ঢাকা, বুধবার, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১, ০৩ জুলাই ২০২৪, ২৫ জিলহজ ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

চট্টগ্রাম ও মহসীন কলেজ শিবিরমুক্ত করতে মহিউদ্দিনের আলটিমেটাম

চবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৮, ২০১৪
চট্টগ্রাম ও মহসীন কলেজ শিবিরমুক্ত করতে মহিউদ্দিনের আলটিমেটাম ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম: শিবির নিয়ন্ত্রিত চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ ও হাজী মুহাম্মদ মহসীন কলেজ  ছাত্রবাস শিবিরমুক্ত করতে ১৫ দিনের সময় বেধে দিয়েছেন নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী।

সোমবার বিকেলে নগরীর লালদীঘি মাঠে আয়োজিত এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে শিবির ক্যাডারদের গ্রেফতার করে সরকারি কলেজগুলো শিবিরমুক্ত করতে হবে।

না হলে আমাদের সন্তানদেরকে (ছাত্রলীগ) কন্ট্রোল করতে পারব না।

চট্টগ্রাম ও মহসীন কলেজ অস্ত্রভান্ডারে পরিণত হয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, কলেজগুলোর হল থেকে অস্ত্র উদ্ধার হয় অথচ কেউ গ্রেফতার হয় না।
এসব সরকারি কলেজ শিবিরমুক্ত করতে প্রশাসনকে অনেক সময় দিয়েছি, আর নয়।

চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ ও হাজী মুহাম্মদ মহসীন কলেজ শিবিরমুক্ত করার দাবিতে নগর ছাত্রলীগ এ ছাত্রসমাবেশের আয়োজন করে। সমাবেশ থেকে প্রশাসনের কাছে সাত দফা দাবি পেশ করা হয়।

মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের জ্ঞান অর্জনের জন্য কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠান। কিন্তু একটি চক্র শিক্ষার্থীদের ফাঁদে ফেলে তাদের জঙ্গী কর্মকান্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত করছে। মেধাকে নষ্ট করে দিচ্ছে।

কলেজ প্রশাসনকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, জঙ্গীবাদীদের প্রশ্রয় দিবেন না। জঙ্গীবাদকে প্রশ্রয় দিলে আপনাদেরকে মাফ করা হবে না। যদি তাদেরকে মোকাবেল করতে না পারেন তবে চাকরি ছেড়ে দিন। অনেক খেলেছেন আর নয়।
 
প্রশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন
সাতদিনের মধ্যে চট্টগ্রাম ও মহসীন কলেজসহ সরকারি কলেজগুলো শিবিরমুক্ত না করলে প্রশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম।

সমাবেশে প্রধান বক্তার বক্তব্যে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম কলেজ ও হাজী মুহাম্মদ মহসীন কলেজের ছাত্রবাসগুলো বন্ধ করে সাত দিনের মধ্যে শিবিরমুক্ত না করলে প্রশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করব। প্যারেড ময়দানে বিভাগীয় ছাত্র সমাবেশ করে চট্টগ্রাম কলেজ ও মহসীন কলেজে ছাত্রলীগ অবস্থান করবে।

শিবিরের সাথে কোন আপস নেই বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যারা শিবিরের সঙ্গে আপসের কথা বলবে তাদের গালে কষে থাপ্পড় দিতে হবে। যেখানে শিবির পাওয়া যাবে সেখানে তাদেরকে প্রতিহত করতে হবে।

তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল। ১৯৭৫ সালে স্বাধীনতা বিরোধীরা জাতির পিতাকে হত্যা করে আমাদেরকে চোখের জলে ভাসিয়ে দিয়েছিল। আমরা এখনো পর্যন্ত কাঁদছি। আর বার আউলিয়ার পুণ্যভূমি চট্টগ্রামে তারা আস্তানা গড়ে তুলেছে। চট্টগ্রামের বিভিন্ন সরকারি কলেজ দখলে নিয়ে বাংলাদেশকে আফগানিস্তান বানানোর পরিকল্পনা করছে। এখানে থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গী কর্মকান্ড পরিচালনা করছে।

ছাত্রলীগ কর্মীদের উদ্দেশ্যে সিদ্দিকী নাজমুল বলেন, সবার কাছ থেকে ভালবাসা আশা করবেন না। ভালবাসার জবাব যদি ভালবাসা হয় তবে মারের জবাব হবে পাল্টা মার। আমরা চট্টগ্রামে আর ছাত্রলীগ ভাইদের লাশের মিছিল বাড়াতে চাই না। তাই ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ঐক্যবদ্ধ হয়ে শিবিরের বিরুদ্ধে আন্দোলন করলে তারা ছাত্রলীগের সামনে টিকতে পারবে না।

গণমাধ্যমের উদ্দেশ্যে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ছাত্রলীগ সামান্য ভুলত্রুটি করলে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করি। তবুও গণমাধ্যম ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে লেখালেখি করে। কিন্তু শিবির সারা দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আমাদের নেতাকর্মীদের উপর হামলা ও হত্যা করছে সে ব্যপারে গণমাধ্যমে কোন সংবাদ দেখতে পাই না।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, জঙ্গীবাদী সংগঠন শিবিরকে প্রতিহত করতে নগর ছাত্রলীগের পরিকল্পনার সঙ্গে নগর আওয়ামী লীগের সমর্থন থাকবে।

চট্টগ্রাম ও মহসীন কলেজসহ যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিবিরের দখলে রয়েছে সেগুলো মুক্ত করার জন্য ছাত্রলীগকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ঐক্যবদ্ধ ছাড়া একাজ সম্পন্ন করা যাবে না।

সমাবেশে তুলে ধরা দাবিগুলো হলো- চট্টগ্রাম কলেজের সকলহল বন্ধ করা, চট্টগ্রাম কলেজে নির্মিত বঙ্গবন্ধু ম্যুরালে বঙ্গবন্ধুর ছবি স্থাপন, জামাত শিবিরের চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার, স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী অধ্যক্ষ নিয়োগ, ছাত্র সংসদ নির্বাচন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা প্রদানে কলেজ ক্যাম্পাসে পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন ও শিবিরকে সহায়তাকারী শিক্ষকদের বদলী।

নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমুর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রণির পরিচালনায় অনুষ্ঠিত ছাত্র সমাবেশে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ সভাপতি জয়দেব নন্দী ও সামিউল হক টিটু, সহ সম্পাদক হাবিবুর রহমান তারেক ও কার্যনির্বাহী সদস্য শেখ মহিউদ্দিন বাবুসহ কেন্দ্রীয়, জেলা ও মহানগর নেতৃবৃন্দ।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৮, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।