ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ ভাদ্র ১৪৩২, ২১ আগস্ট ২০২৫, ২৬ সফর ১৪৪৭

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

দাঁড়িপাল্লা-নৌকা একই সূত্রে গাঁথা: সরওয়ার আলমগীর

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭:০৪, আগস্ট ২০, ২০২৫
দাঁড়িপাল্লা-নৌকা একই সূত্রে গাঁথা: সরওয়ার আলমগীর চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সরওয়ার আলমগীর

চট্টগ্রাম: “জামায়াত বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছে আর আওয়ামী লীগ পাকিস্তান চলে গিয়েছিল। দুইটাই এক; দাঁড়িপাল্লা-নৌকা একই সূত্রে গাঁথা।

দাঁড়িপাল্লা একাত্তর সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল আর আওয়ামী লীগ (শেখ মুজিবুর রহমান) পাকিস্তান চলে গিয়েছিল। ”

এমন মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সরওয়ার আলমগীর।

বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।

সরওয়ার আলমগীর বলেন, তারেক রহমান এখন বাংলাদেশের নেতা। দেশের আপামর জনসাধারণ তার জন্য অপেক্ষা করছে। শিগগির তিনি দেশে ফিরবেন। দেশের মানুষ আগামী দিনে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ছেলে তারেক রহমানকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চায়। এরই মধ্যে এটা প্রমাণ হয়ে গেছে। বাংলাদেশের মানুষ জিয়া পরিবারের কাছে ঋণী।

জামায়াতে ইসলামী ও আওয়ামী লীগ প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেতা বলেন, জামায়াত বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছে আর আওয়ামী লীগ পাকিস্তান চলে গিয়েছিল। দুইটাই এক। দাঁড়িপাল্লা-নৌকা; ওরা একই সূত্রে গাঁথা। দাঁড়িপাল্লা একাত্তর সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল আর আওয়ামী লীগ (শেখ মুজিবুর রহমান) পাকিস্তান চলে গিয়েছিল।

“এর বাইরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে ছিলেন জিয়াউর রহমান। তিনি স্বাধীনতার ঘোষক। জামায়াতকে কোনো রাজনৈতিক দলই মনে করি না। এটা বিশাল ব্যবসায়ী সংগঠন। ওদের কাছে ৫ বিলিয়ন টাকা আছে। ওরা এই টাকা দিয়ে ইসলামকে ব্যবহার করে ধর্মান্ধ মানুষকে টানে। এখন বাংলাদেশের মানুষ অনেক সচেতন। আগামী দিনে একটা অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। এখন জামায়াত মধু খাচ্ছে, প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় জামায়াতের লোকজন। কিন্তু নির্বাচন হয়ে গেলে তাদের হাতে আর এই মধু থাকবে না। এ কারণেই তারা নির্বাচন চায় না। ইনশাআল্লাহ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ জামায়াতের মধু খাওয়াও শেষ করবে। ’৯৬ সালে জামায়াতকে ৩টা আসন দেশের মানুষ দিয়েছে, এই নির্বাচনের মাধ্যমে জামায়াতের রাজনীতিও আওয়ামী লীগের মতো চিরতরে শেষ হবে। আগামী দিনের বাংলাদেশ, তারেক রহমানের বাংলাদেশ—এটাই প্রতিষ্ঠিত হবে। ”

সরওয়ার আলমগীর আরও বলেন, বর্তমান সময়ে পিআর পদ্ধতির কোনও সুযোগ নেই। যদি পিআর নিয়ে সিদ্ধান্তের প্রশ্ন আসে, তবে তা হতে হবে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পর, গণভোটের মাধ্যমে। তখন জনগণই নির্ধারণ করবে বাংলাদেশে পিআর চালু হবে, নাকি বর্তমান সংবিধানের ভিত্তিতেই নির্বাচন হবে।

শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের অবদানের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের, স্বাধীনতার সপক্ষের দল। ৭১ সালে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট থেকে বের হয়ে কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। সেদিন শেখ মুজিব পাকিস্তানের পিন্ডি (রাওয়ালপিন্ডি) চলে গিয়েছিল। শেখ মুজিব তো স্বাধীনতার ঘোষণা দেয় নাই।

