ঢাকা, সোমবার, ৩০ ভাদ্র ১৪৩২, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২২ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

আল্লামা হাফেজ আহমদুল্লাহর জানাজায় মানুষের ঢল

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩:০১, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৫
আল্লামা হাফেজ আহমদুল্লাহর জানাজায় মানুষের ঢল ...

চট্টগ্রাম: প্রখ্যাত আলেমে, হাদিস বিশারদ ও আল জামিয়া আল ইসলামিয়া পটিয়ার শায়খুল হাদিস, প্রধান মুফতি ও মুহতামিম আল্লামা হাফেজ আহমদুল্লাহ (রহ.) আর নেই (ইন্নালিল্লাহি...রাজিউন)।

রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) সকাল ৬টা ৫০ মিনিটে নগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর।

আল্লামা আহমদুল্লাহ আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিস বাংলাদেশের সহ-সভাপতি, ইসলামিক ফিকহ বোর্ড বাংলাদেশের পৃষ্ঠপোষক এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সালসাবিলের প্রধান উপদেষ্টা।

 

রাত নয়টায় মাদরাসা প্রাঙ্গণে আহমদুল্লাহর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা মানুষের ঢল নামে। জানাজা শেষে মাদ্রাসার মাকামে আজিজিয়া কবরস্থানে দাফন করা হয়।  

সলিমুদ্দীন মাহদী কাসেমী জানিয়েছেন, আল্লামা হাফেজ মুফতি আহমদুল্লাহ (রহ.) ছিলেন বহুমাত্রিক ব্যক্তিত্ব; ইলমের মশাল, তাকওয়ার প্রতিচ্ছবি আধ্যাত্মিকতার প্রদীপ এবং একইসাথে এক অনন্য রাহবর। ব্যক্তিগত জীবনে ছিলেন বিনয় ও প্রজ্ঞার সমন্বয়ে গড়া এক বিরল চরিত্র, আর প্রাতিষ্ঠানিক জীবনে ছিলেন আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়ার সর্বোচ্চ পদমর্যাদায় আসীন; সদরে মুহতামিম, শায়খুল হাদিস ও প্রধান মুফতি। জাতীয় পর্যায়ে তিনি শুধু একজন শিক্ষাবিদ নন, ছিলেন এক আলোকবর্তিকা, পীরে কামেল, যিনি অগণিত ছাত্র-শিক্ষক, আলেম-উলামা এবং সাধারণ মানুষের হৃদয়ে দ্বীনের প্রতি প্রেম, নিষ্ঠা ও দায়িত্ববোধ জাগিয়ে তুলেছিলেন। তাঁর দীর্ঘ কর্মজীবন জুড়ে প্রতিটি পদক্ষেপ ছিল দ্বীনের খেদমত ও সমাজকে সঠিক পথে পরিচালনার এক অনন্য সাধনা।  

১৯৪১ সালের ১২ মে পটিয়ার নাইখাইন গ্রামের মুন্সি বাড়িতে মাওলানা ঈসা সাহেব (রহ.)–এর ঘরে জন্ম গ্রহণ করেন আল্লামা হাফেজ মুফতি আহমদুল্লাহ (রহ.)। মাত্র ১০ বছর বয়সেই জামিয়া আরবিয়া জিরিতে হিফজ সম্পন্ন করে হয়ে ওঠেন ‘হাফেজ সাহেব’। প্রাথমিক শিক্ষার ধাপ অতিক্রম করে দাওরায়ে হাদিস শেষ করেন প্রথম স্থান নিয়ে। লাহোরের জামিয়া আশরাফিয়া, মুলতানের খায়রুল মাদারিস এবং করাচির দারুল উলুম; প্রতিটি বিদ্যাপীঠ তাঁর জ্ঞানের সমুদ্রপিপাসা মেটানোর ক্ষেত্র হয়ে ওঠে। সেখানে তিনি একে একে ইলমের নানা শাখায় উচ্চতর শিক্ষা লাভ করেন, প্রথম স্থান অর্জন করেন, এবং উস্তাদদের ভালোবাসা ও সম্মান লাভ করেন। দারুল উলুম করাচিতে মুফতি আজম আল্লামা শফি রহ. এর তত্ত্বাবধানে ইফতা সম্পন্নের মাধ্যমে শেষ হয় তাঁর ছাত্রজীবনের দীর্ঘ যাত্রা।

১৩৮৮ হিজরীর শাওয়ালে মাতৃভূমিতে ফিরে তিনি আবারও আঁকড়ে ধরলেন শিক্ষার মশাল। জামিয়া আরবিয়া জিরিতে সুদীর্ঘ ২৩ বছর শিক্ষকতা করেন, শেষে হন শায়খুল হাদিস। এরপর ১৪১১ হিজরিতে আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়ায় শায়খুল আরব ওয়াল আজম হজরত শাহ ইউনুস রহ.–এর আহ্বানে মুহাদ্দিস ও মুফতি হিসেবে যোগ দেন। তারপর থেকে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত প্রায় চার দশক তিনি ছিলেন জামিয়া পটিয়ার প্রাণস্পন্দন সদরে মুহতামিম, শায়খুল হাদিস ও প্রধান মুফতি এবং আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিস বাংলাদেশের সভাপতি।  

তাঁর বইয়ের মধ্যে রয়েছে- সহীহ বুখারীর ব্যাখ্যা ও হানাফি মাযহাবের যুক্তিসমৃদ্ধ জবাব, চট্টগ্রামের মাশায়েখগণ (বাংলা ও উর্দু সংস্করণ), তাজকেরাতুন নূর, তাসকীনুল খাওয়াতির ফী শরহিল আশবাহি ওয়ান্নাযায়ির, ইসলামের দৃষ্টিতে শেয়ার বাজার, আহমদী সুবাসিত খুতবা, এক এর ভিতর সাত, হায়াতে আহমদী (আত্মজীবনী) ইত্যাদি।  

এআর/পিডি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

চট্টগ্রাম প্রতিদিন এর সর্বশেষ