চট্টগ্রাম: মোগল স্থাপত্য শিল্পের এক ঐতিহাসিক নিদর্শন চট্টগ্রামের কদম মোবারক শাহী জামে মসজিদ। এই মসজিদের গঠন, অবকাঠামো, নির্মাণশৈলী, কারুকার্য আকৃষ্ট করে মুসল্লিদের।
জানা যায়, মোগল সম্রাট মুহম্মদ শাহ’র শাসনামলে তাঁর নির্দেশে প্রথম মোতোয়াল্লি মুহাম্মদ ইয়াসিন খান ১৭১৯ খ্রিস্টাব্দে এই মসজিদ নির্মাণকাজ শুরু করেন। ১৭২৩ সালে নির্মাণ শেষ হয়।
স্থানীয় মুসল্লিরা জানান, মসজিদের মূল কক্ষে পাথরখণ্ডে মহানবী হযরত মুহম্মদ (সা.) এর ডান পায়ের ছাপ এবং আরেকটি পাথরখণ্ডে বড় পীর আবদুল কাদের জিলানি (রহ.) এর পায়ের ছাপ সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে।
লম্বাকৃতির তিনটি গম্বুজবিশিষ্ট এই মসজিদের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ যথাক্রমে ১৩ মিটার এবং ৭.৪২ মিটার। এর সঙ্গে উত্তর ও দক্ষিণ দিকে থাকা বাড়তি পার্শ্বকক্ষ দুটি নিয়ে দৈর্ঘ্য ২৩.১৬ মিটার। চারকোণে রয়েছে তিন স্তরবিশিষ্ট অষ্টভুজ মিনার। এছাড়াও সামনের দিকে বড় দরজার ওপর আরো দুটি সরু মিনার রয়েছে। সব মিলিয়ে মোট ৫টি দরজা আছে। তিনটি দরজা সম্মুখভাগের দেওয়ালে ও একটি করে দরজা পার্শ্বকক্ষের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করেছে। পার্শ্বকক্ষগুলোরও নিজস্ব প্রবেশপথ এবং জানালা রয়েছে।
পশ্চিম দেওয়ালের মাঝখানে কেন্দ্রীয় মিহরাব। যার আশপাশ সজ্জিত মোঘল স্থাপত্যের আরবি ক্যালিওগ্রাফি, লতাগুল্মের নকশা, মোজাইক নকশা ও জ্যামিতিক চিত্রে। মসজিদের পাশে মাদ্রাসা ও কবরস্থান। রয়েছে কদম মোবারক স্কুল ও ইসলামাবাদী স্মৃতি মিলনায়তন।
আগে ৫ সারিতে দাঁড়িয়ে মাত্র ১০০ জন মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারতেন। মুসল্লির সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় চট্টগ্রাম পৌরসভার চেয়ারম্যান নূর আহমেদ এবং পরবর্তীতে চেয়ারম্যান ফজল করিম ও এলাকার ধর্মপ্রাণ মানুষের উদ্যোগে প্রথম দফা মসজিদটি সম্প্রসারণ করা হয়।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর শিল্পপতি মরহুম সফদর আলী দ্বিতীয় দফা মসজিদটি সম্প্রসারণ করেন। এলাকার ব্যবসায়ী মরহুম হাজী জালাল আহমদ, মরহুম সফদর আলীর ভাই করম আলী এবং এলাকাবাসীদের উদ্যোগে তৃতীয় দফা মসজিদ সম্প্রসারণ করা হয়। তৎকালীন চট্টগ্রাম পৌরসভার কমিশনার মরহুম মোহাম্মদ শরীফ জানাজা পড়ার সুবিধার্থে মসজিদের সামনে খোলা প্রাঙ্গণে কংক্রিটের ছাদ নির্মাণ করে দেন। ২০১৭ সালে ৬৭ লাখ টাকা ব্যয়ে কদম মোবারক শাহি জামে মসজিদের দ্বিতীয় তলার নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়। মসজিদ সম্প্রসারণ করার পর বর্তমানে একসাথে ১ হাজার মুসল্লি নামাজ পড়তে পারেন।
এ মসজিদের পাশে কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসিন খান, কদম মোবারক মুসলিম এতিমখানার প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদীসহ অনেক গুণীজন।
মসজিদে প্রতিবছর ঝাউতলা, মোমিন রোড, জামাল খান, কদম মোবারক, রহমতগঞ্জ ও আন্দরকিল্লা মহল্লা কমিটির উদ্যোগে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (স.) পালন করা হয়। এছাড়াও বড় পীর আব্দুল কাদের জিলানীর (রহ.) ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহমও পালন করা হয়। শুক্রবার জুমার দিন হাজারও মুসল্লি আসেন এখানে নামাজ পড়তে।
বাংলাদেশ সময়: ১২০০ ঘণ্টা, মার্চ ০৭, ২০২৫
এসি/টিসি