বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) নিয়োগকৃত সি-ট্রাকের কমিশন এজেন্ট কাম বোট কন্টাক্টরের দায়িত্বে অবহেলা ও বৈরী আবহাওয়ার মাঝেও যাত্রী পারাপারের কারণেই এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে আসে।
কুমিরা-গুপ্তছড়া ঘাটে যাত্রী ও মালামাল পরিবহনের ক্ষেত্রে জেলা পরিষদের খাস আদায়কারীর সঙ্গে বিআইডব্লিউটিসি’র কন্ট্রাক্টরের সমন্বয় না থাকাকেও দায়ী করা হয়।
ছোট সি-বোট ‘এসটি সালাম’ সেদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় সীতাকুণ্ডের কুমিরা ঘাট থেকে সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া ঘাট পর্যন্ত যাত্রী পারাপার করতে গিয়ে উল্টে যায়।
এ প্রাণহানির ঘটনায় তখনকার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. মমিনুর রশিদকে প্রধান করে সন্দ্বীপ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, পুলিশ সুপারের প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম কোস্টগার্ডের প্রতিনিধি, ফায়ার সার্ভিসের প্রতিনিধি, বিআইডব্লিউটিসি’র প্রতিনিধি ও জেলা পরিষদের প্রতিনিধিকে নিয়ে ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে দেয় জেলা প্রশাসন।
ওই কমিটি প্রাণহানির কারণ চিহ্নিত করে সুপারিশমালাসহ তদন্ত রিপোর্ট জমা দিয়েছে সাতমাস আগেই।
তদন্ত কমিটির প্রধান বর্তমানে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. মমিনুর রশিদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘সি-বোট উল্টে ১৮ জনের প্রাণহানির ঘটনায় জেলা প্রশাসনের নির্দেশনায় আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করি। বেঁচে যাওয়া কয়েকজনের সঙ্গেও সরাসরি কথা বলেছি। তদন্তে বেশ কিছু বিষয় উঠে এসেছে’।
‘বৈরী আবহাওয়ার মধ্যেও সি-ট্রাক ছাড়া, সেটির কমিশন এজেন্ট মো. ইকরাম উদ্দিন ও বোট কন্ট্রাক্টর মাহমুদুর রহমান মান্নার চরম দায়িত্বে অবহেলা এবং বিআইডব্লিউটিসি’র নিয়োগপত্রের শর্ত লঙ্ঘনের কারণেই ১৮ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। সীতাকুণ্ডের কুমিরা-গুপ্তছড়া ঘাটে অনুকূল আবহাওয়ায়ও দুই ট্রিপের বেশি যাত্রী পারাপার করে না কোনো সি-ট্রাক।
সেখানে নিয়োগপত্রের শর্ত লঙ্ঘন ও নিরাপত্তার বিষয়টিকে উপেক্ষা করে বিকেল ৫টার পর বৈরী আবহাওয়ার মধ্যেও সি-ট্রাকটি তিন ট্রিপে যাত্রী পারাপার করেছে। ধারণ ক্ষমতার তিনগুণ যাত্রী নিয়ে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে সি-ট্রাকটি যখন সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া ঘাটের অদূরে পৌঁছে, তখন ঢেউয়ের তোড়ে সেটির সঙ্গে অন্ধকারে যাত্রী পারাপার করতে আসা লাল বোটের ধাক্কা লাগে। এ সময় ডুবন্ত যাত্রীরা চিৎকার করলেও সি-ট্রাক থেকে তাদেরকে লাইফ জ্যাকেট ও বয়া দেওয়া হয়নি। এটি করা হলে প্রাণহানি অনেকটা কম হতো’।
মো. মমিনুর রশিদ আরও বলেন, তদন্তে একটি বিষয় স্পষ্ট উঠে এসেছে। সি-ট্রাকের কমিশন এজেন্টের দায়িত্বে অবহেলায় এ প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। পাশাপাশি বিআইডব্লিউটিসি’র নিয়োগকৃত সি-ট্রাকের কমিশন এজেন্ট কাম বোট কন্ট্রাক্টরের সঙ্গে জেলা পরিষদের খাস আদায়কারীর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে বলেও জানান তিনি।
তবে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেওয়ার সাতমাস পার হলেও এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। দায়ী সকলেই স্ব স্ব দায়িত্বে বহাল তবিয়তে রয়েছেন বলেও জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৭
এসবি/টিসি/এএসআর