ভারতকে অল্প রানে থামিয়ে কাজটা আগেই সেরে রেখেছিলেন লুঙ্গি এনগিডি ও ওয়েইন পারনেলরা। পরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতে বিপর্যয়ে পড়লেও দুই ব্যাটার এইডেন মার্করাম ও ডেভিড মিলার দেখালেন ঘুরে দাঁড়ানোর পথ।
২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভের ম্যাচে আজ পার্থ স্টেডিয়ামে ভারতকে ৫ উইকেটে হারিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। শুরুতে ব্যাট করে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৩৩ রানের সংগ্রহ পায় ভারত। জবাবে ৫ উইকেট হারালেও ২ বল হাতে রেখেই জয় তুলে নেয় প্রোটিয়ারা। এই জয়ে ৩ ম্যাচে ৫ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ 'টু'-এর শীর্ষে উঠে এলো দক্ষিণ আফ্রিকা। সমান ম্যাচে ভারতের সংগ্রহ ৪ পয়েন্ট। বাংলাদেশের পয়েন্টও তাদের সমান (৪)। তবে জিম্বাবুয়ে (৩) ও পাকিস্তানের (২) সেমির আশা প্রায় শেষ। আর বিদায় নিশ্চিত হয়ে গেছে নেদারল্যান্ডসের (০)।
লক্ষ্য তাড়ায় নেমে ভারতের মতোই ব্যর্থ হয় দক্ষিণ আফ্রিকার টপ অর্ডার। দলীয় ৩ রানে ২টি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট হারায় তারা। এবারের বিশ্বকাপে দারুণ ফর্মে থাকা কুইন্টন ডি কক বিদায় নেন ১ রান করে। তিনে নামা রাইলি রুশো তো রানের খাতাই খুলতে পারেননি। দুটি উইকেটই শিকার করেন ভারতীয় পেসার আর্শদীপ সিং।
চাপের মুখে প্রোটিয়া অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা ধরে খেলার চেষ্টা করলেও আবারও ব্যর্থ হয়েই ফিরেছেন। এবার ১৫ বলে ১০ রান করে তিনি বিদায় নিয়েছেন মোহাম্মদ শামির বলে। তবে এরপর এইডেন মার্করাম ও ডেভিল মিলার মিলে শক্ত করেই হাল ধরেন। যদিও তাদের রান তোলার গতি শুরুতে ছিল ওয়ানডেসুলভ। প্রথম ১০ ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকা ৩ উইকেট হারিয়ে সংগ্রহ করে মাত্র ৪৩ রান।
দক্ষিণ আফ্রিকার ঘুরে দাঁড়ানোর শুরু আসলে ১১তম ওভার থেকেই। হার্দিক পান্ডিয়ার ওই ওভারে ১৬ রান। পরের ওভারে অশ্বিনের বলে সহজ কাচ ফেলে দেন বিরাট কোহলি। মার্করামের শটে বল ডিপ মিড উইকেটে থাকা কোহলির হাতে সরাসরি পৌঁছালেও সবাইকে অবাক করে দিয়ে ফেলে দেন তিনি। এই ক্যাচ মিসের জন্য পরে মূল্য চোকাতে হয় ভারতকে। পরের ওভারে শামির বলে মিলারকে রান আউটের সুযোগ নষ্ট করেন ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত।
মুফতে পাওয়া সুযোগ দারুণভাবে কাজে লাগান মার্করাম ও মিলার। পরের ওভারেই দুই ছক্কায় তারা ১৭ রান তোলেন। রানের গতি বাড়ানোর পাশাপাশি ফিফটিও তুলে নেন মার্করাম; মাত্র ৩৮ বলে। ভারত যখন ক্রমশ ম্যাচ থেকে ছিটকে যাচ্ছে, ঠিক তখন আঘাত হানেন হার্দিক। তার বলে সূর্যকুমার যাদবের হাতে ক্যাচ তুলে বিদায় নেন মার্করাম। ফলে ভেঙে যায় ৭৬ রানের জুটি। মার্করাম ৪১ বলে ৫২ রানের ইনিংস খেলে অবশ্য জয়ের ভিত গড়ে দিয়ে যান।
শেষ চার ওভারে ৩২ রানের লক্ষ্য দাঁড়ায় দক্ষিণ আফ্রিকার সামনে। ১৭তম ওভারে আর্শদীপের বলে আসে ৭ রান। তাতে তিন ওভারে লক্ষ্য নেমে আসে ২৫ রানে। অশ্বিনের করা পরের ওভারের প্রথম দুই বলেই ব্যাক টু ব্যাক ছক্কা হাঁকিয়ে কাজটা আরও সহজ করে দেন মিলার। কিন্তু চতুর্থ বলে ট্রিস্টান স্টাবসকে (৬) ললেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে ম্যাচ জমিয়ে তোলেন অশ্বিন। তবে ওভারটিতে আসে ১৩ রান।
