ঢাকা, শনিবার, ২৭ বৈশাখ ১৪৩২, ১০ মে ২০২৫, ১২ জিলকদ ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

শেয়ারবাজারের উন্নয়নে সবাই মিলে কাজ করতে হবে: এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩:৪২, মে ১০, ২০২৫
শেয়ারবাজারের উন্নয়নে সবাই মিলে কাজ করতে হবে: এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক

ঢাকা: আগস্ট পরবর্তী সময় থেকে দেশের অর্থনীতি এগিয়ে চলেছে। অথচ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা নেই।

বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে এবং শেয়ারবাজারের উন্নয়নে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। কাউকে অবহেলা করা যাবে না। আপনি শেয়ারবাজারের জন্য কী কাজ করছেন, তার ব্যাখ্যা দিতে হবে। অন্যথায় আপনার অপসারণ আমরা এখনই চাইব। মনে রাখতে হবে, আপনি জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে বিএসইসির চেয়ারম্যান হয়েছেন, অথচ বিনিয়োগকারীদের আস্থা আপনার ওপর নেই।

শনিবার (১০ মে) পল্টনে ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরামের হলরুমে বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট ইনভেস্টর অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএমআইএ) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক মো. আব্দুল্লাহ আল ফয়সাল।

তিনি বলেন, গত ১০ বছরে পুঁজিবাজারে কোনো উল্লেখযোগ্য রিটার্ন নেই। দেশের রিজার্ভ বাড়ছে, রপ্তানি বাড়ছে, বৈদেশিক বাজার উন্নতি করছে, অথচ পুঁজিবাজার উন্নত হচ্ছে না। এর প্রধান কারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থার অভাব। আওয়ামী লীগের চুরির দায় এখন আমাদের বইতে হচ্ছে। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে আরও কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে।

এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক বলেন, বিএসইসির বর্তমান চেয়ারম্যানের যোগাযোগ দক্ষতা (কমিউনিকেশন স্কিল) অত্যন্ত দুর্বল। তাকে এই দক্ষতা বাড়াতে হবে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এবং বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান নিয়মিত তথ্য জানাচ্ছেন ও সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আপডেট দিচ্ছেন। অথচ বিএসইসির চেয়ারম্যান কী করছেন, তার কোনো হদিস পাওয়া যায় না। বিনিয়োগকারীদের জানাতে হবে তিনি কী কাজ করছেন এবং তার ফলাফল কী।

তিনি জানান, রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে, রপ্তানি আয় পুনরায় গতি পেয়েছে এবং বৈদেশিক লেনদেনের ঘাটতি কমে ১.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে নেমে এসেছে। জ্বালানির অপরিশোধিত অর্থ পরিশোধের পরেও রিজার্ভ এখনও ২০ বিলিয়নের বেশি। মুদ্রার মান তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল এবং আমদানি নিয়ন্ত্রণ তুলে নেওয়ায় উৎপাদন ও বাণিজ্যে প্রাণ ফিরে এসেছে। সব মিলিয়ে বাহ্যিক খাতে অর্থনীতি এখন নিরাপদ অবস্থানে রয়েছে।

তিনি বলেন, বর্তমানে ডিএসই সূচক ৪,৯০০ পয়েন্টে নেমে এসেছে। এই পতনের পেছনে রয়েছে ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত উত্তেজনা, অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, চলমান উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি এবং পাঁচ বছরের সরকারি ট্রেজারি বন্ডে ১২.৩৯ শতাংশ সুদের হার। যা বিনিয়োগকারীদের শেয়ারবাজার থেকে সরকারি বন্ডে টেনে নিচ্ছে। তবুও, শেয়ারবাজার এখন ঐতিহাসিকভাবে সস্তা। পিই রেশিও মাত্র ৯.৪১, যা ইঙ্গিত দেয় এটা ভ্যালু ইনভেস্টমেন্টের জন্য দুর্দান্ত সুযোগ।

তিনি আরও বলেন, বিএসইসির কিছু উদ্যোগ প্রশংসনীয় হলেও তা অসম্পূর্ণ। গত ৮ মাসে উচ্চপর্যায়ের একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে, যা আশার আলো দেখাচ্ছে।

তিনি বলেন, আমাদের বিশ্বাস, পুঁজিবাজারে আস্থা ফেরাতে হলে সরকারকে নিচের বাস্তবমুখী ও সময়োপযোগী পদক্ষেপগুলো বিবেচনায় নিতে হবে:

১. শেয়ার ক্যাটাগরি নির্ধারণে শুধুমাত্র ডিভিডেন্ড নয়, কোম্পানির দেউলিয়াত্ব, বার্ষিক সাধারণ সভা (AGM) না করা ইত্যাদিকে বিবেচনায় নিতে হবে।
২. ক্যাপিটাল গেইন ও ডিভিডেন্ড ইনকামে দ্বৈত কর পরিহার করে কর হার যৌক্তিক করতে হবে।
৩. মিউচ্যুয়াল ফান্ডে পেশাদার ব্যবস্থাপনা বাধ্যতামূলক করতে হবে এবং অর্থ অপব্যবহারকারী ফান্ডের ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনতে হবে।
৪. তালিকাভুক্ত ও অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহারে পার্থক্য বাড়াতে হবে।
৫. অ্যাসেট ব্যাকড সিকিউরিটিজে (REITs, Sukuk ইত্যাদি) ট্রান্সফারে কর মওকুফ করতে হবে।
৬. অর্থ ঋণ আদালত আইন, ২০০৩ ও দেউলিয়াত্ব আইন সংস্কার ও দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।
৭. কারেন্সি ট্রেডিং ও শর্ট সেল চালু করতে হবে।
৮. প্রভিডেন্ট ফান্ড, পেনশন ফান্ড, SWF ও ফাউন্ডেশনগুলোর কর কাঠামো বিনিয়োগবান্ধব করতে হবে।
৯. ফ্লোর প্রাইস ব্যবস্থা স্থায়ীভাবে পরিহার করতে হবে।
১০. স্থানীয়ভাবে ইনভেস্টমেন্ট সামিট আয়োজন করতে হবে।
১১. বিএসইসি, স্টক এক্সচেঞ্জ, ব্রোকার ও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে স্বচ্ছ ও নিয়মিত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।

বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে ভিত্তি, আগ্রহ ও সম্ভাবনা রয়েছে। এখন প্রয়োজন সাহসী, সুপরিকল্পিত, বাস্তবভিত্তিক সিদ্ধান্ত এবং দক্ষ ও দূরদর্শী নেতৃত্ব। সরকার দ্রুত এসব পদক্ষেপ নিলে পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াবে, অর্থনীতির গতি বাড়বে এবং জনগণের আস্থা ও প্রত্যাশা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে।

সংবাদ সম্মেলনে বিসিএমআইএর সভাপতি এস এম ইকবাল হোসেন বলেন, এই আট মাসে ৯০ হাজার কোটি টাকা লুট হয়েছে। যারা এই টাকা লুট করেছে, আমরা তাদের পদত্যাগ দাবি করছি।  

এসএমএকে/এসআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।