সবমিলিয়ে একেবারে হঠাৎ করে নেতৃত্ব পাওয়ায় মুমিনুল নিজেই কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন। সেই অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করে বাংলাদেশের ১১তম টেস্ট অধিনায়ক ‘ক্রিকইনফো’কে বলেন, ‘এটা (নেতৃত্ব পাওয়া) ছিল একবারেই অপ্রত্যাশিত।
মুমিনুলের এমন প্রতিক্রিয়া স্বাভাবিক। কারণ, সাকিব আল হাসানের ঘটনায় পুরো দেশের ক্রিকেট ভয়ানক নাড়া খেয়েছে। এই ঝড়ো পরিবেশের মধ্যেই দেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় তারকা সাকিবের শূন্যস্থান পূরণের দায়িত্ব পড়ে মুমিনুলের কাঁধে। দলে মুশফিকুর রহিম এবং মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের মতো সিনিয়র ক্রিকেটার এবং সাবেক দুই অধিনায়ক থাকতে তাকেই বেছে নেয় বিসিবি। সাকিব থাকা অবস্থায় কোনো বিকল্প নাম ভাবার প্রয়োজন বোধ করেননি নির্বাচকরা। এমনকি কোনো সহ-অধিনায়কও ঠিক করা হয়নি।
তবে সবদিক ভাবলে সাকিবের বিকল্প হিসেবে মুমিনুলই সঠিক পছন্দ। কারণ, টেস্ট ক্রিকেটে নিয়মিত ভালো পারফর্ম করে যাচ্ছেন তিনি। ২০১৩ সালে অভিষেকের পর এই ফরম্যাটে তার সেঞ্চুরি আছে ৮টি। একমাত্র তামিম ইকবালই তার চেয়ে এগিয়ে আছেন। টেস্টে কমপক্ষে ২৫০০ রান করা বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে একমাত্র মুমিনুলের ব্যাটিং গড় ৪০-এর বেশি। তার এই অর্জনের কারণে তাকে টেস্টে আলাদা অবস্থানে দেখা হয়।
মুমিনুলের টেস্ট ক্যারিয়ার মাত্র ৩৬ ম্যাচের। কিন্তু দল হিসেবে বাংলাদেশও তো অনেক কম টেস্ট খেলেছে। চার বছর আগে যখন সংক্ষিপ্ত পরিসরের দল থেকে তাকে বাদ দেওয়া হলো, সবাই ভেবেছিল মুমিনুলের ক্যারিয়ারে এর প্রভাব পড়বে। কিন্তু এখনও আগের মতোই তার ব্যাটে রানের দেখা পাওয়া যায় নিয়মিতই। এবার তার নেতৃত্ব দেওয়ার পালা, তাও ভারতের মাটিতে।
যেকোনো ফরম্যাটেই ভারত শক্তিশালী প্রতিপক্ষ। বিশেষ করে তাদের ঘরের মাঠে, আর তা যদি হয় টেস্টে তাহলে তো প্রতিপক্ষের জন্য আরও বড় সমস্যা। কিন্তু প্রথমবার ভারতের মাটিতে দলের নেতৃত্ব দিতে এতটুকু দুশ্চিন্তা করছেন না মুমিনুল। বরং সেখানে নিজেকে আক্রমণাত্মক অধিনায়ক হিসেবেই তুলে ধরতে চান তিনি, ‘আমি আক্রমণাত্মকভাবে খেলতে পছন্দ করি। আক্রমণাত্মক অধিনায়ক হতে চাই, যেটা বেশি সাফল্য এনে দেয়। পরিস্থিতি অনুযায়ী, আমি আমার আক্রমণাত্মক মানসিকার মাঝেই রক্ষণাত্মক হবো। ’
নেতৃত্ব বাড়তি চাপ কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মুমিনুল বলেন, ‘নেতৃত্ব দেওয়া বাড়তি চাপ নয়। এটার অনুভূতি দারুণ, এটা একটা সুযোগ। এটা নিয়ে বাড়তি কিছু ভাবতে চাই না। আমি আশাবাদী। আমি শুধু দেশের প্রতিনিধিত্ব করার পাশাপাশি দলের জন্য ভালো কিছু করতে চাই। ’
ক্যারিয়ারে মাশরাফি বিন মর্তুজা, সাকিব, তামিম, মুশফিক এবং মাহমুদউল্লাহ অর্থাৎ পাঁচ অধিনায়কের নেতৃত্বে খেলেছেন মুমিনুল। স্বাভাবিকভাবেই তাদের কাছ থেকে কিছু অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন তিনি। তারা কীভাবে বিভিন্ন পরিস্থিতি সামাল দিতেন তা কাছ থেকে দেখেছেন। তারা কখন কোন সিদ্ধান্ত নিতেন এসব তাকে নেতৃত্ব দিতে বাড়তি সহায়তা করবে বলে বিশ্বাস তার। তবে কাজটা যে কঠিন হবে তা ঠিকই বুঝতে পারছেন তিনি।
বাংলাদেশ এবার অনেক দুর্বল দল নিয়ে ভারতের মাটিতে টেস্ট খেলতে গেছে। সাকিব নিজেই দুই খেলোয়াড়ের সমান। মোস্তাফিজুর রহমানের ফর্ম চিন্তার ভাঁজ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে মেহেদী হাসান মিরাজ আর তাইজুল ইসলামই দলের দুই প্রধান বোলার। এছাড়া আবু জায়েদ, আল-আমিন হোসেন কিংবা এবাদত হোসেনের মতো বোলারদের জন্য একাদশে জায়গা পাওয়াই কঠিন কাজ। ব্যাটিংয়ে তামিম ইকবাল নেই, তবে মুশফিক ও রিয়াদ আছেন। দুজনেরই নেতৃত্বের অভিজ্ঞতা আছে। ফলে তাদের কাছ থেকে ভালো সহায়তা পাওয়ার সুযোগ থাকছে মুমিনুলের জন্য।
তবে ভারতের মতো শীর্ষ দলের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচে জয় কিছুটা অলীক কল্পনাই মনে হতে পারে। কিন্তু ম্যাচ না জিতলেও অন্তত একটি টেস্টে ড্র করতে পারলেও অধিনায়ক মুমিনুলের জন্য সেটাই হবে বিশাল পাওয়া। আর এতে দীর্ঘ সময় অধিনায়কত্ব করার সুযোগ পেয়ে যেতে পারেন তিনি। নেতৃত্ব পাওয়ার উদযাপন তিনি হয়তো তখনই সেরে নিতে পারবেন।
আগামী ১৪ নভেম্বর ইন্দোরে হবে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার প্রথম টেস্ট। আর ২২ নভেম্বর কলকাতায় অনুষ্ঠিত হবে ঐতিহাসিক দিবা-রাত্রির দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০১৯
এমএইচএম