ঢাকা, সোমবার, ২৪ ফাল্গুন ১৪৩১, ১০ মার্চ ২০২৫, ০৯ রমজান ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

দায়সারা স্বাস্থ্যসেবা অস্থায়ী ভবনে

সৈয়দ বাইজিদ ইমন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৪ ঘণ্টা, মার্চ ৯, ২০২৫
দায়সারা স্বাস্থ্যসেবা অস্থায়ী ভবনে ...

চট্টগ্রাম: দীর্ঘদিন আধুনিক চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত কর্ণফুলী উপজেলার প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ। সাবেক ভূমি মন্ত্রী ও অর্থ প্রতিমন্ত্রীর দ্বন্দ্বে মুখ থুবড়ে পড়ে সরকারি চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম।

নির্মাণ করা যায়নি স্থায়ী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।

পাশের উপজেলা পটিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হয় এ উপজেলার জনসাধারণের।

এনিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।  

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল কাইয়ুম বলেন, দীর্ঘদিন আমরা স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণে কয়েক দফা উদ্যোগ নিয়েও সফল হয়নি। সাবেক ভূমিমন্ত্রী ও অর্থ প্রতিমন্ত্রীর দ্বন্দ্বের কারণে সব উদ্যোগ ভেস্তে যায়। স্বাস্থ্যসেবা পরিচালনার জন্য নামেমাত্র একটি অস্থায়ী কার্যালয় স্থাপন করা হয়। সেখানে শুধু জ্বর-সর্দির ওষুধ দেওয়া হয়।  জটিল রোগের কোনও পরীক্ষা নীরিক্ষার ব্যবস্থা নেই। নেই রোগী ভর্তির কার্যক্রম।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এ উপজেলায় স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণের প্রক্রিয়া দ্রুত সময়ে শেষ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কাজ দ্রুত শেষ করার তাগাদা দিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ফরিদা খানমও।

এরই মধ্যে নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ কার্যক্রম শেষ হয়েছে কর্ণফুলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের। ৫০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গড়ে তুলতে উপজেলার শিকলবাহায় প্রায় ৫ একর জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়, যা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে হস্তান্তর করে জেলা প্রশাসন। এরপরই শুরু হওয়ার কথা ভবন নির্মাণের কার্যক্রম। কিন্তু সাত বছর পার হয়ে গেলেও শুরু হয়নি ভবন নির্মাণকাজ।  

জানা যায়, ২০১৭ সালে ৫টি ইউনিয়ন নিয়ে কর্ণফুলী উপজেলার কার্যক্রম শুরু হলেও স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে কোনও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গড়ে ওঠেনি। পার্শ্ববর্তী পটিয়া উপজেলার আওতায় স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম চালানো হলেও তা সবার জন্যই কষ্টকর। ২০২১ সালের শেষে উপজেলায় প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হলেও ভবন না থাকায় অন্যত্র থেকে অস্থায়ীভাবে প্রশাসনিক কার্যক্রম চালানো হয়।  

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য প্রশাসন একাধিক স্থান নির্বাচন করলেও আপত্তিসহ নানা কারণে বারবার পিছিয়ে পড়তে হয়। শেষ পর্যন্ত ২০২১ সালের ১৮ অক্টোবর জেলা প্রশাসন বর্তমান উপজেলা কমপ্লেক্সের পাশেই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গড়ে তুলতে ৫ একর জায়গা নির্বাচন করে। বর্তমানে সে স্থানটিতেই গড়ে তোলা হবে উপজেলা স্বাস্থ্য ভবন। এখনও সীমানা প্রাচীর নির্মাণেই সীমাবদ্ধ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রকল্পের কাজ।

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, দীর্ঘদিন জায়গা নিয়ে জটিলতা থাকলেও গত বছর তার সমাধান হয়। সেই জায়গা অধিগ্রহণের পর অবশেষে স্বাস্থ্য বিভাগকে বুঝিয়ে দিয়েছে। আশা করি, খুব দ্রুততম সময়ে কর্ণফুলী উপজেলায় একটি পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কার্যক্রম শুরু হবে।

স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী মনি কুমার শর্মা বাংলানিউজকে বলেন, কর্ণফুলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণ প্রকল্প এখনো একনেকে অনুমোদন হয়নি। সীমানা প্রাচীর নির্মাণকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। প্রকল্প অনুমোদন হলেই টেন্ডার আহ্বান করে ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে।  

পটিয়া উপজেলাধীন চরপাথরঘাটা, চরলক্ষ্যা, শিকলবাহা, জুলধা ও বড়উঠান নিয়ে চট্টগ্রামের ১৫ নম্বর উপজেলা হিসেবে ২০১৬ সালের ৯ মে গঠন করা হয় কর্ণফুলী উপজেলা। প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষের বসবাস এ উপজেলায়।  

কর্ণফুলী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মামুনুর রশীদ বাংলানিউজকে বলেন, কার্যালয় না থাকায় বর্তমানে অস্থায়ীভাবে অন্যত্র থেকে অফিসিয়ালসহ যাবতীয় কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে। যেহেতু নির্ধারিত জায়গা বুঝে পাচ্ছি, তাতে খুব দ্রুতই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণ কাজ শেষ করা যাবে বলে আশাবাদী।

স্থানীয়রা জানান, পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে হলে অন্য উপজেলা অথবা শহরে যেতে হয়। অস্থায়ী যে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স আছে সেখানে যেন অন্তঃবিভাগ চালু করা হয়। কেউ যদি হঠাৎ জটিল রোগে আক্রান্ত হয় তাকে চিকিৎসা দেওয়ার মতো অবস্থা নেই কর্ণফুলী উপজেলায়।  

উপজেলার বড়উঠান ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রকে ৯৪ লাখ টাকা ব্যয়ে অস্থায়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়া উপজেলার চারটি ইউনিয়নে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র রয়েছে। এসব কেন্দ্রে ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একজন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, দুইজন কনসালটেন্ট চিকিৎসকসহ (গাইনি ও মেডিসিন) মোট ১৬ জন বিসিএস চিকিৎসক পদায়ন করেছে সরকার। কিন্তু তাদের অধিকাংশই নিয়মিত কর্মস্থলে আসেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। মাঝেমধ্যে আসলেও চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন না। হাজিরা বহিতে স্বাক্ষর করে কয়েক ঘণ্টা থেকে চলে যান।  

এছাড়া এখানে চিকিৎসা সেবায় আছে ১২টি কমিউনিটি ক্লিনিক। কিন্তু এসব ক্লিনিকের অধিকাংশতেই নেই ডিগ্রিধারী চিকিৎসক। রয়েছে চিকিৎসা সরঞ্জামের সংকট। ফলে সাধারণ মানুষ যথাযথ চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত। নগরীতে গিয়ে উন্নত চিকিৎসা নেওয়া দরিদ্র জনসাধারণের পক্ষে সম্ভব নয়। এখানে গড়ে ওঠেনি বেসরকারি কোনো উল্লেখযোগ্য স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র। যদিও কলেজ বাজারে সূর্যের হাসি ক্লিনিক, সাউথ সিটি হসপিটাল, শিকলবাহায় কমিউনিটি হাসপাতাল, কর্ণফুলী চক্ষু হাসপাতাল গড়ে ওঠেছে। এসব স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নামমাত্র সেবা মিলে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩০ ঘণ্টা, মার্চ ০৯, ২০২৫ 
বিই/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।