ঢাকা, বুধবার, ২৭ ফাল্গুন ১৪৩১, ১২ মার্চ ২০২৫, ১১ রমজান ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

এলডিসি উত্তরণ পিছিয়ে দেওয়ার ভাবনা সরকারের

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০০ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০২৫
এলডিসি উত্তরণ পিছিয়ে দেওয়ার ভাবনা সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রথম কর্মদিবসে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী

ঢাকা: স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে পূর্ণাঙ্গ রোডম্যাপ তৈরির কাজ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী। তিনি বলেন, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন পুনর্বিবেচনার জন্য একটি কমিটি হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী বলেন, আমরা পুনর্বিবেচনার আবেদন করতে পারি। আবেদনের সঙ্গে যথাযথ কারণ ও কী করব, সে বিষয়গুলো উল্লেখ করতে হবে। একটা বিশ্বসযোগ্য রোডম্যাপ দিতে হবে। আমরা সেদিকেই যাব। তবে আমাদের একটা পূর্ণাঙ্গ রোডম্যাপ দিতে হবে। সেটার কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।

মঙ্গলবার (১১ মার্চ) দুপুরে সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রথম কর্মদিবসে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারীর দায়িত্ব প্রসঙ্গে আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, এই দায়িত্ব পেয়ে আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি। দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে আমি হয়তো কিছু করতে পারব। বাংলাদেশে এখন ক্রাইসিস সময় চলছে। দেশের পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, দেশে গাজার মতো অবস্থা চলছে। সব খাতেই দুর্নীতি হয়েছে। এ ধরনের দুর্নীতি ও ভঙ্গুরতা আমরা এর আগে কোনো দেশে দেখিনি। আমাদের জিডিপির গ্রোথে প্রভাব না পড়লেও অন্যান্য খাতে ভঙ্গুরতা আছে। এখানে লুকোচুরি কোনো বিষয় নেই।

দেশ বর্তমানে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, সেখানে আপনারা কী কাজ করছেন—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি একটা বিষয়ে গুরুত্ব দিতে চাই, সেটা হলো ভুয়া ডাটা বা তথ্যের ভিত্তিতে আমরা যে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ করতে চাচ্ছি, সে বিষয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। আমাদের বৈদেশিক নির্ভরতা বেড়ে গেছে। এটা হয়ছে ২০১০ সাল থেকে। একই সাথে আমাদের অভ্যন্তরীণ রিসোর্সগুলো ভঙ্গুর হয়ে গেছে।

আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, আমাদের যে পরবর্তী বাজেট আসবে, তার রিসোর্স কোথায়? আমাকে যদি আরও ঋণ নিতে হয়, তাহলে আরও চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়তে হবে। এই রিসোর্স মোবিলাইজ করা খুব সহজ না। তবে আমাদের উন্নতির মধ্যে শুধু আমাদের প্রত্যেকের আয় বেড়েছে। আমরা মধ্যম আয়ে চলে গেছি। সে অনুযায়ী আমাদের রাজস্ব বাড়ার কথা ছিল, কিন্তু সেগুলো গেল কোথায়? তাই মানুষকে ট্যাক্স দিতে উৎসাহী করতে হবে। আমি ট্যাক্স দেব না অথচ আশা করব সরকার আমাকে সেবা দেবে!

এলডিসির জন্য যে সূচকগুলো ছিল সেগুলো কি সবগুলোই ভুয়া ছিল—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মনে করুন সব সঠিক, কিন্তু আমাদের প্রস্তুতি কী? আমরা যে বাজার সুবিধাটা পাই, সেটার ৮৫ শতাংশই হচ্ছে তৈরি পোশাক খাতে। এখানে আমাদের রপ্তানি বহুমুখীকরণ করতে হবে। ২০১৮ সাল থেকে বলছি, আমরা এলডিসি থেকে বেরিয়ে আসব। আজকে ২০২৫ সাল, এই ৭ বছরে আমাদের একটা খাতের ওপর নির্ভরশীলতা কমল না কেন?

তাহলে এলডিসি থেকে উত্তরণ স্থগিত বা পুনর্মূল্যায়ন চাচ্ছেন কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী বলেন, আমরা এখনও সেই সিদ্ধান্তে আসতে পারিনি। আমাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হলে ব্যবসায়ী ও তৈরি পোশাক শিল্পমালিকদের সঙ্গে বসতে হবে। আমাদের পুনর্বিবেচনার জন্য কমিটি হয়েছে, দ্রুতই একটা সিদ্ধান্তে আসব। তবে এখনই এটা বলতে পারব না।

বাংলাদেশ চাইলেই কি এলডিসি থেকে উত্তরণ স্থগিত করতে পারবে—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা বাংলাদেশের হাতে পুরোপুরি না, তবে আমাদের অধিকার আছে, আমরা পুনর্বিবেচনার আবেদন করতে পারি। আবেদনের সঙ্গে যথাযথ কারণ ও কী করব, সে বিষয়গুলো উল্লেখ করতে হবে। একটা বিশ্বসযোগ্য রোডম্যাপ দিতে হবে। আমরা সেদিকেই যাব। তবে আমাদের একটা পূর্ণাঙ্গ রোডম্যাপ দিতে হবে। সেটার কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।

অনেক দিন ধরে দেখছি বাংলাদেশে কোনো বিনিয়োগ নেই, কর্মসংস্থান নেই এবং অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে—এমন প্রসঙ্গ তোলা হলে আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, আমাদের অর্থনীতির অবস্থা খুবই ভঙ্গুর। গাজার মতো অবস্থা তৈরি হয়েছে। এ থেকে বুঝে নেবেন আপনার দেশের অবস্থা কেমন। এই মুহূর্তে কি গাজায় কেউ বিনিয়োগ করবে? একটা আরেকটার সাথে যুক্ত।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৯ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০২৫
জিসিজি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।