ঢাকা, রবিবার, ১৬ আষাঢ় ১৪৩১, ৩০ জুন ২০২৪, ২২ জিলহজ ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

বিদ্যালয়ের অর্থ নিয়ে নয় ছয়, প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২০৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৪, ২০২২
বিদ্যালয়ের অর্থ নিয়ে নয় ছয়, প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ 

চট্টগ্রাম: তিনি স্কুলের প্রধান শিক্ষক। শিক্ষকতার পাশাপাশি স্কুল পরিচালনা করা যার দায়িত্ব।

কিন্তু তিনিই কিনা রক্ষক হয়ে ভক্ষকের ভূমিকায়। বলছি সাতকানিয়া উপজেলার খাগরিয়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অনুপম মহাজনের কথা।
 

তার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এরই মধ্যে গড়িয়েছে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড পর্যন্ত।  

অভিযোগ রয়েছে, প্রভিডেন্ড ফান্ডের টাকা নিয়ে নয় ছয়, নথির তথ্য সংশোধনের জন্য শিক্ষাবোর্ডে নামে ঘুষ আদায়, বোর্ডের নিয়ম না মেনে শিক্ষার্থীদের টিসি প্রদান, আয় ও ব্যয়ের তথ্য বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটিকে অবহিত না করা, বিদ্যালয় থেকে নথি সংগ্রহে এলেই শির্ক্ষাথীদের কাছ থেকে মাত্রাতিরিক্ত আদায় করেন তিনি।  

জানা গেছে, এরই মধ্যে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শিক্ষাবোর্ড বরাবর লিখিত অভিযোগে সুপারিশ করেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম চৌধুরী। এছাড়া বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি সাহিদা আখতার জাহানও এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। শুধু তাই নয়, স্কুলের এই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন মো. জসিম উদ্দিন নামে একজন অভিভাবকও।

অভিভাবকের দেওয়া অভিযোগে বলা হয়, প্রধান শিক্ষক অনুপম মহাজন এই বিদ্যালয়কে বানিয়েছেন অনিয়ম ও দুর্নীতির আখড়া। তিনি লাখ লাখ টাকা লুটপাট করছেন। সনদ উত্তোলন, প্রত্যয়নপত্রের জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে হাতিয়ে নিচ্ছে স্কুল পরিচালনায় নিযুক্ত ব্যক্তিরা। এমনকি রেজিস্ট্রেশন কার্ড বা কোনো নথির তথ্য সংশোধনের জন্য চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে ঘুষ দিতে হয় উল্লেখ করে বোর্ডের কর্তাব্যক্তিদের নাম ভাঙিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে টাকা। এছাড়া এসএসসি পরীক্ষার ফরমপূরণের নামে প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা বাড়তি আদায় করে প্রধান শিক্ষক। কিছুদিন আগেও শিক্ষার্থীরা অতিরিক্ত ফি আদায়ের বিরুদ্ধে ৯৯৯ নম্বরে কল দিয়ে অভিযোগ করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে শিক্ষার্থী প্রতি অতিরিক্ত নেওয়া ২০০০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হয় প্রধান শিক্ষক।

অভিযোগে বলা হয়, করোনার কারণে বার্ষিক পরীক্ষায় মাত্র তিনটি বিষয়ে পরীক্ষা গ্রহণের সরকারি সিদ্ধান্তের পরও স্বাভাবিক সময়ে নেওয়া ৮ থেকে ১১টি পরীক্ষার সমপরিমাণ ১৫০ টাকা করে পরীক্ষার ফি নেওয়া হয়। প্রত্যেক শিক্ষক হাজিরা খাতায় প্রতিদিন স্বাক্ষর করলেও প্রধান শিক্ষক অনুপম মহাজন দুই-তিন মাস পর একদিনেই মনগড়া সব স্বাক্ষর করেন হাজিরা খাতায়। আপ্যায়ন ও যাতায়াত ব্যয়ের নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে এই বিদ্যালয় থেকে।  

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযোগকারী জসিম উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, কথায় কথায় প্রধান শিক্ষক টাকা তুলেন শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে। কখনও সনদের নামে, কখনও পাবলিক পরীক্ষার ফরম পূরণের নামে। সনদের নাম-পরিচয় সংশোধনের জন্য কোনো শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে গেলে শিক্ষাবোর্ডে ঘুষ দিতে হয় জানিয়ে প্রধান শিক্ষক হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নেন। গভর্নিং বডির নির্বাচন উপলক্ষে মৃত ব্যক্তিকে জীবিত দেখিয়ে ভোটার তালিকা প্রকাশ করেন প্রধান শিক্ষক। এ বিষয়ে আমি হাইকোর্টে রিট করি। হাইকোর্ট নির্বাচন স্থগিতের আদেশ দেয়। এ আদেশের কপি বিদ্যালয়ে জমা দিতে গেলে গত ১৪ ডিসেম্বর প্রধান শিক্ষক অনুপম মহাজন এবং তার সঙ্গে থাকা কিছু বখাটে আমাকে লাঞ্ছিত করে। এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না করলে আমার প্রাণনাশেরও হুমকি দেন।  

তিনি বলেন, যারা বিদ্যালয়কে ঘিরে বাণিজ্য করছে। অর্ধশত বছরের ঐতিহ্যবাহী এই বিদ্যালয়ের অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিকার চেয়ে আমি শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট শাখায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি।

খাগরিয়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় এডহক কমিটির সভাপতি শাহিদা আক্তার জাহান বাংলানিউজকে বলেন, বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ হিসাব নিরক্ষণের জন্য একটি অডিট কমিটি গঠন ও আয়-ব্যয়ের ক্যাশ বই নিয়মিত করণে তাকে বার বার তাগদা দেয়া হলেও তিনি তা করেনি। মাসিক আয়-ব্যয়ের বিবরণী, ব্যাংক বিবরণীয়সহ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র সভাপতিকে দেখানোর জন্য বারবার তাগদা দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি করেন নি। কমিটির সভায় যথাযথভাবে আলোচ্যসূচী আলোচনা না করে কৌশলে সভাপতির স্বাক্ষর নিয়ে নেন। সরল মনে সভাপতি স্বাক্ষর দেওয়ার পর আলোচ্য সূচির বাইরেও রেজ্যুলেশনে লিখে নেন। যা পরবর্তীতে আমাকে ফটোকপি দিতে বললেও নানা অজুহাতে রেজ্যুলেশন খাতা দেখান না।  

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে খাগরিয়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অনুপম মহাজন বলেন, আমি অনিয়ম করে এক টাকাও আদায় করিনি। এক অভিভাবক আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন। তিনি স্কুলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। বোর্ডে অভিযোগ দিয়েছেন, বিষয়টি তারা তদন্ত করে সত্যতা পেলে আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন।

চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের স্কুল ড. বিপ্লব গাঙ্গুলি বাংলানিউজকে বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। তবে, অভিযোগ তদন্তের জন্য একটা ফি দিতে হয়। সেটি পরিশোধ করেননি। এছাড়াও বোর্ডে চেয়ারম্যান নেই। তাই এখনও তদন্তের কাজে হাত দেওয়া সম্ভব হয়নি। আমরা ফাইল ইতোমধ্যে তুলেছি৷ এ বিষয়ে যদি সত্যতা পাওয়া যায় তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২১৫২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৪, ২০২২
বিই/এমআই/টিসি
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।