তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের শেষ ম্যাচে নাগপুরে রোববার (১০ নভেম্বর) শুরুতে ব্যাট করতে নেমে ৫ উইকেট হারিয়ে ১৭৪ রান সংগ্রহ করেছিল ভারত। জবাবে মোহম্মদ নাঈমের ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটিতে ভর করেও সব উইকেট হারিয়ে ১৪৪ রানে শেষ হয় বাংলাদেশের ইনিংস।
১৭৫ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতে বিপদে পড়ে যায় বাংলাদেশ। দলীয় ১২ রানের মধ্যে সাজঘরে ফিরে যান ওপেনার লিটন দাস ও সৌম্য সরকার। দীপক চাহারের বলে ছক্কা মারতে গিয়ে বাউন্ডারিতে ওয়াশিংটন সুন্দরের হাতে ধরা পড়েন লিটন (৯)।
এর পরের বলে সৌম্যকে গোল্ডেন ডাক উপহার দিয়ে হ্যাটট্রিকের আশা জাগিয়ে তুলেন চাহার। তবে মোহাম্মদ মিঠুন সেই সুযোগ দেননি। এরপর মিঠুন ও নাঈমের ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। দুজনে যোগ করেন ৯৮ রান। এর মাঝে টি-টোয়েন্টিতে নিজের প্রথম ফিফটি তুলে নেওয়ার পথে ৩৪ বল খেলেন বাঁহাতি ওপেনার নাঈম। ফিফটির ইনিংসটি ৭ চার ও ১ ছক্কায় সাজানো।
নাঈমকে একা রেখে দীপক চাহারের বলে ক্যাচ তুলে দিয়ে মিঠুন (২৭) বিদায় নেওয়ার ঠিক পরের বলেই ক্রিজে নতুন আসা মুশফিকুর রহিম শিভব দুবের বলে শুন্য রানে বোল্ড হয়ে ফিরে যান। বড় ভরসা হয়ে থাকা নাঈমও দুবের শিকার হলে পরাজয় উঁকি দিতে থাকে বাংলাদেশকে। দুবের দ্বিতীয় শিকার হওয়ার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ৪৮ বলে ১০ চার ও ২ ছক্কায় সাজানো ৮১ রানের ইনিংস।
বাংলাদেশের সর্বনাশের চূড়ান্ত হয় পরপর দুই ওভারে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও আফিফ হোসেনের বিদায়ে। এর মধ্যে বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক রিয়াদ চাহালের বলে বোল্ড হয়ে ফেরার আগে করেন ১০ বলে ৮ রান। আর আফিফ বিদায় নেন দুবের মুখোমুখি হওয়া প্রথম বলেই। বাউন্সে বিভ্রান্ত হয়ে বোলারের হাতেই ক্যাচ তুলে দেন এই বাঁহাতি। ম্যাচের ফলাফল তখনই নির্ধারিত হয়ে যায়। বাংলাদেশ একসময় ২ উইকেট হারিয়ে ১০৬ রান করে ফেলেছিল। কিন্তু এরপরই সর্বনাশের শুরু। শেষ ৭.২ ওভারে ৩৮ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে ফেলার কী জবাব থাকতে পারে?
ভারতীয় বোলারদের মধ্যে অবিশ্বাস্য ছিলেন চাহার। নিজের ও ইনিংসের শেষ ওভারে শফিউল, মোস্তাফিজ ও আমিনুল ইসলামকে বিদায় করে ভারতের হয়ে টি-টোয়েন্টিতে প্রথম হ্যাটট্রিকও তুলে নিয়েছেন এই ডানহাতি। এছাড়া ৩ উইকেট গেছে দুবের ঝুলিতে। বাকি উইকেট চাহালের।
৩.২ ওভার বল করে মাত্র ৭ রান খরচে ৬ উইকেট তুলে নিয়েছেন চাহার। ২০১২ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বল হাতে ৮ রানে ৬ উইকেট তুলে নিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কার স্পিনার আজান্তা মেন্ডিস। এতদিন টি-টোয়েন্টির সেরা বোলিং ছিল এটাই। কিন্তু এখন থেকে এই রেকর্ড চাহারের দখলে।
এর আগে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শ্রেয়াস আয়ার ও লোকেশ রাহুলের ফিফটিতে নির্ধারিত ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ১৭৪ রান সংগ্রহ করে ভারত।
রোববার (১০ নভেম্বর) নাগপুরের বিদর্ভ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ-ভারত। ম্যাচটি শুরু হয় বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যে সাড়ে সাতটায়। টসে জিতে ভারতকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে শুরুটা দুর্দান্ত করে বাংলাদেশ।
নিজের প্রথম ওভার করতে এসে তৃতীয় বলেই ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মার (২) স্টাম্প উপড়ে ফেলেন পেসার শফিউল ইসলাম। এর আগে টিম ইন্ডিয়ার বিপক্ষে তিন ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজেও রোহিতকে সাজঘরে ফিরিয়েছিলেন তিনি। এরপর ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার আগে আরেক ওপেনার শিখর ধাওয়ানকে নিজের দ্বিতীয় শিকার বানান শফিউল। দলীয় ৩৫ রানে ও ব্যক্তিগত ১৯ রানে ছ্ক্কা হাঁকাতে গিয়ে ধাওয়ান বন্দী হোন মাহমুদউল্লাহর হাতে।
শুরুতে দুই ওপেনারকে হারালেও রানের গতি সচল রাখেন লোকেশ রাহুল ও শ্রেয়াস আয়ার। দু’জনের ৫৯ রানের জুটি ভাঙেন আল আমিন হোসেন। ৫২ রানে সাজঘরে ফেরেন রাহুল। তবে শফিউলের বলে ব্যক্তিগত ১ রানে জীবন পাওয়া শ্রেয়াস এর পরপরই ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেন। আমিনুল ইসলামের ক্যাচ ছাড়ার প্রতিদান দিতে হয় টাইগারদের।
তবে বাংলাদেশকে সেই অবস্থায় রক্ষা করেন সৌম্য সরকার। নিজের তৃতীয় ওভার করতে এসে প্রথম বলে ঋষভ পান্তকে (৬) বোল্ড করার পর পঞ্চম বলে শ্রেয়াসকে ফেরান তিনি। শ্রেয়াসের ৩৩ বলে ৬২ রানের ইনিংসটি সাজানো ছিল ৩ চার ও ৫ ছক্কায়। শেষদিকে মনীষ পান্ডের ১৩ বলে ২২ এবং শিভম দুবের ৯ রানের সুবাদে ১৭৪ রান সংগ্রহ করে ভারত।
বাংলাদেশ সময়: ২৩২৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০১৯
এমএইচএম