ঢাকা, শনিবার, ২০ আশ্বিন ১৪৩১, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ০১ রবিউস সানি ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

পানের অযোগ্য চট্টগ্রাম ওয়াসার পানি 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩০, ২০২৩
পানের অযোগ্য চট্টগ্রাম ওয়াসার পানি  ...

চট্টগ্রাম: নগরের চান্দগাঁও বারই পাড়া এলাকার বাসিন্দা মোজাম্মেল হোসেন। সাতজনের সংসারে গোসল ও রান্নাবান্না ছাড়া বিভিন্ন কাজে প্রতিদিন প্রয়োজন হয় প্রায় ৩০ লিটার পানি।

যা আগে মেটানো যেত চট্টগ্রাম ওয়াসার পানি দিয়ে। কিন্তু পানিতে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় প্রতিদিন এ পানি কিনতে হচ্ছে নগদ টাকায়।

মোজাম্মেল হোসেন বাংলানিউজকে জানান, রমজানের শুরু থেকে পানির সমস্যায় ভুগছি। লবণাক্ততার জন্য পানি পানের অযোগ্য। তাই বাধ্য হয়ে ২০ লিটারের জার কিনে সুপেয় পানির চাহিদা মেটাতে হচ্ছে। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় প্রতিদিন বাড়তি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে জার।  

তিনি বলেন, একদিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে অতিষ্ঠ জীবন। তার ওপর প্রতিদিন বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে পানি। ওয়াসার পানি লাইনে থাকার পরও পানি কিনতে হচ্ছে। এক মাস হয়ে গেলেও ওয়াসা কর্তৃপক্ষ এ সমস্যার সমাধান করছে না।   

শুধু চান্দগাঁও নয়, নগরের বেশিরভাগ এলাকায় একই অবস্থা। সুপেয় পানি নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ নেই এলাকাবাসীর। নদীর পানিতে লবণাক্ততার কারণে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় সুপেয় পানির সংকট দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম ওয়াসার কর্মকর্তারা। তারা জানান, আন্তর্জাতিক মান রক্ষা করে পানি সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে। প্রতি লিটারে ৬০০ মিলিগ্রাম লবণাক্ত থাকলে পান করা যায়। এসব পানি পান করলে শারীরিক কোনো সমস্যা হবে না। বৃষ্টি না হলে পরিপূর্ণ লবণমুক্ত করা সম্ভব নয়।

জানা গেছে, নিয়মিত পানি পাওয়া যায় না ৩৯, ৪০ এবং ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের অনেক এলাকায়। তাছাড়া নগরীর ১০ নম্বর উত্তর কাট্টলী এবং ৯ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ডে কমে এসেছে ওয়াসার পানি সরবরাহ। এছাড়া নতুন করে যুক্ত হয়েছে পানিতে লবণাক্ততা সমস্যা।  

এদিকে পানিতে লবণাক্ততা বাড়লেও এ সমস্যার সমাধান হাতে নেই চট্টগ্রাম ওয়াসার কাছে। একের পর এক পানি শোধনাগার স্থাপন করা হলেও এমন পরিস্থিতিতে কি ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে এ নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো সমাধান নেই প্রতিষ্ঠানটির হাতে। লবণাক্ততা সমস্যা নিরসনে রিভার্স অসমোসিস পদ্ধতি থাকলেও ব্যয়বহুল হওয়ায় এ পদ্ধতির প্রয়োগ নেই চট্টগ্রাম ওয়াসার কোনো পানিশোধনাগারে। তাই পানি পরিশোধন করলেও লবণাক্ততা কাটানোর সুযোগ নেই ওয়াসার।  

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. দিদারুল আলম চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, শুষ্ক মৌসুমে সমুদ্রের পানি নদীতে উঠে আসার কারণে পানিতে লবণাক্ততা বাড়ছে। ফলে ওয়াসার পানিতে কিছু লবণাক্ততা পাওয়া যাচ্ছে। ওয়াসার পানি শোধনাগারগুলো পানি পরিশোধন করছে মাত্র। কিন্তু লবণাক্ততা কমাতে ‘রিভার্স অসমোসিস’ নামে আলাদা পদ্ধতি রয়েছে। যার মাধ্যমে খাবার পানি শতভাগ লবণমুক্ত করা যায়। এতে খরচ বেশি। প্রতি লিটার পানি রিভার্স অসমোসিস করতে ৮০ থেকে ৯০ টাকা খরচ পড়ে। এই প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন পানিতে অপ্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থ থাকে না, তাই এই পানি পান করলে কিডনির ওপর চাপ অনেকাংশে কমে যায়। এই প্রক্রিয়ায় কোন ধরনের তাপ প্রয়োগের প্রয়োজন হয় না এবং তাপ প্রয়োগ ব্যতীত পানি শতভাগ বিশুদ্ধ হয়, যা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত।  

চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বাংলানিউজকে বলেন, কর্ণফুলী ও হালদা নদীর পানির পরিশোধন করে নগরবাসীর মধ্যে সরবরাহ করা হয়। কিন্তু সাগরের পানি নদীর অনেক বিস্তৃত এলাকায় ঢুকে পড়ছে। তাতে নগরবাসীর কাছে সরবরাহকৃত পানিও লবণাক্ত হচ্ছে। বিভিন্ন রাসায়নিক ব্যবহারের মাধ্যমে এ সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। ভারী বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত এ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হবে না।

এ বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ কে এম ফজলুল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মিটিংয়ে আছেন জানিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।  

বাংলাদেশ সময়: ১২০০ ঘন্টা, এপ্রিল ৩০, ২০২৩
এমআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।