানে অপরাজিত ছিলেন। অপর প্রান্তে ছিলেন শফিউল ইসলাম। শেষদিকের ‘ছন্দপতন’ আর বিপর্যয় এড়াতেই ‘নাইট ওয়াচম্যান’ হিসেবে শফিউলকে ব্যাটিংয়ে নামিয়ে দেয় টিম ম্যানেজমেন্ট। উইকেটে স্পিন বেশ কার্যকর হওয়ায় ইংলিশ দলপতি অ্যালিস্টার কুক চার স্পিনারকে দিয়ে বোলিং করান। এর আগে সবশেষ ১৯৮২ সালে কানপুরে ভারতের বিপক্ষে ইংল্যান্ড টেস্টের এক ইনিংসে চারজন স্পিনার ব্যবহার করেছিল।
শেষের দিকে ব্যাটিংয়ের অপেক্ষায় থাকা টেস্টে ‘অনভিজ্ঞ’ সাব্বির আর মিরাজকে নিয়ে বড় লিডের জন্য সাকিবের দিকে তাকিয়ে ছিল স্বাগতিকরা। অথচ দিনের শুরুতে প্রথম ওভারেই বিদায় নেন সাকিব। ‘বিদায় নেন’ লেখার থেকে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসেন লেখাটাই স্বাভাবিক। মঈন আলীর করা ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই উইকেট থেকে বেরিয়ে এসে বড় শট খেলতে চেয়েছিলেন সাকিব। বলের লাইন মিস করে আর নিজের নির্বুদ্ধিতার পরিচয় দিয়ে স্কোরবোর্ডে কোনো রান যোগ না হতেই ফেরেন তিনি। বেয়ারস্টোর কাছে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে পড়ে বিদায়ের আগে তার নামের পাশে যোগ হয় ৬২ বলে তিনটি চারে ৩১ রান।
সাকিবের বিদায়ের পর সাজঘরে ফেরেন শফিউল। আদিল রশিদের বলে বিগ শট নিতে গিয়ে স্টুয়ার্ট ব্রডের হাতে মিডঅনে ক্যাচ তুলে দেন ২৯ বলে ২ রান করা শফিউল। সাব্বির-মেহেদির দিকে বাংলাদেশ তাকিয়ে থাকলেও শফিউলের বিদায়ের কিছু পরেই অভিষিক্ত মেহেদি মিরাজ স্টোকসের বলে এলবির ফাঁদে পড়ে ব্যক্তিগত ১ রান করে সাজঘরে ফেরেন। ২৩৯ রানের মাথায় স্বাগতিকদের অষ্টম উইকেটের পতন ঘটে।
এরপর সাব্বির-তাইজুল জুটি (৯ রান) গড়ার চেষ্টা করে খুব একটা সফল হননি। স্লিপে দাঁড়ানো অ্যালিস্টার কুকের দুর্দান্ত এক ক্যাচে ফিরতে হয় সাব্বিরকে। স্টোকসের বলে আউট হওয়ার আগে সাব্বির ৩২ বল মোকাবেলা করে তিনটি বাউন্ডারিতে ১৯ রান করেন। একই ওভারে বিদায় নেন শূন্য রানে বোল্ড হওয়া আরেক অভিষিক্ত কামরুল ইসলাম রাব্বি। তাইজুল ৩ রানে অপরাজিত থাকেন।
ইংলিশ পেসার বেন স্টোকস ১০ ওভারে মাত্র ১০ রান খরচ করে সর্বোচ্চ চারটি উইকেট দখল করেন। তিনটি উইকেট পান মঈন আলী আর দুটি উইকেট নেন আদিল রশিদ। একটি উইকেট নেন গ্যারেথ ব্যাটি।
নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই বিপাকে পড়ে ইংল্যান্ড। ওপেনার অ্যালিস্টার কুককে ফিরিয়ে দেন গত ইনিংসের নায়ক মেহেদি হাসান মিরাজ। স্লিপে দাঁড়ানো মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের হাতে ধরা পড়ার আগে কুক ২৩ বলে ১২ রান করেন। তিন নম্বরে নামা জো রুটকে এলবির ফাঁদে ফেলে দ্রুতই ফিরিয়ে দেন সাকিব। আর এই উইকেটের মধ্য দিয়ে সাদা পোশাকে ১৫০ উইকেট স্পর্শ করেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। দলীয় ২৭ রানের মাথায় রুটের বিদায়ে দ্বিতীয় উইকেটের পতন ঘটে ইংলিশদের।
সাকিবের দ্বিতীয় শিকারে সাজঘরে ফেরেন ১৫ রান করা বেন ডাকেট। শর্ট লেগে মুমিনুল হকের তালুবন্দি হন ৩৪ বল মোকাবেলা করা ইংলিশ ওপেনার ডাকেট।
মধ্যাহ্ন বিরতির আগে ৩ উইকেট হারিয়ে ইংলিশদের সংগ্রহ দাঁড়ায় ২৮ রান। বিনা উইকেটে সফরকারীদের সংগ্রহ ছিল ২৬ রান। এরপর বিদায় নেন অ্যালিস্টার কুক, জো রুট এবং বেন ডাকেট। তৃতীয় দিনের প্রথম সেশনে বাংলাদেশের ৫টি আর ইংল্যান্ডের তিনটি মিলিয়ে দুই ইনিংসে মোট ৮ উইকেটের পতন হয়। দুই ইনিংসে তাতে এই উইকেটে রান ওঠে ৫৫।
প্রথম সেশনের পর আবারো জ্বলে উঠে টাইগার স্পিনাররা। ইনিংসের ১৯তম ওভারে প্রথমবারের মতো আক্রমণে আসেন তাইজুল ইসলাম। নিজের দ্বিতীয় বলেই বিদায় করেন গ্যারি ব্যালান্সকে। লেগ স্লিপে ইমরুলের হাতে ধরা পড়ার আগে ব্যালান্স করেন ৯ রান। দলীয় ৪৬ রানের মাথায় চতুর্থ উইকেট হারায় ইংলিশরা। এর আগে অবশ্য সাকিবের বলে ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যান মঈন আলী। শর্ট লেগে থাকা মুমিনুল হকের তালুবন্দি হন তিনি। তবে বল হাতে জমা পড়ার আগে মুমিনুলের হেলমেটের গ্রিল স্পর্শ করে। আইসিসির নিয়মানুযায়ী ফিল্ডারের হেলমেটে বল স্পর্শ করার সময়ই তা ‘ডেড’ হয়ে যায়। ফলে, তৃতীয় আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে বেঁচে যান মঈন।
ইনিংসের ২৮তম ওভারে সাকিবের দারুণ এক ডেলিভারিতে বিদায় নেন ৫০ বলে ১৪ রান করা মঈন আলী। উইকেটের পেছনে মুশফিকের গ্লাভসবন্দি হন মঈন। সাকিবের তৃতীয় শিকারে দলীয় ৬২ রানের মাথায় ইংলিশরা পঞ্চম উইকেট হারায়। এরপর জুটি গড়েন জনি বেয়ারস্টো-বেন স্টোকস। চা বিরতিতে যাওয়ার সময় ইংল্যান্ডের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৫ উইকেটে ১০৮ রান। অর্ধশতক হাঁকান বেন স্টোকস।
