ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

‘আর্থিক প্যাকেজে’ মোড়‍ানো বিজেপির জোটবার্তা

... | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৩৪ ঘণ্টা, মে ৩, ২০১৪
‘আর্থিক প্যাকেজে’ মোড়‍ানো বিজেপির জোটবার্তা রাজনাথ সিং ও মমতা ব্যানার্জি

কলকাতা থেকে: পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির দিকে একের পর এক তীর্যক বাক্য ছোঁড়ার পর বিজেপির সুরে এবার নরম বার্তা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বার্তাটি আর্থিক প্যাকেজে মোড়ানো।



খোলাসা করে বলতে গেলে বাকযুদ্ধে কয়েকবার একহাত নেওয়া নরেন্দ্র মোদীর দল জোটে ভেড়াতে চাইছে পশ্চিমবঙ্গের দিদিকে। তাই এ রাজ্যের প্রতি আর্থিক প্রণোদনার টোপ দেওয়া হচ্ছে।

এর মাধ্যমে বিজেপি ভোট পরবর্তী অবস্থার জন্য তৃণমূলকে আগে ভাগেই পরোক্ষ রাজনৈতিক প্রস্তাব দিয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
আর তাই একদিকে বিজেপির প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী মোদী যখন রাজ্য সরকারকে চূড়ান্ত আক্রমনে ব্যস্ত, ঠিক তখনই অপরপ্রান্তে দাঁড়িয়ে মমতার প্রতি নরম বার্তা দিচ্ছেন দলটির সভাপতি রাজনাথ সিং।

পশ্চিমবঙ্গের সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, শিলিগুড়ি এবং হাওড়ায় জনসভা করতে এসে মোদী কড়া ভাষায় আক্রমন করেছিলেন মমতা ব্যানার্জীকে। কিন্তু তার উল্টো সুর গাইলেন রাজরাথ সিং। শুক্রবার দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা ও উত্তর চব্বিশ পরগণার জনসভায় তিনি জানিয়েছেন বিজেপি ক্ষমতায় এলে রাজ্যের জন্য বিশেষ আর্থিক প্যাকেজের ব্যবস্থা করবেন।

পশ্চিমবঙ্গকে ঋণ মওকুফ করার জন্য বহু আবেদনের পরও কংগ্রেস সরকার কোনো ব্যবস্থা নেয় নি। তবে শেষ মুহ‍ূর্তে বিহারকে বিশেষ আর্থিক সুবিধা দেয় মনমোহন সরকার। এতে নিজ রাজ্যের প্রতি বঞ্চনায় কড়া হয় মমতার সুর। ঘোলা হয় জল। আর এ ঘোলা জলেই মাছ ধরতে চাইছে বিজেপি।

এ প্রসঙ্গে রাজনীতি বিশ্লেষক ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সন্দ্বীপ মুখোপাধ্যায় শনিবার বাংলানিউজকে বলেন, সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখার কথা ভাবছে বিজেপি। কারণ, নির্বাচনের ফলাফল কি হয় সেটি এখনো বলা যাচ্ছে না। প্রয়োজনে তারা মমতাকে তাদের জোটে ভেড়াতে চায়। তাই রাজনাথ সিং এই প্রস্তাব দিয়ে রাখলেন। আর রাজনীতির মাঠে যত তীর্যক বাক্যই শোনা যাক, আজ যে প্রতিপক্ষ কাল সে মিত্র হতে পারে। তাই বিজেপির এ বার্তার প্রেক্ষাপটে জোটের প্রস্তাব ভাবা অমূলক নয়।

পশ্চিমবঙ্গ মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয় নবান্ন সূত্র জানায়, ক্ষমতায় আসার পর থেকেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে ঋণ মওকুফের ব্যবস্থা করার আবেদন জানিয়ে আসছিলেন। কিন্তু ক্ষমতাসীন কংগ্রেস সরকার সেকথায় কোনো কর্ণপাত করেননি কোনো ভাবেই। একটি রাজ্যকে আলাদা করে এ সুবিধা দেওয়া যায় না বলে সরকার বিষয়টি এড়িয়ে গেছে বারবার।

ওই সময় তৃণমূল কংগ্রেসের জোটে থাকলেও পাত্তা পায়নি মমতার আবেদন। এমনকি পশ্চিমবঙ্গের নেতা প্রণব মুখার্জিও তখন অর্থ মন্ত্রকের দায়িত্বে ছিলেন। তবুও কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকার পশ্চিমবঙ্গের কথা আলাদা করে ভাবেনি। এসব কারণে দ‍ূরত্ব তৈরি হতে হতেই ইউপিএ জোট ছাড়েন মমতা।
এবার নির্বাচনের আগে ভাগে তাই মমতাকে বিজেপির প্রতি ‘নরম’ করতে রাজনাথ আর্থিক প্যাকেজের টোপ দিলেন।

এদিকে মমতাকে ভোলানোর পাশাপাশি নিজেরাও পশ্চিমঙ্গে ঘুরে দাড়ানোর চেষ্টা করছে বিজেপি। এ রাজ্যের প্রতি কংগ্রেসের অবহেলা আর দুর্নীতির দায়ে বামদের অকার্যকর হয়ে পড়ার সুযোগকে কোনোভাবে হাতছাড়া করতে চায়না তারা।

এ রাজ্যে বিজেপির সামনে চ্যালেঞ্জ বলতে শুধু তৃণমূল। অনেক হিসেব-নিকেশ শেষে তাই মমতার প্রতি বিজেপির এ বার্তা।

চিরকাল পশ্চিমবঙ্গে কোনঠাসা হয়ে থাকা বিজেপি এবার সমগ্র ভারেতের মত জয় করতে চায় এ রাজ্যকেও। সে অনুযায়ী বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে প্রচারণা চলছে। সে ছাপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতায়।

এদিকে লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের অবস্থান ঠিক রাখতে মমতা এবার আরো সতর্ক। সঙ্গী বলতে তেমন কেউ নেই। একেবারেই একা লড়ছে তার দল। নির্বাচনী প্রচারণার বাইরে তেমন কোনো কাজ রাখছেন না তিনি।

তবে শেষমেষ রাজনীতির মাঠে মমতা আর মোদীর বাকযুদ্ধ কোথায় গিয়ে ঠেকবে, তা জানা যাবে আগামী ১৬ মে লোকসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর।
কারণ, তখনই দেখা যাবে জোট বা এককভাবে সরকার গঠনের চিত্র।

বাংলাদেশ সময়: ২২২৯ ঘণ্টা, মে ০৩, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।