ঢাকা, শনিবার, ১৩ পৌষ ১৪৩১, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

এসএমই বান্ধব ইকো-সিস্টেম নিশ্চিতের আহ্বান ডিসিসিআই সভাপতির

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ৭, ২০২৩
এসএমই বান্ধব ইকো-সিস্টেম নিশ্চিতের আহ্বান ডিসিসিআই সভাপতির

ঢাকা: তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক সক্ষমতা বৃদ্ধি, সহজে ঋণ প্রাপ্তি, পণ্যের বাজারজাতকরণ ও বহুমুখীকরণ, গবেষণা ও উদ্ভাবন, ক্লাস্টার ডেভেলপমেন্ট, অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রভৃতি বিষয়গুলো বাংলাদেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের বিকাশে অতীব জরুরি বলে মত প্রকাশ করেছেন ডিসিসিআই আয়োজিত সেমিনারের আলোচকরা।  

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত “এসএমইদের রপ্তানির সক্ষমতা বৃদ্ধি; এলডিসি উত্তরণ পরবর্তী বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা” শীর্ষক সেমিনারটি শনিবার (৭ অক্টোবর) রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত হয়।

জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।  

বাংলাদেশে নিযুক্ত কানাডার হাইকমিশনার ড. লিলি নিকোলাস এবং সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত ইসা বিন ইউসুফ আল দুহাইলান ওই অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে যোগদান করেন।

সেমিনারের স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার বলেন, বাংলাদেশের এলসিডি উত্তরণ পরবর্তী সময়ে ২০২৬ সাল থেকে আমাদের এসএমইসহ রপ্তানিকারকদের পণ্য রপ্তানিতে অধিক শুল্ক প্রদান করতে হবে। যা ৮-১৬ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে।

তিনি জানান, দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যেক্তাদের জিডিপিতে অবদান ২৮ শতাংশ এবং  বেসরকারিখাত স্থানীয় কর্মসংস্থানের প্রায় ৯০ শতাংশের সুযোগ সৃষ্টি করে থাকে।

ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, আমাদের এসএমইরা ব্যবসায় পরিচালনায়, মূলধন স্বল্পতা, অবকাঠামো, প্রযুক্তিগত দক্ষতা ও মানবসম্পদের স্বল্পতা, পণ্য রপ্তানিতে  বৈশ্বিক বাজারের সঙ্গে যোগাযোগের সীমাবদ্ধতা এবং কমপ্লায়েন্সসহ নানাবিধ প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়ে থাকেন।

বাংলাদেশের এসএমইদের উন্নয়ন ও এলডিসি পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আর্থিক ও নীতিসহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে এসএমই’র সংজ্ঞায় সংশোধন, বিশেষকরে মাঝারিকে পৃথকীকরণ, রপ্তানি উন্নয়ন ফান্ড প্রবর্তন, প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ সাধনে প্রশিক্ষণ প্রদান, ডাটাবেইজ তৈরি, বাজার সম্প্রসারণে বর্হিবিশ্বে অনুষ্ঠিত বাণিজ্য মেলা ও পণ্য প্রদর্শনীগুলোতে অংশগ্রহণ বৃদ্ধি এবং সাপ্লাই চেইন ব্যবস্থা শক্তিশালীকরনের উপর জোর দেন সামীর সাত্তার।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, জিডিপিতে এসএমইদের অবদান প্রায় ৩০ শতাংশ। যদিও তারা নানামুখী প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হচ্ছে এবং এ সমস্যা নিরসনে আমাদের নীতিনির্ধারকদের নীতি সহায়তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

তিনি উল্লেখ করেন, এসএমইদের জামানতবিহীন ঋণ সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে বর্তমান সরকার বেশকিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, তবে এ বিষয়ক তথ্যাদির যথাযথ প্রচার-প্রচারণার অভাবে কাঙ্ক্ষিত সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। ই-কমার্স এবং সামাজিক যোগাযোগ প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের মাধ্যমে পণ্য বেচা-কেনায় সুবিধা নিতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের তথ্য-প্রযুক্তি ভিত্তিক সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর তিনি জোরারোপ করেন এবং এক্ষেত্রে সরকার প্রবর্তিত ‘জয়িতা ফাউন্ডেশন’-এর ব্যবহার করার আহ্বান জানান।

