ইসলামী ব্যাংক পিএলসিতে নজিরবিহীন অস্থিরতা শুরু হয়েছে। চট্টগ্রামভিত্তিক শিল্পগোষ্ঠী এসআলমের নিয়ন্ত্রণে থাকাকালীন নিয়োগ পাওয়া পাঁচ হাজার ৩৮৫ জন কর্মীর মূল্যায়ন পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে এই অস্থিরতা শুরু হয়।
ইসলামী ব্যাংকের হেড অব ব্র্যান্ড অ্যান্ড কমিউনিকেশন ডিভিশন ও সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট নজরুল ইসলাম এক বিবৃতিতে জানান, ইসলামী ব্যাংকের এই কর্মকর্তাদের যোগ্যতা যাচাইয়ের জন্য বিশেষ মূল্যায়ন পরীক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হয়। পরে কয়েক কয়েকজন কর্মকর্তা এ পরীক্ষার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। হাইকোর্ট বিভাগ বাংলাদেশ ব্যাংককে বিষয়টি নিষ্পত্তি করার জন্য নির্দেশনা দেন। ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ (ডিভিশন-২) থেকে বিষয়টি নিষ্পত্তি করে রিটকারী ও ইসলামী ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি, একটি বেসরকারি মালিকানাধীন লাভজনক প্রতিষ্ঠান, বিধায় এর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরি দেশের প্রচলিত আইন, বিধি-বিধান ও নিয়োগের শর্তে নিয়ন্ত্রিত এবং যেহেতু চাকরি এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মদক্ষতার সঙ্গে ব্যাংকের লাভ-লোকসান বহুলাংশে জড়িত, সেহেতু ব্যাংক স্বাধীনভাবে দেশের আইন ও বিধি-বিধান মেনে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এ পরিপ্রেক্ষিতে, বিশেষ যোগ্যতা মূল্যায়ন পরীক্ষা নেওয়া এবং চাকরিতে কাউকে রাখা বা না রাখার বিষয় ব্যাংকের নিজস্ব এখতিয়ারভুক্ত।
ইসলামী ব্যাংক বলছে, গত ২৭ সেপ্টেম্বর বিশেষ যোগ্যতা মূল্যায়ন পরীক্ষার আয়োজন করা হয়। এক্ষেত্রে আদালত অবমাননা বা আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি একটি শরিআহ কমপ্লায়েন্ট ব্যাংক। রাষ্ট্র ও নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার সব নিয়মাচার পরিপালনের মাধ্যমে এ ব্যাংক পরিচালিত হচ্ছে।
ব্যাংক সূত্র জানায়, মোট পাঁচ হাজার ৩৮৫ জন কর্মকর্তাকে পরীক্ষায় অংশ নিতে বলা হলেও মাত্র ৪১৪ জন উপস্থিত হন। তারা নিয়মিত কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু যারা পরীক্ষায় অংশ নেননি, সেই চার হাজার ৯৭১ জনকে পরদিন থেকেই ওএসডি করা হয়। আর যারা পরীক্ষা আয়োজনের প্রকাশ্য বিরোধিতা করেন, তাদের মধ্যে ২০০ জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়।
ওএসডি হওয়া একাধিক কর্মকর্তার দাবি, এক মাস আগে তাদের রিট আবেদনের ভিত্তিতে হাইকোর্ট নিয়মিত প্রমোশনাল পরীক্ষা চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। ব্যাংক সেই আদেশ অমান্য করে নতুন পরীক্ষা নিয়েছে, যা বেআইনি। আগের সরকারের সময়ে নিয়োগ হয়েছে বলেই তাদের ছাঁটাই করা হচ্ছে। তারা আবার আদালতের শরণাপন্ন হবেন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো. আরিফ হোসেন খান বলেন, ইসলামী ব্যাংক একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। তাই কর্মী নিয়োগ বা যোগ্যতা যাচাই সম্পূর্ণ তাদের এখতিয়ারভুক্ত, তবে আইন ও নীতিমালার মধ্যে থেকেই তা করতে হবে। সাধারণত পদোন্নতির জন্য ভাইভা নেওয়া হয়, কিন্তু কর্মীদের মান যাচাই পরীক্ষার বিষয়টি নতুন অভিজ্ঞতা।
এস আলম গ্রুপ ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর নানা কৌশলে প্রায় এক লাখ ৩১ হাজার কোটি টাকা ঋণের নামে তুলে নেয়। এতে ব্যাংকটি গভীর আর্থিক সংকটে পড়ে। সংকট থেকে টেনে তোলার চেষ্টা হিসাবে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সহায়তা দেওয়া হয়। তারপরও ব্যাংকটি পূর্বের অবস্থায় ফিরে যেতে পারছিল না। গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ ব্যাংক ইসলামী ব্যাংককে এস আলমের নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত করে নতুন পর্ষদ দায়িত্ব নেয়।
জেডএ/আরএইচ