চট্টগ্রাম: চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট উইলিয়াম সাইমন জ্যাকসকে সবাই চিনতো টোম রেইডার নামে। যুক্তরাজ্যের লাইব্রেরি থেকে ১০ লাখ পাউন্ডেরও বেশি মূল্যের শত শত দুর্লভ বই চুরি করার দায়ে তিনি দুইবার দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন, কারাবাস করেছেন ৭ বছর।
তবে এবারের বই চুরির গল্পটা যুক্তরাজ্যের নয়, ঘটনা চট্টগ্রামের। চোরের দলকে অবশ্য এজন্য কারাবাস করতে হয়নি এখনও।
২০২৪ সালের ডিসেম্বর থেকে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চালু হওয়া সেবা স্ট্রিট লাইব্রেরি প্রজেক্টের এখন করুণ দশা। এই কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সড়কের পাশে থাকা খুঁটির সাথে বসানো বইয়ের বক্স ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে, বই চুরি হয়ে গেছে অনেক জায়গায়। ঢাকার ধানমণ্ডিতে স্ট্রিট লাইব্রেরি টিকেনি একমাসও। একই অবস্থা খুলনা, সেন্টমার্টিন ও চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে। ভাঙাচোরা বক্স মিলেছে ভাঙারির দোকানে।
নগরে এখন তিনটি স্থানে সেবা স্ট্রিট লাইব্রেরি প্রজেক্টের বক্স আছে। এসব বক্সে বই রেখে আসার সপ্তাহ না ঘুরতেই হাওয়া হয়ে যায়। এই প্রজেক্টের উপদেষ্টা আরিফ মোর্শেদ বাংলানিউজকে বলেন, জামালখান, ডিসি হিল এবং সিআরবিতে খুঁটির সঙ্গে বক্স বসানো হয়েছে মানুষকে বইমুখি করার জন্য। স্টিলের বক্সে তালা দেওয়া থাকে। ছোট্ট গ্লাস সরিয়ে সেই বক্স থেকে নানান ধরনের বই নিয়ে পড়া যায়। কিন্তু চোরের দল বক্সের গ্লাস ভেঙ্গে তালা চুরি করে, সঙ্গে বইও।
তিনি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার (২৯ মে) দেখা গেছে- ডিসি হিল এলাকার বক্স ভেঙ্গে সব বই চুরি হয়ে গেছে। এভাবে বক্স ভেঙ্গে কি লাভ তাদের জানি না। নিজেদের পকেটের টাকায় বই কিনে দেই, একটা বক্স তৈরি করতে অনেক টাকা খরচ হয়। চট্টগ্রামের মানুষের জন্য বই নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা থেকেই যুক্ত হয়েছিলাম সেবা স্ট্রিট লাইব্রেরি প্রজেক্টে। প্রতি সপ্তাহে বই দিয়ে আসি, কিন্তু চুরি হয়ে যায়’।
এই চোর চক্রে টোকাই, নেশাগ্রস্ত ভবঘুরে লোকের পাশাপাশি কিছু শিক্ষার্থীও যুক্ত বলে জানতে পেরেছেন সেবা স্ট্রিট লাইব্রেরি প্রজেক্ট সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, শিক্ষার্থীরা বই পড়ার জন্য বাসায় নিয়ে যায়। পরবর্তীতে আর ফেরত দিয়ে যায় না। কেউ আবার না পড়লেও ইচ্ছে করেই বই চুরি করে।
বইয়ের ডাকাত হিসেবে পরিচিত মার্কিনি স্টিফেন ব্লুমবার্গ ৩০ বছরে ২৩ হাজার ৫শটির বেশি বই চুরি করেছিলেন। কিন্তু বিক্রি করেননি। বিক্রি করলে পেতেন ৫ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি। তিনি বই পড়তেন আর জমাতেন।
মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, বই পড়ুয়াদের হরেক রকম অভ্যাস থাকে। কেউ দ্রুত বই পড়তে পারে। আবার কেউ পড়া শেষ হয়ে যাওয়ার ভয়ে সংগ্রহের বই পড়েই না। লাইব্রেরি বা অন্যের বাড়ি থেকে বই চুরি করেছে, এমন মানুষের সংখ্যাও কম নয়। এর মধ্যে টাকার অভাবে কিনতে পারছে না, এমন ব্যক্তি যেমন আছে তেমনি স্বভাবের কারণে বই চুরি করার প্রমাণও আছে। যারা বই চুরি করে তাদের বলা হয় ‘বিবলিওক্লেপ্ট’।
মানুষের এমন আচরণে নতুন করে আউটডোর লাইব্রেরি করার সাহস পাচ্ছেন না আরিফ মোর্শেদ। তিনি বললেন, ‘এই প্রজেক্ট চলবে। যতবার বক্স ভাঙ্গবে, ততবার লাগাবো। যতবার বই চুরি করবে, ততবার রিফিল করবো’।
এসি/টিসি