কলকাতা: বৃষ্টি থেমে গেলেও পশ্চিমবঙ্গের বন্যায় মৃতের সংখ্যা বাড়ছেই। সোমবার এক শিশুসহ আরও দু’জনের মৃত্যু হয়েছে।
এরই মধ্যে বাড়ছে ত্রাণের জন্য হাহাকার। এমনকি সরকারি ত্রাণে শিশু খাদ্যও মিলছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
হাওড়া, হুগলী, উত্তর ২৪ পরগণা, দক্ষিণ ২৪ পরগণা, পূর্ব মেদিনীপুরসহ দক্ষিণবঙ্গে বন্যাদুর্গত বিভিন্ন জেলার এমনই চিত্র।
হুগলী জেলায় জেলা পরিষদের কাছে আগে থেকে যেটুকু ত্রাণ সামগ্রী ছিল তা দুর্গত মানুষের কাছে বিলি করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় তা খুবই সামান্য। কিন্তু রাজ্য সরকারের কাছে পর্যাপ্ত ত্রাণ চেয়েও পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন হুগলী জেলা পরিষদের সভাধিপতি প্রদীপ সাহা।
তিনি বলেনে,‘ হুগলীর ২৫টি গ্রাম পঞ্চায়েত সম্পূর্ণ বন্যার কবলে। আংশিক বন্যা কবলিত আরও ৭৬টি গ্রামপঞ্চায়েত। বন্যাদুর্গত মানুষের সংখ্যা সাড়ে চার লাখ ছাড়িয়ে গেছে। এ অবস্থায় জেলায় ত্রাণের জন্য অবিলম্বে আরও ৪৫০ টন চাল, ১০ হাজার ত্রিপল, পর্যাপ্ত শিশুখাদ্য এবং খয়রাতি সাহায্য হিসাবে ১০ লাখ রুপি প্রয়োজন। কিন্তু বার বার আবেদন জানিয়েও রাজ্য সরকারের কাছ থেকে সেই ত্রাণ সাহায্য পাওয়া যাচ্ছে না। ’
এদিকে, যেটুকু ত্রাণ মিলছে তা নিয়ে দুর্নীতি ও দলবাজিতে বন্যাদুর্গত মানুষ এতটাই ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন যে, উত্তর ২৪ পরগণার স্বরূপনগরে এবং বীরভূমের শীতলগ্রাম এলাকায় তারা তৃণমূলের দুই নেতার ওপর চড়াও হয়ে তাদের মারধর করেছেন। ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীদের মধ্যে তৃণমূলের সমর্থকরাও ছিলেন।
বীরভূম জেলার লাভপুরে বন্যা পরিস্থিতি দেখতে গিয়ে রাজ্যের পরিকল্পনা উন্নয়নমন্ত্রী মণীশ গুপ্ত ত্রাণের দাবিতে বিক্ষোভের মধ্যে পড়েন।
ত্রাণ না পেয়ে উত্তর ২৪ পরগণার স্বরূপনগরের বাংলানি গ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূল-কংগ্রেস জোটের পঞ্চায়েত প্রধান আবিদ গাজিকে সাধারণ গ্রামবাসীরা মারধোর করেন।
বীরভূমের শীতলগ্রামে ত্রাণ না পাওয়া মানুষের হাতে তৃণমূলের এক পঞ্চায়েত সদস্য এমন মার খেয়েছেন যে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে।
হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরের কুরচি শিবপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নেওয়া আড়াই হাজারের বেশি মানুষ গত ৫ দিনে ত্রাণ হিসাবে পেয়েছেন মাত্র ৫ বস্তা চিড়া। সরকারি ত্রাণে এক কৌটা শিশুখাদ্য না মেলায় বন্যাদুর্গত পরিবারের শিশুরা চরম কষ্টের মধ্যে রয়েছে।
হরালি উদয়নারায়ণপুর গ্রাম পঞ্চায়েতেরও একই অবস্থা। সুলতানপুরের জমিনদারি বাঁধে ফাটল ধরায় গজাগ্রাম এলাকা নতুন করে প্লাবিত হয়েছে।
উদয়নারায়ণপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে স্টেট জেনারেল হাসপাতাল পর্যন্ত সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। কিন্তু বাঁধ সারানোর কোনও ব্যবস্থাই রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে করা হয়নি।
নতুন করে প্লাবিত হয়েছে আমতা ২নং ব্লকের থলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত। এ এলাকার অনেক জায়গায় মানুষ গাছের ওপরে ত্রিপল খাটিয়ে বন্যার হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করছেন। তাদের উদ্ধার করার জন্য সরকারিভাবে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
বি কে গ্রাম পঞ্চায়েত এবং আমরাগড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকাও নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। নতুন করে আংশিক প্লাবিত হয়েছে ঝামটিয়া, ঝিখিরা গ্রাম পঞ্চায়েত। সেখানকার মানুষের মধ্যেও রয়েছে ত্রাণের জন্য হাহাকার।
ডি ভি সি আরও পানি ছাড়ায় হাওড়া এবং হুগলীর নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
সোমবার মালদহের কালিয়াচক দু’নম্বর ব্লকের যুগলটোলা শিবপুর গ্রামের ২৫ বছরের যুবক প্রতুল ম-ল ফুঁসে ওঠা গঙ্গার পাড়ে থাকাকালীন হঠাৎ করে পাড় ভেঙে যায়। ভেসে যান ওই যুবক। বেশ কিছুক্ষণ বাদে এলাকার মানুষ নদী থেকে তার লাশ উদ্ধার করেন।
এদিনই হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরের বিধিচন্দ্রপুর-ভবানীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ভবানীপুর গ্রামে পানি ভেসে গিয়ে দেবব্রত প্রামাণিক নামে চার বছরের এক শিশুর মৃত্যু হয়। এ দুই মৃত্যুর ঘটনা বাদ দিয়েই সরকারি হিসাবে রাজ্যে বন্যায় মৃতের সংখ্যা ২১।
সোমবার রাতে মহাকরণ থেকে সরকারিভাবে রাজ্যে বন্যায় ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
মঙ্গলবার সকালে মহাকরণ সূত্রে জানা গেছে, দামোদর, রূপনারায়ণ, জলঙ্গী, মু-েশ্বরী, মাতলাসহ রাজ্যের ৬টি নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে বলা হয়েছে।
সেইসঙ্গে ডি ভি সি ৭৪ হাজার কিউসেক এবং কংসাবতী বাঁধ থেকে ২০ হাজার কিউসেক পানি ছাড়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, বন্যার পানিতে মালদা এবং দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হলেও রাজ্যের মাত্র তিনটি এলাকা হাওড়ার উদয়নারায়ণপুর, আমতা এবং হুগলীর খানাকুলকে বন্যাকবলিত বলে ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার।
বাংলাদেশ সময়: ১০৫৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০১১