ঢাকা, সোমবার, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ০১ জুলাই ২০২৪, ২৩ জিলহজ ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

২২ দিনের শিশুর মুখে অবটুরেটর স্থাপনে সাফল্য 

নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০২৩
২২ দিনের শিশুর মুখে অবটুরেটর স্থাপনে সাফল্য  ...

চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ২২ দিন বয়সী ক্লেফট প্যালেট রোগীর মুখে সফলভাবে অবটুরেটর স্থাপন করেছেন চিকিৎসকরা।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, নবজাতক নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (এনআইসিইউ) চিকিৎসাধীন ওই শিশুর ক্লেফট প্যালেট (মুখের ভিতরে তালুর অংশ জোড়া না লাগা) এর কারণে জিহ্বা ঠিকভাবে কাজ করছিল না।

ফলে অক্সিজেন স্বল্পতায় কিছুক্ষণ পরপরই নীল হয়ে বিবর্ণ হয়ে যেতো। এজন্য শিশুকে নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন সরবরাহ দিয়ে এবং নাকে নল দিয়ে খাওয়ানো ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না।
এনআইসিইউ ছাড়া শিশুটির চিকিৎসাও চলমান রাখা সম্ভব ছিল না।

এ অবস্থায় চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল মেডিক্যাল কলেজের ডেন্টাল ইউনিটের প্রধান, সহযোগী অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসানের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ ডেন্টাল ইউনিটের প্রস্থোডন্টিক্স বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান ডা. এবিএম ফরিদ উদ্দিন এর সমন্বয়ে গঠিত টিম এক সপ্তাহের প্রচেষ্টায় অবটুরেটর ডিভাইস তৈরি ও সফলভাবে প্রতিস্থাপন করতে সক্ষম হন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, এটি ছিল কষ্টসাধ্য ব্যাপার এবং বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম সর্বকনিষ্ঠ শিশুর মুখে অবটুরেটর ডিভাইসের সফল প্রতিস্থাপন। এই ডিভাইসের কারণে শিশুটি প্রাকৃতিকভাবে শ্বাসের মাধ্যমে অক্সিজেন গ্রহণ করতে সক্ষম হচ্ছে এবং নাকে নল ছাড়াই স্বাভাবিকভাবে খেতে পারছে। ডিভাইস প্রতিস্থাপনের দুইদিন পরেই ওই শিশুকে এনআইসিইউ থেকে ডিসচার্জ করে বাসায় পাঠানো হয়েছে।

চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল মেডিক্যাল কলেজের ডেন্টাল ইউনিটের প্রধান, সহযোগী অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, অক্সিজেন এলাকার এক বাসিন্দার ২২ দিন বয়সী শিশু সাবরিনা জন্মগত ত্রুটি নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল। বেশ কয়েকটি ধাপে অবটুরেটর ডিভাইস তৈরির পর সফলভাবে তার মুখের ভেতর প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। এজন্য সময় লেগেছে প্রায় ১৬-১৮ ঘণ্টা।

তিনি বলেন, জন্মের সময় শারীরিকভাবে অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ত্রুটিকে সাধারণত জন্মগত ত্রুটি বলা হয়। শিশুদের বিভিন্ন জন্মগত ত্রুটি হয়। এর মধ্যে প্রথমেই চলে আসে ক্লেফট লিপ প্যালেট (ঠোঁট কাটা, তালু কাটা)। তালু কাটা থাকলে খাবার খেতে গেলে নাক দিয়ে খাবার চলে আসে বা ফুসফুসে চলে যায়। এতে ঘন ঘন শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহ, যেমন: সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া ইত্যাদি হতে পারে, অনেকে মারাও যায়। এছাড়া সার্বক্ষণিক কান পাকা থাকতে পারে। ফলে রোগী বধির হয়ে যেতে পারে। বড় হলে ঠিকমতো কথা উচ্চারণ করতে পারে না। যেটুকু উচ্চারিত হয়, তা-ও নাক দিয়ে। ফলে কথা অন্যরা বুঝতে পারে না।

চিকিৎসকদের অভিমত, এক্ষেত্রে শিশুর কথা বলা শুরুর আগে অর্থাৎ ছয় থেকে ৯ মাস বয়সই অপারেশনের সঠিক সময়। তবে দেরিতেও করানো যায়। কিন্তু দেরিতে অপারেশন করালে রোগীর কথা বলা পুরোপুরি ঠিক হয় না। এজন্য শিশু জন্মের পরপরই তার নাক, কান, চোখ, মুখ, মুখগহ্বর, মাথা, হাত, পা, যৌনাঙ্গ, মলদ্বার ইতাদি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দেখে নিতে হবে। কোনও অসংগতি দেখলেই শিশু সার্জনের কাছে নেওয়া উচিত। এ ছাড়া জন্মের পর শিশুর বাড়ন্ত অবস্থায় কোনও প্রকার শারীরিক বা বুদ্ধিবৃত্তিক অসংগতি দেখা গেলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। কারণ অনেক জন্মগত ত্রুটিই দেরিতে চিকিৎসা করালে আর সম্পূর্ণরূপে ভালো হয় না।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০২৩ 
এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।