জনি বেয়ারস্টোকে বোল্ড করে নিজের প্রথম টেস্ট উইকেট নেন কামরুল ইসলাম রাব্বি। ৯৫ বলে ব্যক্তিগত ৪৭ রান করে বিদায় নেন টাইগারদের গলার কাঁটা হয়ে থাকা বেয়ারস্টো। রাব্বির বলে বোল্ড হওয়ার আগে বেন স্টোকসের সঙ্গে ৩৪.৩ ওভার উইকেটে থেকে ১২৭ রানের বিশাল জুটি গড়েন বেয়ারস্টো। দলীয় ১৮৯ রানের মাথায় ইংলিশদের ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান সাজঘরে ফেরেন।
এরপর সাকিব ফিরিয়ে দেন বড় স্কোর গড়ার চেষ্টায় থাকা বেন স্টোকসকে। এলবির ফাঁদে পড়ে বিদায় নেন ব্যক্তিগত ৮৫ রান করা স্টোকস। তার ১৫১ বলের ইনিংসে ছিল তিনটি ছক্কা আর ছয়টি চারের মার। দলীয় ১৯৭ রানের মাথায় ইংলিশরা তাদের সপ্তম উইকেট হারায়। ইনিংসের ৬৯তম ওভারে আবারো সাকিবের হুঙ্কার। এলবির ফাঁদে ফেলে সাকিব ফিরিয়ে দেন ৯ রান করা আদিল রশিদকে।
এর আগে দ্বিতীয় দিন তামিম ইকবালের (৭৮) পর অর্ধশতকের কাছাকাছি গিয়েও সাজঘরে ফেরেন অধিনায়ক মুশফিক। ৭৭ বলে ৪৮ রান করে ৭২তম ওভারে বেন স্টোকসের বলে জনি বেয়ারস্টোর গ্লাভসে ধরা পড়েন। তার আগে ইনিংসের ১৪তম ও নিজের প্রথম ওভারেই জোড়া আঘাত হানেন মঈন আলী। ইমরুল কায়েসকে (২১) ক্লিন বোল্ড করার পর মুমিনুল হককে (০) বেন স্টোকসের ক্যাচে পরিণত করেন এ ডানহাতি অফস্পিনার। দলীয় ২৯ রানেই দুই উইকেট হারায় টাইগাররা।
তৃতীয় উইকেট জুটিতে ৯০ রান তুলে প্রাথমিক ধাক্কা সামাল দেন তামিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ৪৪তম ওভারে ১১৯ রানের মাথায় আদিল রশিদের বলে জো রুটের হাতে ধরা পড়েন মাহমুদউল্লাহ (৩৮)। পরে মুশফিকের সঙ্গে ৪৪ রানের পার্টনারশিপ গড়েন তামিম। কিন্তু টেস্ট ক্যারিয়ারের অষ্টম সেঞ্চুরির আক্ষেপ নিয়ে মাঠ ছাড়েন দেশসেরা এ ওপেনার। ১৬৩ রানের মাথায় শতক থেকে ২২ রান দূরে থাকতে আউট হন। অফস্পিনার গ্যারেথ ব্যাটির করা ৫৫তম ওভারের চতুর্থ বলটি তার ব্যাট ছুঁয়ে জনি বেয়ারস্টোর গ্লাভসে আটকা পড়ে।
এর আগে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্টে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামে সফরকারীরা। টেস্ট অভিষেকেই মিরাজের স্পিন ঘূর্ণিতে কোণঠাসা হয়ে পড়ে ইংলিশ ব্যাটিং লাইনআপ। প্রথমদিন শেষে ইংলিশদের সংগ্রহ দাঁড়ায় সাত উইকেটে ২৫৮। দ্বিতীয় দিন সকালে ব্যাটিংয়ে নেমে ২৯৩ রানে অলআউট হয় ইংলিশরা।
সাদা পোশাকে অভিষেকের প্রথমদিন পাঁচ উইকেটের অভিজাত ক্লাবে নাম লেখানো মিরাজ নেন ইনিংস সর্বোচ্চ ছয়টি উইকেট। সাকিব নেন দুটি উইকেট আর বাকি দুটি তুলে নেন তাইজুল ইসলাম।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩০ ঘণ্টা, ২২ অক্টোবর ২০১৬
এমআরপি