ঢাকা, শনিবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৮ মে ২০২৪, ০৯ জিলকদ ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

রক্ত দেওয়ার প্রতিযোগিতা

মোহাম্মদ আজহার, ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৮ ঘণ্টা, জুন ৫, ২০২২
রক্ত দেওয়ার প্রতিযোগিতা রক্ত দিতে যাচ্ছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়: বিস্ফোরণের বিকট শব্দে এক মুহূর্তের জন্য মনে হলো যুদ্ধবিধ্বস্ত কোনো দেশ। কেঁপে উঠেছে আশপাশের পাঁচ কিলোমিটার এলাকা।

ভেঙে গিয়েছে বাড়ি-ঘরের জানালার কাচ। ততক্ষণে নিভে গেছে শত শত মানুষের স্বপ্ন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বারান্দায় তখন শিক্ষার্থীদের ছুটোছুটি। সবার মধ্যে চলছে আলোচনা। রাত যত গভীর হচ্ছে আহতদের নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাড়ছে উদ্বেগ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেসবুক পেইজ এবং গ্রুপগুলোতে শিক্ষার্থীরা তখন সরব। আহ্বান একটাই ‘অগ্নিদগ্ধ আহতদের রক্ত প্রয়োজন, এগিয়ে আসুন’। রাত তখন ২টা, আবাসিক হলগুলো থেকে শিক্ষার্থীরা ছুটছিলেন রক্ত দিতে। কিছুক্ষণের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্টে এসে জড়ো হলেন শত শত শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্টে এবারের জড়ো হওয়াটা ব্যতিক্রম। প্রতিবারের মত রক্তক্ষয়ী কোনো সংঘর্ষ বা মারধরের ঘটনার বিচার দাবিতে জড়ো হননি তারা। এবার তারা জড়ো হয়েছেন রক্ত দিয়ে অন্যদের জীবন বাঁচাতে। কিন্তু এত রাতে যাতায়াতের কোনো ব্যবস্থা নেই। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন ছাত্র প্রতিনিধিরা। আজ না হয় রাজনৈতিক পরিচয়টা বাদ। আজ বড় পরিচয় আমরা ‘মানুষ’।

অবশেষে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবস্থা হলো একটি বাস। যদিও বাসের ব্যবস্থা কর্তৃপক্ষ করেনি। শিক্ষার্থীরা জোর করেই নিয়েছিলেন বাসটি। তবে সেটিও ছিল শিক্ষার্থীদের তুলনায় অপ্রতুল। তাই প্রথমদিকে বেছে নেওয়া হলো যাদের রক্তের গ্রুপ নেগেটিভ তাদের। কারণ নেগেটিভ রক্তের সংকট একটু বেশিই। এরপর কিছু শিক্ষার্থী বাস না পেয়ে ছুটলেন একটি ট্রাক নিয়ে। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তখন স্বেচ্ছায় রক্ত দিতে ছুটে আসা শিক্ষার্থীদের ভিড়।

শনিবার (০৪ জুন) দিনগত রাত ২টায় চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম ডিপোতে বিস্ফোরণের ঘটনায় দগ্ধদের রক্ত দিতে এভাবেই ছুটে যান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থীরা।

যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী নুর নবী রবিন বাংলানিউজকে বলেন, রক্তের জন্য আহ্বান করার সঙ্গে সঙ্গে জিরো পয়েন্টে আমরা শতাধিক শিক্ষার্থী জমা হই। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনো বাস পাইনি। এ অবস্থায় কেবল নেগেটিভ ব্লাড ডোনারদের নিয়ে ট্রাকে করে চট্টগ্রাম মেডিক্যালের উদ্দেশে রওয়ানা হই আমরা। তবে শুনেছিলাম এর আগেও একটি বাস ক্যাম্পাস থেকে শহরে গেছে।  

রক্ত দিতে যাওয়া শিক্ষার্থীরা বাংলানিউজকে বলেন, রক্তের অভাবে মানুষের মৃত্যু হবে এটা হতে পারে না। বিস্ফোরণস্থলে আমরা না থাকলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমরা মানুষের আহাজারি দেখেছি। এমন দুঃসময়ে আমরা রক্ত দিয়ে আহতদের সহযোগিতার উদ্দেশে ছুটে যাই। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অগ্নিদগ্ধদের মরদেহ বহনে সরাসরি সহযোগিতা করেছে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া বাংলানিউজকে বলেন, রাতে শিক্ষার্থীরা শহরে যাওয়ার জন্য বাস চেয়েছিল। তবে সে সময় চালকের অভাবে আমরা বাস দিতে পারিনি। এরপরও শিক্ষার্থীরা নিজেরা একটা বাস নিয়ে গিয়েছিল। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্সগুলো ব্যবহার করেছে তারা।  

চবি ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল বলেন, আমরা চেষ্টা করেছি আহতদের সাধ্যমত সহযোগিতা করার। এছাড়া শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বাসের ব্যবস্থা করতে অনুরোধ করেছিলাম। শিক্ষার্থীরাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে রক্ত দিতে এগিয়ে আসেন।

এর আগে শনিবার (০৪ জুন) রাত ৯টার দিকে সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নে বিএম কনটেইনার ডিপোর লোডিং পয়েন্টের ভেতরে আগুন লাগে। কুমিরা ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিটের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলেও রাত ১১টার দিকে একটি রাসায়নিক কনটেইনারে আগুন লেগে বিস্ফোরিত হয়। বিস্ফোরণে ঘটনায় এরই মধ্যে ৪৩ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে চার শতাধিক।

*** সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণে মৃতের সংখ্যা ৪৩

বাংলাদেশ সময়: ১৫২৬ ঘণ্টা, জুন ০৫, ২০২২
এমএ/কেএআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।