ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

পশ্চিমবঙ্গে পরিবর্তন হচ্ছে:

বামদুর্গে ধস, তৃণমূল জোট এগিয়ে

আনোয়ারুল করিম ও রক্তিম দাশ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩২ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০১১
বামদুর্গে ধস, তৃণমূল জোট এগিয়ে

কলকাতা থেকে: গোটা পশ্চিম বঙ্গজুড়ে এখন চলছে টানটান উত্তেজনা। ভোটের দিনগুলো পেরিয়ে এখন চলছে ভোট গণনার পালা।

স্থানীয় সময় সকাল আটটায় আনুষ্ঠানিকভাবে ভোট গণণা শুরু হয়। চলবে বেলা তিনটা পর্যন্ত।

পরিবর্তন আসছে এই আলোচনার পাল্লাটাই ভারি। মমতা ব্যানার্জির তৃণমূল কংগ্রেস সরকার গঠন করবে এই প্রত্যাশা তাদের। আবার প্রত্যাবর্তনের কথাও বলছেন অনেকে। তাদের কথায় এ দফায়ও কোনোরকম টিকে যাবে বামপন্থিরা।    

১৩ বছর বয়সী রাজনৈতিক দল ‘তৃণমূল কংগ্রেস’ এর জয় নাকি ৩৪ বছরের কমিউনিস্ট শাসনের অবসান- তাই দেখতে এবার বিধানসভা নির্বাচনের ফলকে এককথায় বলা হচ্ছে ‘পরিবর্তন’ না ‘প্রত্যাবর্তন’।  

ভোট গণনা কেন্দ্র ও এর আশেপাশে ১৪৪ ধারা জারির পাশাপাশি তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে প্রশাসন। নির্ধারিত পরিচয়পত্র ছাড়া কেউই কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারছেন না।  

পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন দলের ১ হাজার ৭৯২ জন প্রার্থীর মধ্যে ২৯৪ ‘এমএলএ’ নির্বাচিত হবেন শুক্রবার।

গত ১৮ এপ্রিল থেকে ১০ মে পর্যন্ত ৬ দফায় নির্বাচনে ভোটারদের দেওয়া রায় ‘ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন’ (ইভিএম)-এ সংরক্ষিত রয়েছে। এসব মেশিন থেকেই ফলাফলগুলো সমন্বয় করে ফল ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন।

২৯৪ আসনের মানুষের দেওয়া রায় ঘোষণার জন্য রাজ্যের ৮৭টি স্থানকে ভোট গণনা কেন্দ্র হিসেবে বাছাই করা হয়। এসব কেন্দ্রে সবমিলিয়ে ৩১২টি গণনা হল তৈরি করা হয়। এসব হলে ৪ হাজার ৬০৫টি টেবিলে ভোট গণনা করছেন প্রায় ১৪ হাজার ভোট কর্মী। এছাড়া প্রতিটি গণনা টেবিলে একজন করে অবজার্ভার, কাউন্টিং অফিসার ও একজন অতিরিক্ত কাউন্টিং অফিসার নজরদারি করছেন।  

ভোট গণনার পুরো প্রক্রিয়াটি একাধিক ভিডিও ক্যামেরা দিয়ে রেকর্ডিং করা এবং তা প্রতিনিয়ত মনিটরিং করা হচ্ছে।

সকাল আটটার মধ্যে স্ট্রং রুম থেকে ইভিএম আনা হয় গণনা কেন্দ্রে। প্রথমে পোস্টাল ব্যালট গণনা হয়। এরপর আধাঘণ্টার মধ্যে ইলেকট্রনিক ভোট গণনা শুরু হয়।
 
নিছক রাজনৈতিক কৌতূহল নয়, রীতিমতো উৎকণ্ঠা নিয়ে অপেক্ষা আরও কয়েকটি প্রহরের। রাজনৈতিক নেতানেত্রী বা দলের ‘ভাগ্য নির্ধারণ’ নয়, এবারের নির্বাচনী ফলাফলে যে পশ্চিমবঙ্গের ভবিষ্যৎ, রাজ্যবাসীর ভবিষ্যৎ জড়িয়ে থাকবে ওতপ্রোতভাবে, বলছেন এখানকার রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।    
 
ভোটের ফল নিয়ে এই উত্তেজনা উৎকণ্ঠা শুধু পশ্চিমবঙ্গেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। গোটা ভারতই তাকিয়ে আছে শুক্রবারের ফলাফলের দিকে। পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও কেরালা, তামিলনাডু, আসাম, এবং পুদুচেরিতে ভোটগ্রহণ হয়েছে এবার। কিন্তু পাঁচ রাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উত্তেজনা রয়েছে পশ্চিমবঙ্গকে ঘিরেই।