শেষ দুই ওভারে ১২ রান দরকার ছিল দ. আফ্রিকার। শামির ওভারের প্রথম বলেই চার হাঁকিয়ে ফিফটির দেখা পান মিলার। তবে ওই ওভারে আসে ৬ রান, ফলে শেষ ওভারে লক্ষ্য ছিল ৬ রান। কিন্তু শেষ ওভারে ভুবনেশ্বর কুমারের তৃতীয় ও চতুর্থ বলে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে জয় নিশ্চিত করেন মিলার। শেষ পর্যন্ত ৪৬ বলে ৪ চার ও ছক্কায় ৫৯ রানের ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন এই বাঁহাতি ব্যাটার।
এর আগে টস জিতে ব্যাটিং বেছে নেন ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা। কিন্তু তার এই সিদ্ধান্ত ভারতের জন্যই বুমেরাং হয়ে আসে। ব্যাটিং ব্যর্থতায় ডুবতে বসেছিল তারা। শেষ পর্যন্ত সূর্যকুমারের ফিফটিতে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৩৩ রানের সংগ্রহ পেয়েছে ভারত।
ভারতের শুরুটা মোটেই ভালো হয়নি। প্রথম ৯ বলে কোনো রানই নিতে পারেননি ভারতের দুই ওপেনার রোহিত শর্মা ও লোকেশ রাহুল। প্রথম ওভারটি মেডেন নেন ওয়েইন পার্নেল। পরের ওভারের চতুর্থ বলে ছক্কা মেরে রানের খাতা খোলেন রোহিত। তৃতীয় ওভারে রাহুলও ছক্কা হাঁকান পার্নেলকে। কিন্তু দলীয় ২৬ রানেই দুই ওপেনারকে হারায় ভারত। এবারের বিশ্বকাপে নিজেকে হারিয়ে খুঁজছেন লোকেশ রাহুল। আজও তার অন্যথা হয়নি। ১৪ বলে ৯ রান করে বিদায় নিয়েছেন তিনি।
রাহুলের পর রোহিতও ড্রেসিংরুমের পথে হাঁটেন। দুজনেই লুঙ্গির শিকার। রোহিত আবার ১৪ বলের মোকাবিলায় ১৫ রান করে বোলারের হাতেই ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন। আরও একবার ভালো কিছুর ইঙ্গিত দিলেও আজ হাসেনি বিরাট কোহলির ব্যাট। ১১ বলে ১২ রান করে তিনিও লুঙ্গির বলেই কাগিসো রাবাদার হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন। লুঙ্গির পর উইকেটের খাতা খোলেন নরকিয়া। পাঁচে নামা দীপক হুডাকে রানের খাতাই খুলতে দেননি প্রোটিয়া পেসার।
দীপক বিদায় নেওয়ার পর ঘুরে দাঁড়ানো তো দূরে থাক, উল্টো হার্দিক পান্ডিয়ার (২) উইকেট হারায় ভারত। এই উইকেটও নিজের ঝুলিতে পুরেছেন লুঙ্গি। দলীয় ৪৯ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ভারত যখন ধুঁকছিল, তখন পাল্টা আক্রমণের পথ বেছে নেন সূর্যকুমার যাদব। চারে নামা এই ব্যাটার প্রথমে দীনেশ কার্তিককে (৬) নিয়ে দলের সংগ্রহ ১০০ পার করেন। কিন্তু ওয়েইন পারনেলের বলে কার্তিকের বিদায়ের পর ক্রিজে আসা রবিচন্দ্রন অশ্বিনও (৭) ব্যর্থ হন সূর্যকুমারকে সঙ্গ দিতে।
অশ্বিন নিজেও পারনেলের শিকার হয়ে ফিরেছেন। চরম বিপর্যয়ের মাঝেও অটল থাকেন সূর্যকুমার। তুলে নেন দারুণ এক ফিফটিও। কিন্তু কোনো যোগ্য সঙ্গ না পাওয়ায় এবং টানা উইকেট পতনের কারণে দায়িত্বটা পুরোপুরি তার একার কাঁধেই চাপে। ১৯তম ওভারের প্রথম বলে অশ্বিন বিদায় নেওয়ার পর ওভারের পঞ্চম বলে সেই পারনেলের বলেই তুলে মারতে গিয়ে আউট হন সূর্যকুমার। ৪০ বলের মোকাবিলায় ৬ চার ও ৩ ছক্কায় ৬৮ রান করেছেন তিনি।
বল হাতে ৪ উইকেট নিয়েছেন লুঙ্গি, ৩ উইকেট গেছে পারনেলের দখলে এবং ১ উইকেট নিয়েছেন নরকিয়া।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০২২
এমএইচএম