“১৯৭৪-৭৫ এর দুর্ভিক্ষে মানুষের লাশ যখন কলাপাতা দিয়ে দাফন করা হচ্ছিল, এমন এক সময়ে ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর একটি বিপ্লবের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রক্ষমতায় আসেন। এরপরই বিশ্ব দরবারে একটি অন্যতম রাজনৈতিক দল হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে বিএনপি। একইভাবে বিশ্বের অন্যতম নেতা হিসেবে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান পরিচিত হয়েছেন। তিনি বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা। মধ্যপ্রাচ্যে জিয়াউর রহমানের নামে গাছের নামকরণ হয়েছে ‘জিয়া ট্রি’। তিনি ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধের সময়কার গোল্ড মেডেলিস্ট। ওই যুদ্ধে পাকিস্তান জিতেছিল হিন্দুস্তান থেকে। তিনি কলকাতার হেয়ার স্কুলের মেধাবী ছাত্র ছিলেন। রাষ্ট্র নিয়ে তার চিন্তা-চেতনা অনন্য। ১৯৮১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিলেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, এটা ছিল স্বর্ণযুগ। ”

সরওয়ার আলমগীর আরও বলেন, ১৯৯১-৯৬ সাল পর্যন্ত স্বৈরাচার এরশাদের পতনের পর শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ কলকাতা এয়ারপোর্টে বলেছিল—বিএনপি ১০টা সিট পাবে, বিএনপি সেদিন রাষ্ট্রক্ষমতায় আসে। এই যে শহীদ জিয়াউর রহমানের দল, উন্নয়নের রাজনীতি, কৃষকদের জন্য খাল কাটা, শ্রমিকদের জন্য কলকারখানা—এগুলো মানুষের হৃদয়ে গেঁথে আছে।

২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র হয়েছে উল্লেখ করে সরওয়ার আলমগীর বলেন, হিন্দুস্তানের ষড়যন্ত্রের কারণে ওয়ান-ইলেভেনের সৃষ্টি। ওয়ান-ইলেভেনে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে এমন কোনো নির্যাতন নেই, যা করেনি। তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ছেলে, সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধানের ছেলে এবং স্বাধীনতার ঘোষকের ছেলে, রাষ্ট্রপতির ছেলে তারেক রহমান। বাংলাদেশের মানুষের চিন্তার ধারক বাহক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের রক্ত তারেক রহমানের শরীরে। তার হাতে যদি আজ বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতা যায়, বাংলাদেশ অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে যাবে। নিরাপদ থাকবে বাংলাদেশ।

“জিয়া পরিবারের সারাদিনের চিন্তা এই বাংলাদেশকে নিয়ে। যখন বিপথগামী সেনাবাহিনীর কতিপয় সদস্য শেখ মুজিবকে হত্যা করে, তারপর ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জিয়াউর রহমান বীর উত্তম রাষ্ট্রক্ষমতায় আসেন। ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামে তাকে হত্যার পর ১৯৯০ সাল পর্যন্ত স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। বাংলাদেশের ক্রান্তিলগ্নে এ দেশ সৃষ্টির পেছনে যে নেতা, যে পরিবার-তাদের জন্য অপেক্ষায় দেশের মানুষ। ”

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের মানুষ বিএনপিকে ভোট দেয়ার জন্য মুখিয়ে আছে। কারণ বিএনপি মানে দেশের উন্নয়ন, নিরাপত্তা। বিএনপির আমল ছিল দেশের স্বর্ণযুগ, তাই মানুষ ভোট দিয়ে বিএনপিকে আবারও ক্ষমতায় আনবে ইনশাআল্লাহ। বিএনপি দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করে।

সরওয়ার আলমগীর বলেন, গোপালগঞ্জের বাইরে বাংলাদেশের কোথাও কিছু হয়নি। যা হয়েছে-বেসরকারিভাবে হয়েছে। গত ১৬ বছরে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল শুধু লুটপাট করার জন্য। বাংলাদেশের মানুষের লক্ষ-হাজার কোটি টাকা তারা পাচার করেছে। ব্যাংকগুলো দেউলিয়া হয়ে গেছে। ৫ আগস্ট যদি না হতো, বাংলাদেশের অবস্থান কী হতো, এটা মহান রাব্বুল আলামিন ছাড়া কেউ জানে না।

ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ উপজেলা ফটিকছড়ি। এই উপজেলা ফেনী ও মাগুরা জেলার সমান। ফটিকছড়ি উপজেলায় অনেক খাস জমি আছে। এশিয়ার সর্ববৃহৎ চা বাগান ফটিকছড়িতে, ১৮টি চা বাগান আছে। ৪টি রাবার বাগান আছে। এখনও অনাবাদি অনেক সম্পদ আছে। সেমুতাং গ্যাসক্ষেত্র থেকে গ্যাস জাতীয় গ্রিডে চলে গেছে। এই গ্যাস এখানকার মানুষের কোনো কাজে আসছে না। অথচ গ্যাস যদি চা বাগান-রাবার বাগানে দেওয়া হয়, তাহলে উৎপাদন আরও দ্বিগুণ হবে। গ্যাস পেলে চা পাতা তৈরি বাড়বে, খরচ অনেক কমবে।

“বাংলাদেশে অনেক কারখানা, ঢাকা থেকে টাঙ্গাইল পার হয়ে জামালপুর পর্যন্ত, ঢাকা থেকে সিলেট পর্যন্ত, ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জের সব কারখানা গ্যাসের জন্যই চলে। মীরসরাইয়ে শিল্পজোন হয়েছে, সেখানে গ্যাস নাই। মীরসরাইয়ের মতো পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পাহাড়ের পাদদেশে, সমুদ্রপৃষ্ঠে শিল্প-কারখানা আছে। আমি চাই, ফটিকছড়িতে যেসব অনাবাদি কৃষি জমি এবং পাহাড়ের পাদদেশে যেসব জমি আছে, সেখানে যেন শিল্পকারখানা গড়ে ওঠে। আমি বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীকে অনুরোধ জানাব, ফটিকছড়িতে যদি এরকম শিল্পকারখানা গড়ে ওঠে, তাহলে পুরো চিত্রই পাল্টে যাবে। ”

সরওয়ার আলমগীর আরও বলেন, ফটিকছড়ি থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের দূরত্ব ১ ঘণ্টা থেকে ১ ঘণ্টা ১০ মিনিট। ঢাকা থেকে লাগে ২ দিন। ঢাকার বাইরে থেকে এক্সপোর্টারদের মালামাল চট্টগ্রাম বন্দরে আসতে ২ থেকে ৩ দিন লাগে, সেখানে মাত্র ১ ঘণ্টা ১০ মিনিটে চট্টগ্রাম বন্দরে চলে যেতে পারবে। এতে সময় বাঁচবে, অর্থনৈতিকভাবেও অনেক সাশ্রয় হবে। ৩ দিনের ট্রাক ভাড়া যেখানে ১ লাখ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা দিতে হয়, ফটিকছড়ি থেকে মাত্র ১০ হাজার টাকা দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে মালামাল চলে যাবে।

আওয়ামী লীগ হিন্দুদের বলির পাঁঠা হিসেবে ব্যবহার করেছে মন্তব্য করে বিএনপির এই নেতা বলেন, হিন্দুদের এখানে জুলুম-নির্যাতন করার ঘটনা ডাহা মিথ্যা। হিন্দুরা গত ৫২ বছরে জন্মাষ্টমীতে যে মঙ্গল শোভাযাত্রা ফটিকছড়িতে করতে পারেনি, সেদিন নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় তারা সেটা পেরেছে। তারা এটাও স্বীকার করেছে। আগে যখন শোভাযাত্রা করতে যেত, আগেরদিন আওয়ামী লীগের ক্যাডাররা চাঁদা চাইতো। দেশটাকে কোথায় নিয়ে গেছে ওরা? একদিকে বলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, আরেকদিকে সাম্প্রদায়িকতাকে ব্যবহার করে রাষ্ট্র ক্ষমতায় থেকে পুরো রাষ্ট্রকে শেষ করে দিয়েছে।

তিনি বলেন, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিগত আওয়ামী লীগ ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলের ১৬ বছর আমি ফটিকছড়িতে মাঠে ছিলাম, মামলা দিয়ে, হামলা করেও আমাকে দমাতে পারেনি। ৫ আগস্টের পরও আমি একইভাবে ফটিকছড়িতে আছি। প্রতিদিনই আমি কর্মসূচি পালন করছি। ফটিকছড়ির মাটি বিএনপির শক্ত ঘাঁটি।

এসি/টিসি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।