কলকাতা: ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, মুর্শিদাবাদে পরিকল্পিতভাবে সহিংসতা ছড়ানো হয়েছে। খুব শিগগিরই ঘটনার পেছনের সব তথ্য প্রকাশ করা হবে বলেও জানান তিনি।
সোমবার (৫ মে) মুর্শিদাবাদের বহরমপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে মমতা বলেন, দুই তিনজন লোক আছে যারা গন্ডগোল করছে। ধর্মের নামে নিজেদের বড় নেতা মনে করছে। কিন্তু এদের আমরা চিনি। মুর্শিদাবাদে পরিকল্পিতভাবে হিংসা ছড়ানো হয়েছে—সব তথ্য আমার কাছে আছে, শিগগিরই ফাঁস করবো।
এ সময় কেন্দ্রীয় সরকারকে উদ্দেশ করে মমতা বলেন, বাংলায় দাঙ্গা ছড়াবেন না, বরং দেশের সীমান্ত রক্ষা করুন। তিনি কারও নাম উল্লেখ না করে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে কটাক্ষ করে ‘ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী’ বলেও অভিহিত করেন।
সম্প্রতি সংশোধিত ওয়াকফ আইন পাসের পর পশ্চিমবঙ্গজুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এর সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়ে মুর্শিদাবাদ জেলায়। জেলার সুতি, রঘুনাথগঞ্জ ও সামসেরগঞ্জ এলাকায় ব্যাপক সহিংসতার ঘটনা ঘটে। প্রাণ হারান অন্তত তিনজন। তাদের মধ্যে দুইজনকে গলা কেটে হত্যা করা হয় এবং এক কিশোর পুলিশের গুলিতে নিহত হয়।
এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতির বেশ কিছুদিন পর সোমবার মুর্শিদাবাদে পৌঁছান মুখ্যমন্ত্রী মমতা। সেখানে জেলা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেন তিনি। পরে সাংবাদিকদের বলেন, মুর্শিদাবাদের ঘটনায় কারা, কীভাবে পরিকল্পনা করেছিল—সব তথ্য আমার হাতে এসেছে। যারা অপরাধে জড়িত, তাদের শাস্তি হবেই।
তিনি আরও বলেন, ধর্মের নামে যারা ভুয়া কথা ছড়িয়ে সাধারণ মানুষকে প্ররোচিত করছে, তারা কখনোই বাংলার প্রতিনিধি হতে পারে না। রাজ্য সরকার কোনো ধরনের সহিংসতা বরদাশ্ত করে না।
এদিকে, ঘটনার পর জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ও জাতীয় নারী কমিশনের প্রতিনিধিরা মুর্শিদাবাদে পরিদর্শনে যান। রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসও গিয়েছিলেন। তবে সেসময় মমতা না গেলেও এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসায় তিনি জেলা সফরে গেছেন বলে জানান।
এদিন কলকাতা থেকে রওনা দেওয়ার আগে কাশ্মীর ইস্যু নিয়েও কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, ভারতের নিরাপত্তা নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস কোনো রাজনীতি করে না। আমাদের দল জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে কেন্দ্রীয় সরকারের পাশেই থাকবে।
তিনি দলীয় নেতাদেরও নির্দেশ দিয়েছেন— কাশ্মীর ইস্যুতে কেউ যেন অহেতুক মন্তব্য না করেন। জাতীয় নিরাপত্তা আগে— বলেই দলকে কড়া বার্তা দিয়েছেন মমতা।
উল্লেখ্য, গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসী হামলায় সেনা নিহতের ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে মমতা বলেছিলেন, এটা খুবই স্পর্শকাতর বিষয়, তাই কোনো মন্তব্য করবো না। কিন্তু ভাবার বিষয়, এত প্রস্তুতি সত্ত্বেও হামলা হলো কীভাবে?
ভিএস/