ঢাকা: ১০টি গ্রেডের সরকারি কর্মচারীদের সর্বনিম্ন বেতন স্কেল ১৬ হাজার দুশ’ টাকা করাসহ তিন দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী জাতীয় ঐক্য ফোরাম।
দাবি আদায় না হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁসিয়ারি দিয়েছে সংগঠনটি।
তিন দফা দাবির মধ্যে রয়েছে- সচিবালয়ের ন্যায় সচিবালয়ের বাইরের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীদের পদবি পরিবর্তন, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের সিলেকশন গ্রেড প্রদান ইত্যাদি।
বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘জাতীয় বেতন ও চাকরি কমিশন কর্তৃক দাখিলকৃত বৈষম্যমূলক বেতন বৃদ্ধির সুপারিশের প্রতিবাদ ও পেশকৃত তিন দফা দাবি বাস্তবায়ন’ শিরোনামে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।
সচিবালয়ের বাইরে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের ১৪টি সংগঠন নিয়ে বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী জাতীয় ঐক্য ফোরাম গঠিত হয়েছে।
স্থায়ী বেতন ও চাকরি কমিশনের ১০ ধাপ, জাতীয় বেতন স্কেলের প্রস্তাবনা চলমান বৈষ্যমের চেয়েও বৈষম্যমূলক বলে দাবি করেন সংগঠনের আহ্বায়ক মো. হানিফ ভূঁইয়া।
তিনি বলেন, ১৬টি গ্রেডে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ১:৫ অনুপাতে সর্বনিম্ন ৮২০০ ও সর্বোচ্চ ৮০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব বৈষম্য বৃদ্ধি পেয়েছে।
দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির বাজারে ১২ লাখ কর্মচারীর ৬ সদস্য বিশিষ্ট পরিবারের খরচ মেটাতে পারবে না।
হানিফ ভূঁইয়া অভিযোগ করে বলেন, ১৬টি গ্রেডের মধ্যে কর্মচারীদের সাতটি ( গ্রেড ১০-১৬, বেতন ৮২০০-১৩০০০) বেতন বৃদ্ধি পাবে মাত্র ৪৮০০ টাকা।
৯টি গ্রেডে (গ্রেড ১-৯, বেতন ১৭০০০-৮০০০০) কর্মকর্তাদের বেতন বৃদ্ধি পাবে ৬৩০০০ টাকা। যা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে বিরাট বেতন বৈষম্য।
বেতন বৈষম্য দূর করতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ জানিয়ে ভূঁইয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রী কর্মচারীবান্ধব। প্রধানমন্ত্রী সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর বৈষম্য দূর করে জুলাই থেকে প্রস্তাবিত বেতন স্কেল বাস্তবায়নের নির্দেশ দিলে অর্থমন্ত্রী হতাশ করেছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।
সচিবালয়ের ন্যায় সচিবালয়ের বাইরের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীদের পদবি প্রশাসনিক, হিসাবরক্ষণ, ব্যক্তিগত, সহকারী প্রশাসনিক, সহকারী হিসাবরক্ষণ ও পরিদর্শন কর্মকর্তা পদবি করার দাবি জানান।
প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের একই পদে অভিন্ন স্কেল ও নিয়োগবিধি প্রবর্তন করার দাবি জানান তিনি। একই সঙ্গে অবসর ভাতা, গ্রাচ্যুইটি, চিকিৎসা, যাতায়াত, টিফিন, ধোলাইসহ অন্যান্য ভাতা যুগোপযোগী করার দাবি জানান ভূঁইয়া।
প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তাদের ন্যায় তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের সিলেকশন গ্রেড দেওয়ার দাবি জানান হানিফ ভূঁইয়া।
তিনি বলেন, উন্নয়ন খাত, কার্যভিত্তিক, মাস্টার রোল কর্মচারীদের রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করতে হবে। যোগদানের তারিখ থেকে সব সুবিধা প্রদান করে টাইম স্কেল, সিলেকশন গ্রেড, পদোন্নতি, ব্লক পদ প্রত্যাহার ও আউটসোর্সিং প্রক্রিয়া বন্ধ করার জোর দাবি জানান তিনি।
সরকার উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের খুশি করতে নতুন বেতন স্কেলের প্রস্তাব করেছে বলে অভিযোগ করেন সংগঠনের সদস্য সচিব মো. মজিবর রহমান মোল্লা।
তিনি বলেন, আমরাও কর্মকর্তাদের সঙ্গে সমানতালে কাজ করি। কর্মকর্তাদের তুষ্ট করতে কর্মচারীদের বৈষম্যে রাখা হয়েছে।
সরকারি চাকরিতে থেকে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গণতান্ত্রিক কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মজিবর বলেন, আমরা সরকারের বিরুদ্ধে নয়, পেটের তাগিদে আন্দোলন করবো।
নিয়মতান্ত্রিক নিরপেক্ষ আর শৃঙ্খলার মধ্য থেকে আন্দোলন করা হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি। জাতীয় বেতন স্কেল চূড়ান্ত করার সময় কর্মচারীদের বেতন বৈষম্য দূর করা দাবি জানান তিনি।
৩০ জানুয়ারির মধ্যে দাবি আদায় না হলে ৩১ জানুয়ারি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কর্মচারী মহাসমাবেশ হবে বলে জানান আহ্বায়ক হানিফ ভূঁইয়া।
একই সঙ্গে ১১-১৩ জানুয়ারি এক ঘণ্টা কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ, ১৮-২০ জানুয়ারি দুই ঘণ্টা কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ, ২৪ জানুয়ারি মানববন্ধনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে ১৪টি সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০১৪/আপডেট: ১৩১৮ ঘণ্টা