পশ্চিমবঙ্গে দীর্ঘ ৩৪ বছর ৭টি নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার পর এবার অবশেষে কমিউনিস্ট শাসনের অবসান হতে চলেছে। শুক্রবার সকাল আটটায় ভোট গণনা শুরুর পর প্রথম রাউন্ডের গণনায় বিরোধী তৃণমূল কংগ্রেস জোট দেড়শ’র মতো আসনে এগিয়ে রয়েছেন। সিপিএম নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন বামফ্রন্ট ৫০টির আসনে এগিয়ে রয়েছে। নির্বাচন কমিশনে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এ তথ্য জানা গেছে।

বামফ্রন্ট সরকারের মূখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যসহ কয়েকজন জাঁদরেল কমিউনিস্ট নেতা ও প্রভাবশালী মন্ত্রীরা নির্বাচনে ধরাশায়ী হচ্ছেন।

নির্বাচনের প্রাথমিক রাউন্ডের ফল জানার সঙ্গে সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা ব্যানার্জির কালীঘাটের বাড়ির সামনে উল্লসিত সমর্থকরা ভিড় করা শুরু করেছেন। মমতা বাড়ির ভেতরে তৈরি করা দলীয় দপ্তরে বসে আছেন। তিনি এখনও বাইরে আসেননি।

অন্যদিকে মৌলালীতে সিপিএমের কার্যালয় আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে নেমে এসেছে নিস্তব্ধতা। বেলা সাড়ে দশটার দিকে মূখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ও বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু দলীয় কার্যালয়ে আসেন। কলকাতার জ্যেষ্ঠ নেতাদের নিয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি জরুরি বৈঠকে বসবেন বলে জানা যায়।     

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য যাদবপুর আসনে হেরে যাচ্ছেন তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী মণীষ গুপ্তের কাছে। মণীষ গুপ্ত কয়েক বছর আগেও রাজ্য সরকারের চাকরি করতেন, ছিলেন স্বরাষ্ট্র সচিব।

এছাড়া উত্তর চব্বিশ পরগণার খড়দহ আসনে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত হেরে যাচ্ছেন ব্যবসায়ী নেতা অমিত মিত্রের কাছে। অমিত মিত্র ভারতের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ‘ফিকি’র সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

বহুল আলোচিত সিপিএম নেতা ও আবাসনমন্ত্রী গৌতম দেব হারছেন নাট্যকার ব্রাত্য বসুর কাছে। গৌতম দেব বৃহস্পতিবারও বলেছেন, তিনিই জিতছেন। এই গৌতম দেবকে সিপিএমের পক্ষ থেকে পরবর্তীতে মূখ্যমন্ত্রীও বিবেচনা করা হচ্ছিল।

উল্লেখযোগ্যভাগে বামদের দুর্গ হিসেবে দীর্ঘ তিন দশকের পরিচিতি পাওয়া বর্ধমান, উত্তরের জেলাগুলো ও জঙ্গলমহলের মানুষ এবার পরিবর্তনের পক্ষেই রায় দিয়েছেন। এই এলাকাগুলোতে হেরে যাওয়ার পথে থাকা বাম নেতারা হচ্ছেন পূর্তমন্ত্রী ক্ষিতি গোস্বামী, পৌরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য, স্বাস্থ্যমন্ত্রী সূর্যকান্ত মিশ্র, শিল্পমন্ত্রী নিরূপম সেন প্রমুখ।

উল্লেখ্য, তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা ব্যানার্জি এই নির্বাচনে প্রার্থী নন। তিনি সংসদ সদস্য হয়ে ২০০৯ সাল থেকেই কেন্দ্রীয় সরকারের রেলমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তবে নির্বাচনে তার জোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে রেলমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে তিনি বাংলার মূখ্যমন্ত্রী হবেন। সেক্ষেত্রে পরবর্তীতে ছয় মাসের মধ্যে কোনো একটি আসনে তাকে নির্বাচিত হতে হবে।

রাজ্যের ২৯৪ আসনের মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী দেয় ২২৭টিতে, কংগ্রেসকে ছেড়ে দেওয়া হয় ৬৫ এবং এসইউসিআই প্রার্থী দেয় ২টি আসনে।  

অপরপক্ষে ক্ষমতাসীন বাম জোটের মধ্যে সিপিএম ২১১, ফরোয়ার্ড ব্লক ৩৪, আরএসপি ২৩, সিপিআই ১৪, সমাজবাদী পার্টি ৫, ডিএসপি ২, মার্ক্সবাদী ফরোয়ার্ড ব্লক ২, বিপ্লবী বাংলা কংগ্রেস ১, আরজেডি ১ এবং আরসিপিআই ১টি আসনে প্রার্থী দেয়।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৫ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।