ক্রিকেট বিশ্বে এমন ব্যাটসম্যান খুব কমই খুঁজে পাওয়া যাবে যারা তার কাটার ভয়ে থরথর ছিলেন না। সব কিছুই তার দুর্দান্ত যাচ্ছিলো।
কিন্তু, হঠাৎই তার সেই উড়ন্ত ছন্দে ব্যাঘাত ঘটলো। ক্যারিয়ারের এক বছর পার না হতেই ইনজুরি পেয়ে বসলো তাকে। গত বছর ইংল্যান্ডে কাউন্টি খেলতে গিয়ে কাঁধে ব্যথা পেয়ে প্রথমবারের মতো বড় ধরনের ইনজুরিতে পড়েন মোস্তাফিজ। অস্ত্রোপচার হওয়ায় চার মাসেরও বেশি সময় তাকে থাকতে হয়েছে মাঠের বাইরে। ফলে ঢাকা ডায়নামাইটসের ডাগ আউটেই তার সময় কেটেছে।
সেই ইনজুরি সেরে উঠতে না উঠতেই আবার ২০১৬ সালের শেষ দিকে নিউজিল্যান্ড সফরে গিয়ে কোমরে ব্যথা পেয়ে সিরিজ থেকে ছিটকে যান। এরপর তৃতীয় দফায় ইনজুরিতে পড়েন, সদ্য সমাপ্ত দ. আফ্রিকা সফরে। স্বাগতিকদের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের আগে ১৪ অক্টোবর অনুশীলনে ফুটবল খেলতে গিয়ে বাঁপায়ের গোঁড়ালি মচকে যাওয়ায় বিপিএলের চলতি আসরে রাজশাহী কিংসের হয়ে সিলেট ও ঢাকা পর্বে তার খেলা হয়নি। ইনজুরি সেরে উঠায় চট্টগ্রাম পর্ব দিয়ে এবারের বিপিএল শুরু করেছেন এই টাইগার বাঁহাতি পেসার।
যা তাকে এনে দিয়েছে মুক্তির আনন্দ। কেননা ব্যথা সেরে উঠতে তাকে দেড় মাস থাকতে হয়েছে খেলার বাইরে। ঘর থেকে চিকিৎসক, কখনও ফিজিও, কখনও মাঠের বালুতে হেঁটে বেড়ানো (পুনর্বাসন) আবার কখনও বা জিমনেশিয়াম। এভাবেই অবরুদ্ধ সময় কেটেছে তার।
সেই অসহনীয় অবস্থা কাটিয়ে ২৫ নভেম্বর জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিপক্ষে বিপিএলের শুরুটাও করেছেন উইকেট দিয়েই। ৩.১ ওভার বল করে ৩২ রানের বিনিময়ে তুলে নিয়েছেন হাসান আলী ও মেহেদি হাসানের উইকেট। ইনজুরি থেকে মাঠে নেমেই উইকেট! বিষয়টি যে কারো জন্যই অনেক আনন্দের ও স্বস্তির।
কিন্তু মোস্তাফিজের সাথে কথা বলে মনে হলো উইকেট পাওয়া নিয়ে তার মধ্যে আনন্দের লেশমাত্র নেই। আছে শুধু বল হাতে মাঠে ফেরার স্বস্তি, ‘গোঁড়ালিতে কোনো ব্যথা নেই। ভালো আছি। খেলতে গিয়ে গায়ে ব্যথা এই যা। বোলিং করতে পারছি এটাই আমার জন্য সব চেয়ে বড় ব্যাপার। ’
মাঠে ফেরাটা মোস্তাফিজের নিজের কাছে যেমন বড় ব্যাপার তার চেয়ে কম বড় নয় তার দল রাজশাহী কিংসের কাছে। কেননা ৮ ম্যাচে মাত্র ৩ জয়ে দলটির শেষ চারের আশা মাটির পিদিমের মতো নিভু নিভু জ্বলছে। এর আগে খেলা ৭ ম্যাচে তাদের জয় ছিলো মাত্র দুটিতে। কুমিল্লার বিপক্ষে মোস্তাফিজ যোগ দিতেই নিজেদের তৃতীয় জয় তুলে নেয় রাজশাহী।
তাই বলে একথা বলা সমীচিন হবে না, মোস্তাফিজই রাজশাহীর জয়ের নায়ক। কেননা সেই ম্যাচে বল হাতে তার চেয়ে বড় অবদান রেখেছেন পাকিস্তানি পেসার মোহাম্মদ সামি (৪ উইকেট)। অবদান কম ছিলো না ডুয়াইন স্মিথ (২ উইকেট), মেহেদি হাসান মিরাজ (১ উইকেট) ও জেমস ফ্র্যাংকলিনের (১ উইকেট)।
মোস্তাফিজও সেভাবেই ভাবছেন। খেলাটি যেহেতু ক্রিকেট সেহেতু শেষ চারে জায়গা করে নিতে দলগত পারফরম্যান্সের ওপরেই তিনি গুরুত্বারোপ করছেন, ‘যদি আমাদের সবাই ভালো করে তাহলে শেষ চার সম্ভব। আমাদের তো ম্যাচ কমে এসেছে। সামনে সবই বড় বড় দল। সব দলই এখন ব্যালেন্সড। তবে ক্রিকেটে কিছুই অসম্ভব না। ’
বাংলাদেশ সময়: ২০২২ ঘণ্টা, ২৬ নভেম্বর ২০১৭
এইচএল/এমআরপি