স্পিকার আরও বলেন, এসএমইদের সার্বিক সহায়তা নিশ্চিতকল্পে ‘ওয়ানস্টপ সার্ভিস’-এর উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন এবং সংশ্লিষ্ট সবার সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি। তিনি বলেন, বর্তমানে আমাদের নারী উদ্যোক্তারা বর্তমানে জামানতবিহীন ১০ লাখ টাকার ঋণ সুবিধা গ্রহণ করতে পারছেন। এছাড়াও এসএমইদের রপ্তানির পণ্যের কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান নির্ধারিত শুল্ক হার হ্রাসের বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।     
কানাডার হাইকমিশনার ড. লিলি নিকোলাস বলেন, বাংলাদেশের কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষা ব্যবস্থা ও রপ্তানির উন্নয়নে কানাডা সরকার একযোগে কাজ করছে। বাণিজ্য সম্প্রসারণে সম্ভাবনাময় দেশগুলোর সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের প্রতি তিনি জোরারোপ করেন।

হাইকমিশনার জানান, বাংলাদেশের এসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের আর্থিক, প্রযুক্তিগত ও দক্ষতার অভাব রয়েছে। এসএমই উদ্যোক্তাদের পণ্য বহুমুখীকরণ, বাজার সম্প্রসারণ এবং সক্ষমতা বৃদ্ধিতে আরও বেশি হারে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার ওপর তিনি জোররোপ করেন।

বাংলাদেশে নিযুক্ত সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত ইসা বিন ইউসুফ আল দুহাইলান বলেন, কোভিড মহামারির সময়ে সৌদি সরকার এসএমই উদ্যোক্তাদের সুরক্ষায় বেশকিছু উদ্যোগ গ্রহণ করে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সহায়ক নতুন নীতিমালা প্রণয়ন, নীতি সংষ্কার ও আর্থিক সহায়তা নিশ্চিতকরণ।

তিনি জানান, বাংলাদেশের এসএমই খাতের উন্নয়নে সরকারি-বেসরকারি সমন্বয় একান্ত অপরিহার্য, কারণ ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারাই সবচেয়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে থাকে।  

রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশের রয়েছে বহুমুখী ও শক্তিশালী রপ্তানিমুখী পণ্য সম্ভার এবং এদেশের উৎপাদিত পাটজাতপণ্য, চিংড়ি, ওষুধ, তৈরি পোশাক প্রভৃতির বর্হিবিশ্বে যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণ সময়ে শিক্ষা তথ্য-প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন খাতে আরও বেশি হারে বিনিয়োগ বাড়ানোর ওপর রাষ্ট্রদূত জোরারোপ করেন।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সানেম’র নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান। তিনি বলেন, এলডিসি পরবর্তী সময়ে আমাদের এসএমইখাতের উদ্যোক্তারা প্রধানত সক্ষমতার সীমাবদ্ধতা, আর্থিক ও নীতি সহায়তা, যথাযথ অবকাঠামো এবং দক্ষ মানবসম্পদের স্বল্পতার মুখোমুখি হবেন। এ অবস্থায়, কার্যকর দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, আর্থিক ও নীতি সহায়তা প্রদান, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠন, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী শ্রম আইনের সংশোধন, মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর, অবকাঠামো খাতের টেকসই উন্নয়নসহ নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মেগা প্রকল্পগুলোর কার্যক্রম  বাস্তবায়নের আহ্বান জানান তিনি।

অনুষ্ঠানের নির্ধারিত আলোচনায় তরঙ্গ’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কোহিনূর ইয়াসমিন, পিপলস লেদার ইন্ডাস্ট্রি-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক রেজবিন বেগম, বেঙ্গল মিট প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এএফএম আসিফ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক (এসএমই-এসপিডি) ড. মো. কবির আহমেদ অংশগ্রহণ করেন।

ঢাকা চেম্বারের ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি এস এম গোলাম ফারুক আলমগীর (আরমান), সহ-সভাপতি মো. জুনায়েদ ইবনে আলীসহ পর্ষদের সদস্যরা ওই অনুষ্ঠানে যোগদান করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ৭, ২০২৩
এমকে/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।